সোনার স্বপ্ন ‘নকআউটের’ ভয় বক্সারদের

বক্সিং এক ঘুষির খেলা-বক্সার জুয়েল আহমেদের এই কথাতে যেন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) বাংলাদেশের লক্ষ্যটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন আছে ভারত থেকে সোনার পদক নিয়ে ফেরার কিন্তু বিদেশি কোচ না পাওয়া আর অভিজ্ঞতার কমতির কারণে স্বপ্ন ‘নকআউট’ হয়ে যাওয়ার ভয়টাও থাকছে প্রবলভাবে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2016, 03:42 PM
Updated : 27 Jan 2016, 04:02 PM

গতবারের তুলনায় এবার প্রস্তুতি ক্যাম্পের সুবিধা নিয়ে খুশি রহিম, জুয়েল, আল আমিনরা। কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে খুশি নন কেউই। গতবার থাইল্যান্ডের কোচ তা ওয়ান ছিলেন; এবার চলছে দেশি কোচ মহিউদ্দিন আহমেদের অধীনে অনুশীলন।

সাধ আর সামর্থ্যের ব্যবধান জেনেও স্বপ্ন দেখার সাহসটুকু না হারানোর কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রত্যয়ী কণ্ঠেই জানিয়েছেন বক্সাররা। গত এসএ গেমসের সোনা জেতা আব্দুর রহিম, জুয়েল দিলেন জানবাজি রেখে রিংয়ে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি। ঘরোয়া বক্সিংয়ে চমক দেখানো শামীমা আক্তার জানালেন, সোনার পদক জিতে নিজের প্রথম এসএ গেমস রাঙিয়ে রাখার স্বপ্নটা তার চোখেও উঁকি দিচ্ছে।

এসএ গেমসের বক্সিংয়ে বাংলাদেশ

চারটি সোনা, ১৭টি রূপা আর ৪৩টি ব্রোঞ্জ আছে বক্সিংয়ের শোকেসে। চারটি সোনার পদকই বাড়ির উঠানে জেতা। এসএ গেমসের বক্সিংয়ে থেকে বাংলাদেশকে প্রথম সোনার পদকটি এনে দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন; ১৯৮৫ সালের আসরে। দ্বিতীয়টি মোজাম্মেল হোসেনের হাত ধরে ১৯৯৩ সালে। শেষ দুটি ২০১০ সালে রহিম ও জুয়েলের হাত ধরে।

আল আমিন

শামীমা আক্তার

গতবার অবশ্য নাদিম হোসেন ও মশিউর রহমান একটি করে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। দুজনের মধ্যে ছন্দ হারিয়ে ছিটকে গেছেন নাদিম। পাসপোর্টের সমস্যায় ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে খেলা হচ্ছে না মশিউরের।

প্রস্তুতির কমতি, অভিজ্ঞতার ঘাটতি

থাইল্যান্ডের কোচকে রাখতে পারেনি বক্সিং ফেডারেশন। দুই বছর আগে ইউক্রেনের কোচ আলেক্সাজান্ডার গুরেনকো নিয়ে আসা হয়; কিন্তু অর্থাভাবে গত জুনে দেশের পথ ধরেন তিনি। এরপর থেকে ইউটিউবে বিদেশি কোচ-খেলোয়াড়দের ভিডিও দেখে আর দেশি কোচের অধীনে চলছে রহিম-জুয়েলদের এসএ গেমসের সোনা ধরে রাখার প্রস্তুতি!

এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট তো দূর অস্ত, নিজেদের যাচাই করে নেওয়ার উপলক্ষও কালেভদ্রে পান বক্সাররা। এক বছর বিরতি দিয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা হয়েছে গত ডিসেম্বরে। আর বক্সাররা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন দেড় বছর আগে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে।

অভিজ্ঞতার ঘাটতি নিয়ে আল আমিন বললেন, “(কমনওয়েলথ গেমসে) রিংয়ে নামার আগে মাইকে যখন বলল, নিউ জিল্যান্ডের বক্সার ৬৯টি আর আমি একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি, তখন যে কী লজ্জা লাগছিল।”

যাদের নিয়ে আশায় বুক বাঁধা

ছেলেদের সাতটি ও মেয়েদের তিনটি ওজন শ্রেণি মিলিয়ে বক্সিংয়ে এবার দশটি সোনার পদকের লড়াই হবে। গত আসরে ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জেতা রহিম এবার লড়বেন ৬৯ কেজি ওজন শ্রেণিতে। পদক ধরে রাখা নিয়ে জানতে চাইলেই প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতা টেনে বললেন, “আমি তো চাই গোল্ড ধরে রাখতে; কিন্তু আমরা যেভাবে অনুশীলন করি, তাতে করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফলের আশা করা কঠিন। তারপরও আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

আব্দুর রহিম

৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে গত আসরে সোনা জেতা জুয়েল প্রত্যাশার চাপ-তাপ জিততে প্রত্যয়ী, “গত গেমসে পদক জিতেছিলাম বলে একটু চাপও আছে। তবে বক্সিংয়ে যে কোনো কিছুই হতে পারে। আমি আশাবাদী।”

দলে থেকেও গত আসরে খেলতে না পারা আল আমিনও সুযোগ কাজে লাগানোর অপেক্ষায়। সময় ও পরিস্থিতি থেকে অনেক কিছু শেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের মধ্যে হতাশা আছে কিন্তু আত্মবিশ্বাস দিয়ে এ বাধাটুকু টপকে যেতে চাই।”

বাসনা খন্দকার, সাকি আক্তার আর শামীমা-এই তিন জনের মধ্যে সোনার পদক চাওয়াটা শামীমাকে ঘিরেই বেশি। ঘরোয়া হকিতে মেয়েদের সেরা শামীমাও প্রতিশ্রুতি দিলেন সোনা নিয়ে ফেরার।

“এসএ গেমসে মেয়েদের বক্সিংয়ে এই প্রথম আমরা খেলতে যাচ্ছি, আমার চাওয়া একটা গোল্ড।”