এর বিপরীতে বগুড়া-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর ভোটের মাঠে বেশ সক্রিয় আছেন তার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা কিছুটা চুপচাপ থেকে প্রচার কার্যক্রম চালালেও অতীতের ধারাবাহিকতায় ফল ঘরে তোলার বিষয়ে অনেকটা নিঃসন্দেহ তারা।
সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বলছেন, যত বাধা-বিপত্তি আসুক ধানের শীষের জয় কেউ ঠেকাতে পারবেন না এখানে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করে চলেছে পুলিশ। মাঠে নামলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবুও আমরাই এখানে বিজয়ী হবই। এবার ব্যবধান হয়ত একটু কম হবে এই যা।”
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনবার বিপুল ব্যবধানে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বগুড়ার পুত্রবধূ খালেদা জিয়া।
তার আগে ১৯৯১ সালে এখানকার সাংসদ হয়েছিলেন বিএনপি থেকে ধানের শীষের মজিবর রহমান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে এই আসনে বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল এখন বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে।
এবছরও এই আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। কিন্তু দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত এখান থেকে দলীয় মনোনয়ন পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটের প্রচারের মধ্যে বুধবার বিকেলে বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া হাজী দানেশ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বড় আকারের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন ধানের শীষের প্রার্থী ফখরুল।
ফখরুলের ওই জনসভা ঘিরে বগুড়া সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাজী দানেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে জড়ো হন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে নিজেদের প্রতীকের পাকা ধান আর প্লাস্টিকের ধান নিয়ে যান তারা।
বুধবারের জনসভায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম করেই ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম, আমি প্রার্থী নই, প্রার্থী হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর মাত্র তিনদিন পরে ৩০ ডিসেম্বর, সেদিন নির্ধারিত হবে, আপনাদের পুত্রবধূ আপনাদের মাঝে সসম্মানে ফিরে আসছেন কি-না।
“সেদিন নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাচ্ছে কি পাচ্ছে না; বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা ফিরে আসছে কি আসছে না।”
“এই নেত্রী সেই নেত্রী, যিনি আপনাদের প্রিয় ছেলেকে হারানোর পর থেকে কোনোদিন পরিবারের দিকে তাকাননি; জনগণকে-দেশের মানুষকে তার পরিবার মনে করেছেন। সেভাবে তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।”
ধানের শীষের প্রার্থী আরো বলেন, “বগুড়ার মানুষ ধানের শীষের মানুষ, এই মাটি ধানের শীষের মাটি। এখান থেকেই ধানের শীষের জন্ম হয়েছে।”
এ সময় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ৩০ তারিখে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নেন ফখরুল।
ভোটের প্রচারে ধানের শীষে ফখরুলের পোস্টার ও ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। মাইকিংয়ের পাশাপাশি নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো গণসংযোগ করছেন এলাকায়।
বিএনপি নেতারা নির্ভার থাকার কথা জানালেও ভোট নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগ রয়েছে কিছু ভোটার ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে।
সাতমাথা এলাকায় বগুড়া শহরের বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, “ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলেতো ভোট দিব। কিন্তু কেন্দ্রেই যদি যাইবার না দেয়, ভোট দেব কেবা করে? ভোট নিয়ে মানুষের সন্দেহইতো যাচ্ছে না।”
বগুড়ায় বিএনপির এই দুর্গে ভোটের প্রচারে পিছিয়ে নেয় ধানের শীষের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর। বগুড়া সদরের বিভিন্ন এলাকা লাঙ্গলের পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছেন তার সমর্থকরা।
নির্বাচনী প্রচারে মঙ্গলবার বিকালে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় লাঙ্গলের পক্ষে মটরসাইকেল শোভাযাত্রাও করতে দেখা গেছে।
বুধবার বিকালে লাহিড়িপাড়া, পীরগাছা, যশোপাড়া ও ভবানিগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন লাঙ্গলের প্রার্থী ওমর।
বিএনপির শক্ত অবস্থানের মধ্যেও নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জাতীয় পার্টির এই নেতা। গত পাঁচ বছরে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভোটাররা আস্থা রাখবে বলে বিশ্বাস করছেন তিনি।
২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে পরে এই আসনটি ছেড়ে দেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। উপ-নির্বাচনে জিতে সংসদে এই এলাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
তখন এলাকার মানুষের সঙ্গে জমির উদ্দিন সরকারের যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ করে লাঙ্গলের প্রার্থী ওমর বলেন, “ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এর আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি শুধু ভোট নিয়ে গেছেন, এরপর কখনো এলাকায় আসেন নাই। কোনো উন্নয়নও দেখেনি বগুড়ার মানুষ।”
এলাকার মানুষ তাকে সব সময় কাছে পাওয়ার পাশাপাশি এখানে বেশ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে দাবি করে ওমর বলেন, “প্রায় সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবন করা থেকে শুরু করে সব ধরনের উন্নয়ন আমি করেছি। ৬০ শতাংশ সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে।”
মহাজোটের সাংসদ ওমর উন্নয়নের বর্ণনা দিলেও বগুড়া সদর বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বলেছেন, “আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরে বগুড়ার মানুষ পুরোপুরি উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। সে কারণে এবার তারা পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিবে।”
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বলেন, “এখানে উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে, কিন্তু বিএনপি মিথ্যা কথা বলছে। কারণ তাদের সময় তো উন্নয়ন হয়নি। ভোটারদের বিভ্রান্ত করে ভোট নিতে চায় তারা।”
বিএনপি-জাতীয় পার্টির এই মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে কাস্তে প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন সিপিবির আমিনুল ফরিদ। এলাকায় ঘুরে তার অনেক পোস্টারের পাশাপাশি মাইকিং দেখা গেছে।
ভোটের মাঠ সম্পর্কে ফরিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”জোট-মহাজোটের দ্বন্দ্বের মধ্যে বিকল্প পথ দেখাতে আমরা নির্বাচন করছি। শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের জন্য আমাদের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের অংশ হিসাবে বগুড়া সদরবাসীর সমর্থন চাচ্ছি।”