চট্টগ্রাম জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত উপজেলা বাঁশখালী। এর ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর সদর নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনটি।
এবারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে প্রার্থী থাকলেও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা ভোটের মাঠ ছাড়েননি।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ধানের শীষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে আছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সিটি মেয়র ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র হিসেবে আপেল প্রতীকে আছেন জামায়াত নেতা ও বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম।
মোস্তাফিজুর রহমান নিজেকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মাহমুদুল পারিবারিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক কারণে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তিনিও নিজেকে মহাজোটের বলে পরিচয় দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বিএনপির জাফরুলের নিজস্ব ‘ভোট ব্যাংক’ রয়েছে এলাকায়।
স্থানীয় এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপকূলবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের ভোটার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর দল ছাপিয়ে ব্যক্তি পরিচয় ও পারিবারিক ঐতিহ্য অনেক সময় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে।”
এ কারণে বাঁশখালীর আসনে নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের বাইরে জমজমাট চতুর্মুখী লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে বলে মন্তব্য করেন ওই সাংবাদিক।
আরকে সাংবাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতপ্রার্থী জহিরুল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমিরও। ফলে তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের প্রার্থী মাহমুদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাঁশখালী কখনোই আওয়ামী লীগের আসন নয়। ১৯৭০ সালেও এখানে আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি। ২০০৮ সালেও পারেনি। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া উপজেলা নির্বাচনে তারা তৃতীয় হয়েছে।
“এখানকার লোকজন প্রতীক নয় ব্যক্তিকেই গুরুত্ব দিয়ে ভোট দেয়। নৌকার প্রার্থী এখানে ফাইটে আসতে পারবে না,” বলেন তিনি।
তিনিও স্বীকার করেছেন এ আসনে লড়াই মূলত চতুর্মুখী হবে। জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে ‘বেরিয়ে আসতে’ পারবেন বলে আশাবাদী এই জামায়াত নেতা।
এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ ন্যাপের (কুঁড়েঘর) আশীষ কুমার শীল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) এইচ এম ফরিদ আহম্মদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) মোহা: মনিরুল ইসলাম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) মোহাম্মদ মহিউল আলম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (বেঞ্চ) বজল আহমদ।
এই আসনের মোট ভোটার তিন লাখ তিন হাজার ১২৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৭ জন এবং নারী এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৮৬ জন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১১০টি ভোট কেন্দ্রের ৫৯০টি ভোট কক্ষে ভোট দেবেন এখানকার ভোটাররা।
এই আসনে পৌর সদরে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৭১৯ জন ভোটার। ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে বাহারছড়ায় সবচেয়ে বেশি ২৫ হাজার ৩২১ জন ভোটার। এছাড়া সরল ইউনিয়নে ২৫ হাজার ১৭৯ জন, চাম্বল ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৬৭০ জন এবং কালীপুর ইউনিয়নে ২২ হাজার ৮০৯ জন ভোটার।