বাবাকে রেখে স্বামীর পক্ষে প্রচারে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে মহাজোট নিয়ে জামাই-শ্বশুরের ‘টানাটানির’ মধ্যে বাবাকে সমর্থন না করে স্বামীর পক্ষে ভোট চাইতে মাঠে নেমেছেন রওনক জাহান।

তাবারুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2018, 11:36 AM
Updated : 24 Dec 2018, 11:36 AM

রোববার বিকালে সরাইল উপজেলা হাসপাতালের সামনে থেকে এ প্রচার শুরু করেন রওনক। এ সময় সঙ্গে তার এক ভাসুরসহ শ্বশুর বাড়ির একাধিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি স্বামী রেজাউল হক ভূঁইয়ার পক্ষে ভোট চান।

এ আসনে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন রেজাউল। অন্যদিকে এরশাদের ‘চূড়ান্ত মনোনয়ন’ পাওয়ার দাবি করে সিংহ প্রতীক নিয়ে ভোট চাইছেন তার শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধা।

রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করে কিছু লোকজন নিয়ে রেজাউলের স্ত্রী রওনক জাহান একটি প্রাইভেটকার থেকে উপজেলা হাসপাতালের সামনে নামেন। এরপর তিনি লাঙ্গলের কিছু লিফলেট হাতে নিয়ে প্রচার শুরু করেন। সেখানে কয়েকটি দোকানপাট ঘুরে লিফলেট বিতরণ করে স্বামীর পক্ষে ভোট চান তিনি। এরপর তিনি সরাইল বাজারের ভেতর প্রচারণায় যান।

যে স্থান থেকে রওনক জাহান প্রচারণা শুরু করেন সেখান থেকে এক কিলো মিটারের মধ্যে তার বাবার বাড়ি। আর তার স্বামীর বাড়ি জেলা শহরে।

রওনক জাহান স্বামীর পক্ষে প্রচার চালানোর সময় তার সঙ্গে কয়েকজন কিশোরকেও দেখা যায়। এ সময় কিশোররা ‘লাঙ্গল-লাঙ্গল’ বলে স্লোগানও দিচ্ছিল।

এই কিশোররা ভোটারদের কাছে রওনককে জিয়াউল হক মৃধার মেয়ে বলে পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে সঙ্গে থাকার অন্যরা এ পরিচয় না দিয়ে স্বামীর পরিচয় দেওয়ার দিতে বলেন।

বাবার প্রচারণা না করে স্বামীর প্রচারণা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রওনক কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তবে তার সঙ্গে থাকা রেজাউলের বড় ভাই জেনহারুল ইসলাম লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিটার্নিং অফিস থেকে বলা হয়েছে মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম। আর সিংহ মার্কার প্রার্থীকে তার সকল পোস্টার-ব্যানার সরিয়ে নির্দেশ দিয়েছে রিটার্নিং অফিস। রিটার্নিং অফিস থেকে হিংস মার্কার পোস্টারে এরশাদ সাহেব বা শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে।”

সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে জামাই-শ্বশুরের এই টানাটানিতে বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট শরিক অন্যান্য দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এরমধ্যে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন। মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে জামাই-শ্বশুরের ‘দ্বন্দ্বে’ আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার দলে ভিড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধী মহাজোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া। এই আসন থেকে দুইবার সাংসদ নির্বাচিত সাত্তার ভূইয়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন।

আগে থেকে এলাকায় তার প্রভাব থাকায় মহাজোটের প্রার্থী জটে ভোটে তারই লাভ হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছেন সরাইল-আশুগঞ্জে। তিন লাখ ৩৫ হাজার ৪০২ ভোটারের এ আসনে লাঙ্গল ও ধানের শীষসহ ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জিয়াউল হক মৃধার সিংহ এবং মঈন উদ্দিনের কলারছড়া ছাড়াও অন্য প্রার্থীরা হলেন- জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল (গোলপ ফুল), জাতীয় পার্টি-জেপির মু. জামিলুল হক বকুল (বাইসাইকেল), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মো. জুনায়েদ আল হাবীব (খেজুর গাছ), সিপিবির মো. ঈসা খান (কাস্তে), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জাকির হোসেন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. মহিউদ্দিন মোল্লা (মোমবাতি), গণফোরামের শাহ মফিজ (উদয়মান সূর্য) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোখলেছুর রহমান (মটরগাড়ি) ও স্বতন্ত্র মো. গিয়াস উদ্দিন (ডাব)।