নির্বাচন হবে ৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার। বিজয়ী প্রার্থী নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে হোয়াইট হাউজে চার বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।
Published : 05 Nov 2024, 11:29 AM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। গোটা বিশ্বের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প? বিশ্ববাসী এখন সে প্রশ্নেরই উত্তরের অপেক্ষায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কবে?
নির্বাচন হবে আগামী মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪। বিজয়ী প্রার্থী নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে হোয়াইট হাউজে চার বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বকাল শুরু হবে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে।
প্রেসিডেন্টের কিছু আইন পাস করার নিজস্ব ক্ষমতা থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে আইন পাস করার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিশ্বমঞ্চে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব ও পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার যথেষ্ট স্বাধীনতা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
কারা প্রার্থী এবং কীভাবে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়?
প্রার্থীরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরুর অন্তত এক বছরেরও বেশি সময় আগে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দেয়।
প্রধান দুই দল একাধিক রাজ্যে প্রাইমারি ও ককাস ভোটের মাধ্যমে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে মনোনীত করে। সাধারণ নির্বাচনে দলের নেতৃত্বে কাকে দেওয়া হবে তা এ ভোটগুলোতেই বাছাই হয়ে যায়। ভোটে যিনি জয়ী হন, তাকেই রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে (আরএনসি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
একটা রাজ্য তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রাইমারি ও ককাস- এ দুই ভিন্ন উপায়েই বেছে নিতে পারে। কিছু রাজ্যে প্রাইমারি আর কিছু রাজ্যে ককাস হয়। প্রাইমারিতে গোপন ব্যালটে দলের ভোট অনুষ্ঠান হয়। আর ককাসে সব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা একত্রিত হয়ে হাত তুলে ভোট দিয়ে প্রার্থী বাছাই করে।
ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই রিপাবলিকানদের শীর্ষ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে তিনি ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। রিপাবলিকান পার্টিতে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে তার দলের সমর্থন পেয়েছেন।
উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে একটি দলীয় সম্মেলনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী হন। ট্রাম্প তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসেবে ওহাইওর সিনেটর জেডি ভ্যানসকে বেছে নিয়েছেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন৷ সেসময় ডেমোক্র্যাট ডেলিগেটরা যারা আগে বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন, তারা ন্যাশনাল কনভেনশনের প্রার্থীদের যে কাউকে বেছে নেয়ার সুযোগ পান৷
কেননা, প্রাইমারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে প্রার্থীকে তারা বেছে নিয়েছিলেন তিনি আর নির্বাচনে লড়ছেন না৷ সেক্ষেত্রে বেশিরভাগই হ্যারিসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে হ্যারিসই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। কিন্তু আগস্টের শেষের দিকে তিনি প্রচার স্থগিত করে ট্রাম্পকে সমর্থন দেন।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আসলে কী?
ডেমোক্র্যাটরা হ'ল উদারপন্থি রাজনৈতিক দল, যাদের এজেন্ডা মূলত নাগরিক অধিকার, একটি বিস্তৃত সামাজিক সুরক্ষা জাল এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল। তারা জিওপি বা গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি নামেও পরিচিত। দলটি ট্যাক্স কমানো এবং বন্দুকের অধিকারে পক্ষে। আর অভিবাসন ও গর্ভপাতের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কিভাবে হয়?
নির্বাচনে যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই যে জয়ী হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর কারণ হল ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।
তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে একেকটি রাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই রাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন।
ইলেকটোরাল কলেজে ৫০টি রাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষ মিলিয়ে একটি রাজ্যের যত প্রতিনিধি আছে, সেটিই হল রাজ্যটির ইলেকটরদের সংখ্যা।
ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা বাদে বাকি সব রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০ বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। আর সেই প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়লেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারা ভোট দিতে পারেন?
১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য।
নর্থ ডাকোটা ছাড়া প্রতিটি রাজ্যে ভোট দেওয়ার আগে ভোটারদের নাম নিবন্ধন করতে হয়। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা রয়েছে।
বিদেশে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকরা ফেডারেল পোস্ট কার্ড অ্যাপ্লিকেশন (এফসিপিএ) পূরণ করে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারেন এবং অনুপস্থিত পোস্টাল ব্যালটের অনুরোধ করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ দোদ্যুল্যমান রাজ্য জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনাসহ কয়েকটি রাজ্যে এরই মধ্যে আগাম ভোট গ্রহণ হয়ে গেছ।
নভেম্বরে আর কারা নির্বাচিত হচ্ছেন?
সব মনোযোগ থাকবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হবেন সেদিকে। কিন্তু ভোটাররা কংগ্রেসের নতুন সদস্যদেরও বেছে নেবেন।
কংগ্রেস প্রতিনিধি পরিষদ (হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস) নিয়ে গঠিত। সেখানকার ৪৩৫ টি আসন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং সিনেটে ৩৪ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
রিপাবলিকানরা বর্তমানে হাউজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। আর ডেমোক্র্যাটরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। যেখানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষেত্রে ভোটাভুটি হয়।
কংগ্রেসের হাউজ এবং সিনেট এই দুই কক্ষ আইন পাস করে। একইসঙ্গে হোয়াইট হাউজের কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধাও হয়ে দাঁড়াতে পারে এই দুই কক্ষ, যদি হাউজ বা সিনেটের নিয়ন্ত্রণে থাকা দলটি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনও বিষয়ে একমত না হয়।
কবে জানা যাবে নির্বাচনে কে জিতেছে?
সাধারণত নির্বাচনের রাতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, তবে ২০২০ সালে সব ভোট গণনা করতে কয়েক দিন সময় লেগেছিল।
প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলে নির্বাচনের পরের সময়কালকে বলা হয় ট্রানজিশন। এই সময়টিতে নতুন প্রশাসন মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী নিয়োগ এবং নতুন মেয়াদের জন্য পরিকল্পনা করতে পারে।
জানুয়ারিতে একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের সিঁড়িতে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।