ভরা মৌসুমেও চালের দরে ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে ধান-চালের মোকাম খ্যাত নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্সের অভিযানে নামার খবর এসেছে।
Published : 03 Jan 2025, 01:35 AM
হাট-বাজারে নতুন আমন ধানের কমতি নেই; খুচরা কিংবা পাইকারিতেও চাল সরবরাহে ঘাটতির কথা বলছেন না কেউ, তবুও প্রধান এ খাদ্যপণ্যের দর কেন বাড়ছে সেই উত্তর মিলছে না।
নতুন ধানের চালে বাজার ভরপুর হওয়ার পাশাপাশি আমদানিও হচ্ছে নিয়মিত। আগের সপ্তাহেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার টন চাল এসেছে। এ বন্দরের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায়ই চাল আসছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দুই বছরের বেশি সময় পর মিয়ানমার থেকে একটি বড় চালান এসেছে। চাল আমদানিতে ৬২ শতাংশ থেকে শুল্ক তুলে নিয়ে নামমাত্র ২ শতাংশে নামিয়েছে সরকার।
তবুও চাল কিনতে গিয়ে এর সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বাজারে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা। বলছেন, আমনের ভরা মৌসুমে দাম যখন কমে যাওয়ার কথা সেখানে বাড়ছে। কবে চালের বাজারের উত্তাপ কমবে সেই প্রশ্নের মুখে নিয়মিত পড়তে হচ্ছে দোকানিদের। সরু চালের পিছুপিছু মোটা চালের দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় কষ্টে থাকার কথা বলছেন সীমিত আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ী ও মিলাররা সরকারের মজুত কমে যাওয়া, করপোরেট ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাপকহারে ধান সংগ্রহ এবং সাম্প্রতিক বন্যায় আমনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে সরু চালের দর বাড়তে থাকার কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন। ধানের দাম বেড়ে যাওয়াও আরেকটি কারণ বলে দাবি তাদের।
মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমের শেষ দিকের চেয়েও এখন নতুন ধানের দর বেশি দিতে হচ্ছে। বতর্মানে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় আমন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ এক হাজার ৩৩০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। এর বিপরীতে সরকার নির্ধারিত দর হচ্ছে এক হাজার ৩২০ টাকা।
ভরা মৌসুমেও চালের দরে ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে চালের মোকাম খ্যাত নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্সের অভিযানে নামার খবর এসেছে। রোপা আমনের এ ভরা মৌসুমে দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী জেলায় গত কয়েক দিনে সরু ও মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে; যার পেছনে কোনো ‘চক্র থাকার’ দাবি করে অভিযানে নামে টাস্কফোর্স।
সেখানকার পাইকারি বাজারে সরু ও মোটা চালের প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
রাজধানীর বাজারগুলোতেও মোটা চালের দাম বাড়তে দেখা গেছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিনিকেট, নাজিরশাল, কাটারিভোগের মত সরু বা চিকন চালের দর গত এক মাসে সরু চালের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। হাতবদল হওয়ার পর খচুরায় তা মান ও ব্র্যান্ড ভেদে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকার মত বেড়েছে। নতুন ধানের চাল বাজারে এলেও তা কমার বদলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কথাই বলছেন বিক্রেতারা।
বেশ কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সরবরাহ ঠিক থাকার পরও বাড়তি দাম দেখে অনেকে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই চাল কিনছেন মিলারদের কাছ থেকে। সরকারি-বেসরকারি আমদানির চাল আসার খবরে দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাড়তি দামের চাল তুলছেন না তারা।
এ কারণে ভরা মৌসুমে আমন ধানের চালে বাজার ছেয়ে না যাওয়ায় দাম পড়ছে না। এছাড়া করপোরেট কোম্পানিগুলো সেভাবে চাল না ছাড়ায় এবং বড় মিলারদের কাছ থেকে পাইকাররা চাল না তোলার প্রভাবও পড়ছে বাজারে, যোগ করেন তারা।
বাবু বাজার মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাজিরশালের দর ছিল কেজিপ্রতি ৭৫-৭৬ টাকা। আগের সপ্তাহের বৃহস্পতিবারও তা ছিল ৭০-৭২ টাকা। এর আগের সপ্তাহে তা ছিল ৬৬-৬৮ টাকা। একইভাবে ৫ টাকার মত বেড়েছে ব্রি-২৭, ২৮, ২৯, পাইজাম জিরাশাইল ও গুটি স্বর্ণা চালের দর।
যাত্রাবাড়ীর যমুনা ট্রেডার্সের বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা সরু চাল বিক্রি হয় তিন হাজার ৮০০ টাকায়। এর চার দিন আগেও তা ৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৭৫০ থেকে তিন হাজার ৭৪০ টাকা দরে। এক মাস আগের দর ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার দরের প্রতিবেদনেও এক সপ্তাহের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ দরের চেয়ে প্রতি কেজিতে অন্তত দুই টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে এলাকার দোকানগুলোতে।
সরকারের মজুত কত?
চালের সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারি পর্যয়ে সব সময় ১১ লাখ টান মজুত রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদামে মজুত আছে চাল সাত লাখ ৪৪ হাজার টন, গম চার লাখ ৪৮ হাজার টন ও ধান চার হাজার টনের বেশি মজুত রয়েছে।
সরকারি মজুত বাড়াতে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ টন জি-টু-জি পদ্ধতিতে, যার প্রথম চালানে ৫৪ হাজার ৬৯০ টন চট্টগ্রাম বন্দরে চলে এসেছে। এছাড়া দুই লাখ টন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে।
দর স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক ২ শতাংশে নামিয়েছে। এনবিআরের হিসাবে এতে আমদানিতে প্রতি কেজিতে ২৪ টাকা দাম কমে যাওয়ার কথা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ কোটি টাকার চাল আমদানি করা হয়। এরপর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত চাল আসছে।
বন্যায় ফসলের ক্ষতি ‘যৎসামান্য’
দক্ষিণ-পূরর্বাঞ্চলে বন্যায় ফসল নষ্ট হলেও চালের দাম এ কারণে বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখছেন না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক সরকার শফি উদ্দিন আহমেদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘ধানের উৎপাদন যথেষ্ট হয়েছে। সংকট আছে তা বলার সুযোগ নেই। বন্যায় ক্ষতি হওয়া ধানের পরিমাণ খুবই কম, এসব ছোটো ছোটো জেলা। তার চেয়ে অনেক উপজেলা আছে যেখানে এসব জেলায় উৎপাদনের চেয়ে বেশি ধান হয়।’’
তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপর বেশির ভাগ কৃষক পুনরায় জমি চাষ করেছেন। সেই ফসল মৌসুমের শেষের দিকে আসবে। এ কারণে বন্যায় ধান উৎপাদনে এর প্রভাব ‘যৎসামান্য’ বলেই মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য এসেছে।
আমন সংগ্রহ বাড়ছে
ঘাটতি যাতে না হয়, সেজন্য তুলনামূলক মজুত বাড়াতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে এবার লক্ষ্যমাত্রা আগের থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টন আমন ধান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দিনাজপুর জেলা থেকে ১৭ হাজার ৯৯১ টন, রংপুর জেলা থেকে ১০ হাজার ৯৬৮ টন, ও নওগাঁ থেকে ১৩ হাজার ৮০৪ টন, বগুড়া জেলা থেকে ১২ হাজার ৬১০ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এখন পর্যন্ত দিনাজপুর থেকে ৪৩ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা সংগ্রহ কার্যক্রমে জোর দিয়েছি, আশা করছি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহ শতভাগ হয়ে যাবে।’’
তবে সরকারি দরের চেয়ে বাজারে ধানের দর বেশি হওয়ায় যে ধান পাওয়া যাচ্ছে তাতে আদ্রতা বেশি থাকায় সংগ্রহ কার্যক্রমে খুব একটা গতি উঠেনি সরকারি পর্যায়ে।
তিনি বলেন, ‘‘বাজারে ধান আছে অনেক। সরকারি দর তো এক মণ ধানে এক হাজার ৩২০ টাকা। এই দরে যে ধান পাওয়া যাচ্ছে তাতে ময়েশ্চার বেশি, এত বেশি ভেজা ধান সংগ্রহ করলে নষ্ট হয়ে যাবে। ধান তো শুকিয়ে, মচমচা করে রাখতে হয়। কৃষক এক হাজার ৩৩০ থেকে এক হাজার ৩৪০ টাকায় ধান বিক্রি করতে পারছে। তাই ধান সংগ্রহ এখন কম হচ্ছে।’’
অটো রাইস মিলের সবচেয়ে বেশি সংখ্যা রয়েছে নওগাঁ জেলা। অভিযোগ উঠেছে, এবার সাধারণ মিল, অটো রাইস মিল ও বন্ধ হওয়া বা লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া চাতাল ও মিলে ধান-চালের মজুত বেড়েছে এ জেলায়। তাই সরকারি পর্যায়ে ধান ও চাল সংগ্রহে অনেকটা ধীর গতিতে চলছে।
জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ফরহাদ খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩০ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা গেছে। হাট, বাজারে ও কৃষকের কাছে ধান আছে। আমরা চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়াচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী চাল এখনো খাদ্য গুদামে আসেনি।’’
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কোথায় কোথায় বেশি মজুত হচ্ছে। এমন কিছু মিল ও চাতালের তথ্য পেয়েছি যাদের লাইসেন্স নেই। কারো কারো লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দু’একদিনের মধ্যে এসব জায়গায় অভিযান চালাব। আশা করছি, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে অভিযানের পর।’’
বাজারের দর বেশি হওয়ায় বেসরকারি ব্যবসায়ীরাদের কাছে বেশি ধান যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেক আড়তে ধান রয়েছে। সরকারি দরের চেয়ে বেশি দামে তারা মজুত করে রাখছে। এখন ধানে ময়েশ্চার বেশি, আরেকটু পর শুকনা ধান বেশি পাওয়া যাবে। তখন সংগ্রহ করা হবে ধান। আপাতত চালে মনোযোগ বেশি দেওয়া হচ্ছে।”
অবশ্য লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৭ শতাংশ আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে নওগাঁ জেলায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চার হাজার ৪২৩ টন ধান, এক লাখ ৩৬ হাজার ৪০৯ টন সেদ্ধ চাল, ২০ হাজার ১০৬ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছে। সব মিলিয়ে মোট এক লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ টন খাদ্য শস্য সংগ্রহ করেছে।
সরকারের নজর মোটা চালে
দর স্থিতিশীল রাখা ও বিশেষ প্রয়োজনে ত্রাণসহ সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে বাজারে স্বল্প মূল্যে ও বিনে মূল্যে চাল বিতরণ করতে সরকার মোটা চাল সংগ্রহ করে মজুত করে রাখে খাদ্য গুদামে।
চাল ও ধান সংগ্রহে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয় তা মূলত মোটা চালের জন্য। সরকার মোটা চালের জন্য যে ধান ও চাল সংগ্রহ করে থাকে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে চালের দর ওঠানামা করে। সরকারি গুদামে চলের মজুত কমে গেলে বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার নজির আছে অতীতে।
আমদানির চালও আসছে
বাজার স্বাভাবিক রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে মোট এক লাখ ২০ হাজার টন সেদ্ধ ও ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
১০ হাজার টন আমদানির অনুমোদন পাওয়া মেসার্স মাহবুবুল আলম ফুড প্রডাক্টস চাল এনেছে এক হাজার টন। ভারত থেকে আরও দুইশ টন পথে থাকার তথ্য দিয়ে এর কর্ণধার মাহবুব আলম বলেন, ডলার দিতে পারছে না ব্যাংক। যে কারণে আমদানিতে ধীরগতি।
যা বলছেন ব্যবসায়ীরা
যাত্রাবাড়ী চালের আড়তের যমুনা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন শাহ বলেন, ‘‘আমনের এ সময়ে এক বস্তা (৫০ কেজি) আঠাইশ চালের দাম আড়াই হাজার টাকা থাকার কথা হিসাব মত। মাঝখানে দাম কমছিল, দুই হাজার ৬০০ টাকায়ও বিক্রি করছি। পরে ২৭০০ হল, এখন ২৮৫০ টাকায় বিক্রি করতেছি।’’
একই আড়তের সরদার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বলেন, ‘‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাপ্লায়াররা বলছেন, এই দামে চাল নাই। বাজারে ধান কিনতে গেলে করপোরেটরা সব কিনে নেয়, ভাগে পাওয়া যায় না। তারা বেশি বেশি কিনে, হাটে আসারা একটু বেশি দামে তাদেরকেই একসঙ্গে সব দিয়ে দেয়।
‘‘কেন দাম বাড়তাছে তা আল্লাই ভালো জানেন। করপোরেট ও মিলাররা দাম বাড়াই দিছে। এখন বেশি দামে কিনব কি না, তা নিয়ে ভয়ে আছি। বেশি দামে কেনার পর হুনলাম চাল আমদানি বাড়ছে, একটু কমলেই এক লাখ টাকা লস হবে এক গাড়ি মালে (চাল)। তাই চিকন চাল উঠাইতেছি না গত এক সপ্তাহ ধরে।’’
বাড়তি দামের কারণে বিক্রি কমানোর কথা বলেছেন এ আড়তের সাজ্জাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম। বলেন, ‘‘চালের অভাব নেই। চাল আছে দাম বেশি। এখন কম কিনছি, কারণ ঢাকায় চাল বেশি যায় মাসের শুরুতে। এখণ বেশি দামে কিনলে লস হইতে পারে।’’
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আলম এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কর্মী মাসুদ হোসেন বলেন, ‘‘কুলি আর ভ্যান খরচ বাদ দিলে এক কেজিতে ৩ টাকা যদি লাভ না করি তাহলে কেমনে দোকান চলবে।’’
রাজধানীর চালের আরেক বড় পাইকারি আড়ত বাবুবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চালে প্রতি কেজিতে চার টাকার মত দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন বাবুবাজারের ব্যবসায়ী কাউসার আজম।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাউসার আজম বলেন, ‘‘মিলগুলো দিনের দাম দিনে বলে দিচ্ছে। তাদের (মিল) এস আর (বিক্রয় কর্মী) অর্ডার নেওয়ার পরপরই টাকা জমা দিলে রেট ঠিক রাখে। আমরা তো স্টক করি না। মিলার দাম বাড়ালে আমাদের করার কিছুই নাই। কাস্টমার তো দোকান দোকান ঘুরে দামাদামি করে কিনে। একজন বেশি লাভ করতে গেলেই ধরা খাবে।’’
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, বাজারে ধানের দাম গতবারের চেয়ে বেশি থাকলেও সরবরাহ বেশি রয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু বড় করপোরেটগুলো সংগ্রহ বাড়িয়ে দেওয়ায় সাধারণ মিলারদের ধান সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, এখন দর বাড়ার কারণ থাকার কথা নয়। তবে চালের বাজার খুব একটা সরকারি তদারকিতে থাকে না। এ সুযোগ নিচেছ ব্যবসায়ীরা।
“এখন তো সড়কে ও বিভিন্ন জায়গায় আগের মত চাঁদাবাজরা নেই। তাহলে তো ভরা মৌসুমে দাম বাড়াটা কন্ট্রাডিক্টরি।’’
নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩-৫ টাকা, অভিযানে টাস্কফোর্স
আলু-পেঁয়াজে দু-চার টাকা বাঁচলেও চলে যাচ্ছে চাল-মুরগিতে
আলু-তেলে হা-হুতাশ, চালেও অস্বস্তি
ভারত থেকে চাল নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে জাহাজ
পণ্যমূল্য: বাজারে টাস্কফোর্সের কী প্রভাব?
শুধু ভারত নয়, অন্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করবে সরকার: খাদ্য উপদেষ্টা
লোকসানের আশঙ্কায় চাল আমদানিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের
সরকারের কেনা ভারতীয় চালের প্রথম চালান আসছে বৃহস্পতিবার
২% অগ্রিম আয়কর রেখে চাল আমদানিতে শুল্ক-কর প্রত্যাহার