নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা অন্য দলে যোগ দেবে, নাকি নিজেরা বিকল্প সংগঠন গড়ে তুলবে, এসব প্রশ্ন থাকলেও জবাব নেই আপাতত।
Published : 02 Aug 2024, 01:39 AM
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় সহযোগী হিসেবে বিচারের দাবি পূরণ না হলেও কোটা আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির পর সরকারি আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ হল। তাতে সব প্রশ্নের উত্তর কি মিলল?
নিষিদ্ধ হলেও জামায়াতের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রয়ে গেছেন, তারা গোপন রাজনীতি শুরু করবে নাকি ভিন্ন দল করবে, নাকি বড় কোনো দলে যোগ দিয়ে সেই দলের শক্তি বৃদ্ধি করবে, এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরছে রাজনীতির আলোচনায়।
মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটি যুদ্ধের পরপর নিষিদ্ধ হয়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সামরিক আইন প্রশাসক হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হয়। তখন থেকেই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ছিল।
একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের বিচারের রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ আখ্যা দেওয়ার পর সাংগঠনিক ভূমিকার জন্যও দলটির বিচারের দাবি উঠে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদনও জমা পড়ে।
কিন্তু আইন সংশোধন না হওয়ায় সেই বিচার আর এগিয়ে নেওয়া যায়নি, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আইন সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেন। পরে চৌদ্দ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে।
আইনজীবী তুরিন আফরোজ মনে করেন, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ না করে অন্য পথে হাঁটলেই ভালো হত। কারণ, পরে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে সেই আদেশ প্রত্যাহার করার সুযোগ থাকে।
স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হলেও জামায়াতের তৎপরতা থেমে ছিল এমন না। দলটির নেতারা মসজিদভিত্তিক কর্মকাণ্ড চালানোর কথা পরে নানা সময় বলেছেন। আবার অন্য দলে যোগ দিয়ে তৎপরতা চালিয়েছেন বলেও তথ্য মিলেছে।
সাতক্ষীরা-৫ আসনে জামায়াতে সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের পর জাসদ করতেন বলে তথ্য বেরিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ মনে করেন, জামায়াত কর্মীদের বিএনপি বা অন্য দলে যোগ দেওয়ার যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি তারা অন্য নামেও রাজনীতি শুরু করতে পারে। এসব বিষয়েও নজর রাখতে হবে। তাই তিনি ‘সিকোয়েন্সিং ব্যানিং’ বা অনুক্রমিক নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দিয়েছেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। কেবল ১৯৯১ সালেই একবার তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তবে ভোট শেষে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য তার বইয়ে বিএনপির সঙ্গে সেবার আসন সমঝোতার তথ্য দিয়েছিলেন।
জামায়াতের এই ভোট এককভাবে খুব বেশি আসন জেতার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ হয়নি। তবে তারা সমঝোতা বা জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়লে বড় দলের জন্য তা সুবিধা করে দেয়।
২০০১ সালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান কম থাকলেও আওয়ামী লীগের ৬২টির বিপরীতে বিএনপি ১৯৩টি আসন পায়। এর কারণ জামায়াতের ভোট বিএনপির বাক্সে পড়া। জামায়াতও সেই নির্বাচনে আসন পায় ১৭টি।
১৯৯৬ সালে কোনো সমঝোতা বা জোট ছাড়া ভোটে নেমে জামায়াত আসন পায় তিনটি।
২০০১ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে জেতার পর একাত্তরের খুনে বাহিনী আলবদরের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাদিহকে মন্ত্রিত্ব দেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
দুইবার নিষিদ্ধ যেভাবে
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করা জামায়াতের পক্ষে তাই রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো সম্ভব হয়নি।
সে সময় কেবল জামায়াত নয়, নিষিদ্ধ হয় ধর্মভিত্তিক সবগুলো দলই। এই দলগুলোর প্রায় সবগুলোই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিল।
বাংলাদেশে জামায়াতের গুরু গোলাম আযমের লেখা ‘জীবনে যা দেখলাম’ বইয়ের লেখা হয়েছে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলতেন, তাহলে পাকিস্তান আর টিকবে না।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পর জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণে ওই অভিযানকে তিনি স্বাগত জানান। পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বানও রাখেন গোলাম আযম।
এরপর ইসলামপন্থি অন্যান্য দলের নেতাদের নিয়ে গোলাম আযম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন জানান। রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে জামায়াত রাখে অগ্রণী ভূমিকা। জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। আলবদরে যোগ দেয় সে সময় দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আগে গোলাম আযম ২২ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান চলে যান, যাওয়ার আগে রাজাকার বাহিনীকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান।
স্বাধীনতার পর গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর সরকার।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি এএস এম সায়েম একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
জামায়াত সরাসরি আত্মপ্রকাশ না করে কৌশলী ভূমিকা নেয়। ওই বছরের ২৪ অগাস্ট ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল মিলে গঠন হয় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ বা আইডিএল নামের একটি মোর্চা। সেখানে জামায়াতই ছিল প্রধান সংগঠন।
এরপর জামায়াতের নেতারা প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেন। তিন বছর পর ১৯৭৯ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে জাতীয় সম্মেলনে জামায়াতের নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদনের পর ২৭ মে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে দলের তৎপরতা শুরু হয়।
সে সময় কাউকে আমির না করে ভারপ্রাপ্ত আমির করা হয় আব্বাস আলী খানকে। সেই সম্মেলনে গোলাম আযমের একটি ভাষণ পড়ে শোনানো হয়।
১৯৭৮ সালে গোলাম আযম অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গোপনে বাংলাদেশে ফেরেন। তিন বছর পর তিনি প্রকাশ্যে আসেন। তখন থেকে গোলাম আযমের নির্দেশনাতেই চলত দল।
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে আমির ঘোষণা করে জামায়াত। পাকিস্তানি নাগরিককে রাজনৈতিক দলের প্রধান ঘোষণার পর তার বিচারের দাবিতে মাঠে নামের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। গঠন হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সে সময় গণআদালত বসিয়ে গোলাম আযমের বিচার চলে। প্রতীকী সেই বিচারের রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের সমতুল্য।
সেই জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং এই সমর্থনের শর্ত ছিল গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দেবে সরকার। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানসহ আপিল বিভাগের বেঞ্চ গোলাম আযমের পক্ষে রায় দেন। ১৬ মাস কারাগারে থেকে বের হন তিনি।
এবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। এ আইনের ১৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সরকার মূল দলের পাশাপাশি তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির এবং সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার।
ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।”
জামায়াত ক্ষুব্ধ, সরকার সতর্ক
২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করার পর থেকে দলটির নেতাকর্মীরা এক ধরনের গোপন তৎপরতায় রাজনীতি করে যাচ্ছেন।
সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ কথার পর দলটির পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সেই বিবৃতিতে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দাবি করেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘ভিন্নখাতে’ প্রবাহিত করতেই সরকর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
“বিশ্ব সম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।”
নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও জামায়াত গোপন দলের মত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে, শফিকুর রহমানের বিবৃতিতেও সেই ইংগিত মিলছে।
তিনি বলেন, “সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনো বন্ধ হবে না। আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্যবাদের ‘কোনো সম্পর্ক নেই’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ।”
১৯৯৯ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াতের জোট বন্ধু বিএনপির তরফেও সরকারের নিন্দামন্দ করা হয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াত নিষিদ্ধের পর বিবৃতিতে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়সঙ্গত ও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়াই কোনো রাজনৈতিক দলকে অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অন্যায় এবং সংবিধান সম্মত নয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবির) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও সতর্ক করে বলেছেন, “প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে এটি করা হলে (জামায়াতকে নিষিদ্ধ) অন্য কোনো সরকার আবার তফসিল সংশোধন করে তাদের ফিরিয়ে আনতে পারবে।”
জামায়াত নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জামায়াতও একেক সময় একেক দলের কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।”
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা ‘জরুরি’ হলেও সেটাই ‘যথেষ্ট নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এরা সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ লালন করে তা প্রচারও করছে। সেটা বন্ধ না করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ‘কে বেশি ইসলাম পছন্দ করে’, এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দেশকে একটি ভয়ংকর দিকে নিয়ে গেছে। এই লড়াইয়ে জনগণের শক্তি, বাম সংগঠন, প্রগতিশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।”
অন্যদিকে জামায়াত নিষিদ্ধের পর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে সরকার সতর্ক অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এরা তো জঙ্গিবাদি হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদেরকে মোকাবেলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সকলে মিলে করতে হবে।
“বাংলার মাটিতে জঙ্গিদের ঠাঁই হবে না। সেইভাবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমি দেশবাসীকে সজাগ থাকতে বলব, তাদের সহযোগিতা চাই।"
নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধের ‘সীমাবদ্ধতা’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগঠন নিষিদ্ধ করা মানে হচ্ছে-এই নামে সংগঠন কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। কোনোভাবে চালু রাখে থাহলে এর বিরুদ্ধে সরকার যে কোনো রকম পদক্ষেপ নিতে পারে।”
নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার ‘সীমাবদ্ধতা’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “পরবর্তী যে কোনো সময়ে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে এটা প্রত্যাহার করতে পারে, অতীতে কিন্তু হয়েছে। জামায়াতের ছাত্র সংঘকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা পরবর্তীতে আবার ফিরে আসে।
“নির্বাহী আদেশ স্থায়ী কোনো কোনো সিলগালা নয়। এখানে সুযোগটা থেকে যায়।”
তাহলে কী করার আছে? এই প্রশ্নে সিকোয়েন্সিয়াল ব্যানিং বা অনুক্রমিক নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ লোকগুলো (জামায়াত-শিবির) যদি নতুন একটি সংগঠন করে, সেটা কিন্তু আটকাতে পারছেন না আপনি। নতুন করে কাগজপত্র নিয়ে একই লোকজন অনেকটা সংগঠন দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে। জামায়াতে ইসলাম বাদ দিয়ে ‘ফ্যান্টাসি বাংলাদেশ’ নাম ধরল। এদেরকে আবার জঙ্গি প্রমাণ করতে হবে, নিষিদ্ধ করতে হবে।
“সিকোয়েন্সিয়াল ব্যানিংয়ে গেলে তাদের লোকজন নতুন নামে সংগঠনও করতে পারবেন না। তারা কী করছেন, সেটি দেখা হতে থাকবে।”
আবার নতুন সংগঠন না করে আরেকটা দলে বিলীন হয়ে যেতে পারে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
“তারা বিএনপি বা এবি পার্টিতে চলে গিয়ে বলল, ‘জামায়াতও নাই, আমরাও নাই’, এখন আমরা বিএনপির কর্মী। তাহলে একই সমস্যা হচ্ছে। এ লোকদের কোনো দলের সংগঠন করা থেকে বিরত করতে হবে।”
জামায়াত বিএনপিতে বিলীন হলে বিএনপি শক্তিশালী হবে মত দিয়ে তিনি বলেন, “সহিংসতার জন্য যে তহবিল করা হচ্ছে, তা তখন অন্য দলের কাছে পৌঁছাবে।”
এ জন্য আওয়ামী লীগের আত্মশুদ্ধিও শুরু করতে হবে বলে মত দেন তুরিন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের মধ্যে যে জামায়াত ঘোলাটে অবস্থায় রয়েছে, তা তো কেউ আমরা অস্বীকার করব না।… দলে কারা জামায়াতপন্থি রয়েছে তাদেরকেও বের করতে হবে। এটার জন্য জাতীয় ঐক্যেরও দরকার রয়েছে।”
দল নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের দর্শন প্রচার বন্ধ করার উদ্যোগ থাকতে হবে বলে মনে করেন তুরিন আফরোজ।
তিনি বলেন, “ভেবেছি সবাই যুদ্ধে আমরা ওদের পরাজিত করে ফেলেছি। কিন্তু আজ এত বছর পর আমাদের বাচ্চারা বলে, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার।’ তার মানে আমরা ডি-জামাতাইজেশন করতে পারিনি। আমাদের এ পলিসি কোথায়?”
জামায়াত নিষিদ্ধ হলে তারা গোপন তৎপরতায় চলে যাবে, এমন একটি ধারণাও করছেন তুরিন আফরোজ।
তিনি বলেন, “এটা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ নয়। আমরা বিজয় লাভ করছি, ওরা আত্মসমর্পণ করছে-তা নয়। এ যুদ্ধ আমাদের বহুদিন টানতে হবে।”
আইনি ফাঁকফোকর কি আছে?
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ১৯৭২ এর সংবিধানে আছে ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না। তাই আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
“আমরা তো আগেই চেয়েছি এদের নিষিদ্ধ করা হোক। তবে ইসলামী অন্য দলগুলো, যেমন হেফাজতে ইসলামী… কওমি মাদ্রাসা তো চালু আছে। এ ধরনের দলগুলোকে রেখে শুধু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে লাভ কী?”
সরকার পরিবর্তন হলে অনেক কিছু হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সময় গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাকে (গোলাম আযম) নাগরিকত্ব দেওয়া হল।”
ভবিষ্যতে জামায়াত আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবে কি না, এই প্রশ্নে আপিল বিভাগের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কেউ চাইলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। আর তাদের তো নির্বাচন করার নিবন্ধনই নেই। এখন থেকে কোনো দলীয় কার্যক্রম চালানোর অধিকারও হারাল।”
উপযুক্ত কাজ: আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক নেতা
আওয়ামী লীগ সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ আলী জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে জামায়াতের যে ভূমিকা ছিল, ৩০ লক্ষ শহীদ, তিন লক্ষ মা বোনের যে সম্ভ্রমহানি, সেটা জামায়াতের সহযোগিতায় হয়েছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। তারা এখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারছে না, বরং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অপপ্রচার করছে। নতুন প্রজন্মকে তারা ভুল বুঝিয়ে তারা সেই পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
“দলগতভাবে যদি জামায়াত না থাকে, তাহলে তারা রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম পাবে না। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে উপযুক্ত কাজটিই করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে তারা সংগঠিত হয়ে মানুষজনকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের পথে ধাবিত করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় বিএনপিপন্থি শিক্ষক
বিএনপি সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়াধীন ছিল। আওয়ামী লীগ বরং এটাকে নিয়ে রাজনীতি করে প্রলম্বিত করেছে। এখন দেশের একটা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার মনে করছে, এটা করলে তারা নিরাপদ হয়ে যাবে। এই কারণেই হয়ত এই সিদ্ধান্তটা নিচ্ছে।”
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্ত ‘বেশি প্রভাব ফেলবে না’ মন্তব করে তিনি বলেন, “যে লোকগুলো জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা তো বাংলাদেশেই থাকবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, তারা (জামায়াত) কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।”
তার মতে, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও জামায়াত চেষ্টা করবে কোনো না কোনোভাবে রাজনীতি করতে। সেটা সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটা জনগণ কীভাবে নেবে, সেটার উপর জামায়াতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটার প্রভাব তো থাকবেই। তবে সার্বিক রাজনীতিতে কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে বলে আমার মনে হয় না। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তো শুধু জামায়াত না, আরও দল রয়েছে। সব দল তো আর নিষিদ্ধ হচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকবে।
“রাষ্ট্র নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু জামায়াত কোর্টে গিয়ে বলতে পারে সরকারের এই আদেশ অবৈধ। এটা যদি শুধু নির্বাহী আদেশ হিসেবে থাকে, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা কাজে লাগবে না। অন্য সরকার এসে চাইলে এটা তুলে নিতে পারে।”
জামায়াতকে নিষিদ্ধের ফলে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বৈশ্বিক ‘সুনাম অর্জন করতে পারবে না’ বলেও মনে করেন অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলকে নিষিদ্ধ করা সবাই ভালোভাবেই নেবে। কিন্তু যে সময়টাতে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ বেশি সুবিধা নেবে। এই নিষেধাজ্ঞা আরও আগে বা পরে দিতে পারত। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগের যে ভাবমূর্তি, সেটা নষ্ট হবে।”
নিষিদ্ধ হলে জামায়াত গোপন রাজনীতিতে যেতে পারে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না জামায়াত এই কাজ করবে। কিছু লোক হয়ত যেতে পারে। অন্যরা অন্যভাবে, অন্য নামে রাজনীতি করবে। তাতে তো কোনো বাধা নেই “
জামায়াতের ভোটের হিসাব
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফল বিবেচনা করে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর ভোট পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যেই ছিল। আর জামায়াতের ভোট চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও ও কক্সবাজারের কিছু এলাকাতেই কেন্দ্রীভূত।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তারা কেবল সিরাজগঞ্জের একটি, পিরোজপুরের একটি ও কুমিল্লার একটি আসনে ভোট বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসার মত শক্তিশালী হয়ে উঠে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ৬ শতাংশ ভোট পাওয়া জামায়াত স্বাধীনতার ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আসন পায় ১০টি।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতায় ভোটের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়ে, সেটি বোঝা গেছে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে।
ওই নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ের তথ্য বলছে, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। আর বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি।
সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পায় ১৪০টি, জামায়াত পায় ১৮টি। আর আওয়ামী লীগ পায় ৮৮ আসন।
ওই নির্বাচনে দুই প্রধান দলের ভোট ছিল একেবারেই কাছাকাছি। ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি পায় মোট ভোটের ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ পায় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ।
জামায়াতের বাক্সে পড়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বাভাবিক হারের দ্বিগুণের বেশি ভোট পাওয়াতেই এটা স্পষ্ট হয়, সমঝোতার সুফল তারা পেয়েছে।
১৯৯৬ সালে যে দুইবার ভোট হয়, তার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মত বর্জন করে জামায়াতও। ওই বছরের ১২ জুন সব দল একক শক্তিতে যে নির্বাচন করে, তাতে জামায়াতের ভোট কমে হয় ৮.৬১ শতাংশ। আসন পায় তিনটি।
ওই বছর মোট ভোটের ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পড়ে আওয়ামী লীগের বাক্সে। আসন পায় ১৪৬টি। বিএনপি ১১৬টি আসন পায়। মোট ভোটের ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ পায় দলটি।
অর্থাৎ এই নির্বাচনেও যদি বিএনপি ও জামায়াতের সমঝোতা থাকত, তাহলে তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ভোট ও আসন পেতে পারত।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে জোট বাঁধে বিএনপি ও জামায়াত।
সেই নির্বাচনে বিএনপি একাই পায় ১৯৩টি, জামায়াত পায় ১৭টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিজেপি চারটি, ইসলামী ঐক্যজোট পায় দুটি আসন।
ওই বছর আওয়ামী লীগ আসন পায় ৬২টি। এর মধ্যে উপনির্বাচনে দলটি আরও চারটি আসন হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আসন দাঁড়ায় ৫৮তে।
সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট পায় ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর আওয়ামী লীগ পায় ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ। জামায়াতের ভোট ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈরি হয় নতুন সমীকরণ। ওই বছর আওয়ামী লীগও ভোটে নামে জোটের শক্তি নিয়ে। জাতীয় পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট যোগ হওয়ার পর বিএনপির জোট আর পাত্তা পায়নি।
সেই নবম সংসদ নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ২৩০টি। এই ভোটের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও অন্য শরিকদের সমর্থকদের অংশগ্রহণও ছিল।
আর বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আসন হয় ৩০টি।
ওই নির্বাচনে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লায় ভোট পড়ে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি, তবে আসন কমে হয় দুটি।
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় পর আর দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারেনি জামায়াত।
আরও পড়ুন:
স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত
জামায়াত শিবির: নৃশংসতার ক্ষত নিয়ে ভুগছেন এখনও, নিষিদ্ধের খবরে সন্তোষ
'নিষিদ্ধ যথেষ্ট নয়, ভাঙতে হবে জামায়াতের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য'
'জামায়াত ক্রিমিনাল দল', বলেছিল আদালতও
'অপবাদ দিয়ে' জামায়াতকে নিষিদ্ধ অন্যায়: ফখরুল
নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল জামায়াত
জামায়াত এখন 'সন্ত্রাসী সত্তা': এর মানে কী, আইন কী বলে
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, 'সন্ত্রাসী সত্তা' ঘোষণা
নিবন্ধন অবৈধ, নির্বাচনে 'অযোগ্য' জামায়াত
'জামায়াত ক্রিমিনাল দল', বলেছিল আদালতও
জামায়াতে ইসলামী আগাগোড়াই একটি অবৈধ সংগঠন
জামায়াত নিষিদ্ধের পরেও অনেক প্রশ্ন
অভিমানে দূরে জামায়াত, নেই যুগপৎ আন্দোলনে
নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল, নির্বাচনে অযোগ্যই থাকল জামায়াত
জামায়াতের ‘আদালত অবমাননা’: হাই কোর্টে যেতে বলল আপিল বিভাগ
বিদেশ থেকে অপপ্রচার: কীভাবে ব্যবস্থা, খতিয়ে দেখছে সরকার
জামায়াতের ‘সংস্কারপন্থিদের’ নতুন দল এবি পার্টি
বহিষ্কৃত জামায়াত নেতা মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন মঞ্চ
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক