আলোচনায় লৌহজংয়ের ওসির ইলিশ রক্ষার অভিযান  

ইলিশ ধরা বন্ধে পদ্মায় লৌহজং থানার ওসির স্পিডবোট নিয়ে অভিযানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সোশাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2019, 01:36 PM
Updated : 25 Oct 2019, 05:20 PM

ইলিশ সুরক্ষায় বিভিন্ন নদীতে চলমান অভিযানের উদ্যোগকে সবাই সাধুবাদ জানালেও জেলেদের নৌকা তাড়া করে পুলিশের ‘গুলি কর, গুলি কর’ শোরগোলকে অনেকে বাড়াবাড়ি মনে করছেন। 

লৌহজং থানার ওসির নেতৃত্বে পদ্মার বুকে এই অভিযানের ভিডিওটি এক ব্যক্তি ফেইসবুকে প্রকাশ করেন বুধবার রাতে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে; ইউটিউবেও বিভিন্ন চ্যানেল থেকে ওই ভিডিও তোলা হয়। 

ফেইসবুকে আসা ভিডিওর শিরোনামে লেখা হয়েছে- “এটা কোনো হলিউডের মুভির দৃশ্য নয়, এটা লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান।”

এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা পুলিশের একটি দল স্পিডবোটে নিয়ে জেলেদের একটি স্পিডবোটকে তাড়া করছে, আর তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওসি আলমগীর হোসেন।

পুলিশের তাড়া খেয়ে জেলেদের স্পিডবোটটি পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের স্পিডবোট থেকে বন্দুক উঁচিয়ে বারবার বলা হয় ‘গুলি কর, গুলি কর’।

বন্দুকধারী কয়েকজন পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম পরে এ অভিযানে অংশ নেন। ওসিসহ কয়েকজন ছিলেন সাধারণ পোশাকে।

ওসিকে স্পিডবোটের সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, “গুলি হবে গুলি, আজকে গুলি… অ্যাকশন।”

মাছ ধরতে আসা স্পিডবোটটি তাড়া খেয়ে নদীর তীরে ভেড়ার পর ছয়জনকে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

পুলিশের স্পিডবোটি সেখানে গিয়ে ভেড়ার পর ওসি বলেন, “অ্যাকশন সাকসেসফুল। আমরা আজকে স্পিডবোট ধরে ফেলেছি, দুই-চারটারে ধরতে হবে এখনই।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, “প্রজনন মৌসুমে সরকার ইলিশ ধরা নিষেধ করেছে। এরপরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পদ্মা নদীতে জাল নিয়ে কেউ কেউ ইলিশ ধরতে যায়।

“পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নদীতে ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ওই অভিযানে ‘আসলে কোনো গুলি করা হয়নি’ জানিয়ে তিনি বলেন, “অভিযান হয়েছে ভিডিও প্রকাশের আরো তিন-চারদিন আগে। গুলি গুলি বলে ওদের ভয় দেখানো হয়েছিল।

আরোহীরা দৌড়ে পালানোর পর ওই স্পিডবোট থেকে মাছ ধরার কিছু জাল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।

ফেইসবুকে ভিডিওটি দেখে পুলিশের প্রশংসা করে আনোয়ার এইচ খান ফাহী নামে একজন লিখেছেন, “শুভ কামনা রইল কাজের জন্যে। এজন্যই আমরা এখন ইলিশ পাচ্ছি অনেক বেশি পরিমাণে।”

ইমরান বেলাল লিখেছেন,“স্যালুট ওসিকে, দেশের সম্পদ রক্ষার চেষ্টার জন্য।”

তবে অবৈধভাবে ইলিশ ধরায় খোদ প্রশাসনও মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সজল ঘোষ নামে একজন।

তিনি লিখেছেন, “ক্যামেরার বাইরের ঘটনা দেখতে হলে পদ্মার পাড়ে যেতে হবে ভাই। মা ইলিশ অবৈধভাবে ধরে নদী শূন্য করে ফেলছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। লৌহজং, জাজিরা, নড়িয়া, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ এগুলাতে তো নিজ চোখে দেখছি।”

ওই অভিযানের কায়দা নিয়ে সমালোচনা করে তৌহিদুল আলম লিখেছেন, “এইটা মা ইলিশ রক্ষার অভিযান নয়, এইটা হিরো আলমের গুলি কর সিনেমার শুটিং।”

আর সিনেমার কায়দায় অভিযান চালিয়েও পুলিশ কাউকে ধরতে না পারায় নাসিম আরিফ লিখেছেন, “কাউকে ধরতে গেল না পুলিশ এবং ধরার ইচ্ছাও নেই বোঝা গেল একজনের থাক থাক এই কথা শুনে। দৌড়ে পালালো। পুলিশের যা ধরার ধরে ফেলছে সেটা হল মাছ। যাও এখন রান্না করে খাও।”

জুয়েল রানা বিপি নামে একজন লিখেছেন, “গুলি কর…গুলি কর। পুরাই ফাঁপোড়, সাবাস পুলিশ ভাইয়েরা।”

নির্জন নিপুর মন্তব্য, “বাংলা সিনেমা ও এত সুন্দর শুটিং করতে পারে না; সেই লাগলো।”

মা  ইলিশ রক্ষায় পুলিশের অভিযানকে উৎসাহ দিয়ে হাফিজ খান লিখেছেন, “বাংলাদেশের আইন যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন কঠোর হয়, তাহলে দেশের উন্নতি হবেই হবে।”

আর শেষ পর্যন্ত অভিযানে কাউকে গুলি না করার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ দেন শামসুল আরেফিন।

মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, “গুলি না করার জন্যে পুলিশকে ধন্যবাদ৷ হয়তো কেউ মারাও যেতে পারতো।”

শরীফ আহমেদ লিখেছেন, “চমৎকার, ব্যাপক বিনোদন পেলাম। পাশাপাশি কঠোরতাকে অভিনন্দন জানাই।”

ডিম পাড়ার মৌসুম হওয়ায় ‘মা ইলিশ’ সংরক্ষণের জন্য ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে বলেছে সরকার।

এই ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।