বেপথু এমপির গাড়ি আটকে স্যোশাল মিডিয়ায় ‘নায়ক’ ট্রাফিক কনস্টেবল

ঢাকার সড়কে নিয়ম ভেঙে চলতে চাওয়া এক আইন প্রণেতার গাড়ি আটকে দিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নায়ক’ হিসেবে আলোচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক সদস্য।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2017, 02:40 PM
Updated : 20 Nov 2017, 02:53 PM

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের গাড়ি আটকে দেওয়ার ভিডিওটি এখন ফেইসবুকে ভাইরাল।

ফেইসবুক গ্রুপ ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’- এ শেয়ার হতেই সিলেটের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনাও চলছে।

‘আনোয়ার হোসেন সজীব’ নামের এক নিক থেকে ভিডিওটি ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ গ্রুপে পোস্ট করা হয়।

এর ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “আমি ও আমার এক বন্ধু বেইলি রোডের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে চিলাম। তখন একটা প্রাডো কিংবা পাজেরো গাড়িতে করে একজন সংসদ সদস্য বেইলি রোডের একমুখী সড়কে গাড়ি ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য এসে গাড়ি আটকে দিলেন। গাড়ির ড্রাইভার বারবার পুলিশ সদস্যকে বলছিলেন, গাড়িটি ছেড়ে দিতে। তখন নেমে এলেন সাংসদ। সাংসদ আক্রমনাত্মক ভাষায় ট্রাফিক পুলিশকে গালিগালাজ করছিলেন। তখন আমরা মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও করতে শুরু করি। আমাদের দেখাদেখি আরো অনেকে মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও করতে শুরু করি। অবস্থা বেগতিক দেখে সাংসদ তখন গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।”

ঢাকায় ভিআইপিদের উল্টো পথে চলা গাড়ি আটকাতে পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানের পর বেইলি রোডের এই ঘটনা ঘটল।  

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে সেলিম উদ্দিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সেলিম দশম সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন

ভিডিওটি শেয়ার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ট্রাফিক কনস্টেবলকে ‘নায়ক’ অভিহিত করে সংসদ সদস্য সেলিমের সমালোচনা চলছে ফেইসবুকে।

‘শাহ মিশকাত’, ‘হাবিব উল্লাহ খান’, আসাদুল্লাহ গালিব’, ‘ইনাম হক’ নিকগুলো থেকে সেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে ‘নায়ক’ আখ্যা দেওয়া হয়।

‘হাবিব উল্লাহ খান’ নিক থেকে বলা হয়, “প্রকৃত বাঘের বাচ্চা, তাকে হাজার কোটি সালাম। এগিয়ে যান, আমরা আছি আপনার পাশে।”

‘আহমেদ আসিফ শাহনেওয়াজ’ নিক থেকে বলা হয়, “সম্মানিত পুলিশ সদস্য, আপনি সত্যি মহান একটি কাজ করেছেন।”

‘ইনাম হক’ নিক থেকে বলা হয়, “তিনি বাস্তবের নায়ক, অনুকরণীয় মানব। তাকে পুরস্কৃত করলে আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন, সাহসী হবেন।”

‘আবরার হাসান’ নিক থেকে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যকে ‘আয়রনম্যান’ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার পর তার চাকরি থাকবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

‘আবরারের’ প্রত্যুত্তরে ফেইসবুক ইউজার ‘আবরার আসিফ’ বলেন, “তিনি যদি বদলি হন, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর প্রতিবাদ জানাব। আরো একবার সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি দেখাব।”

ফেইসবুক ইউজারদের অনেকে পুলিশ প্রশাসনের এমনই সাহসী ভূমিকার প্রত্যাশা করেন।

‘ইনামুল জিম’ বলেন, “মাঝেমধ্যে ক্ষমতাশীলদের সামনে ভারী অসহায় হয়ে পড়েন তারা। তবে আমরা সাধারণ মানুষরা যদি তাদের পাশে এসে দাঁড়াই, তবে ভুলগুলোর বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াবে।”

‘মিনহাজ কাইয়ুম’ বলেন, “তার মতো মানুষকে আসলেই পুলিশ বাহিনীতে দরকার। অনেকে আছেন, তাদের পেশা ও পোশাক কোনোটাকেই সম্মান জানান না।”

“আসিফ হোসেন ’ নিক থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, “পুলিশ সদস্য যখন এই সাহসী কাণ্ডটি করলেন, তখন সার্জেন্টরা তাদের টার্গেট ফিল আপ করা নিয়ে ব্যস্ত।”

‘মিরাজ আহমেদ’, ‘ফারহান মাহমুদ রাফি’নিকগুলো থেকে সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

‘মিরাজ আহমেদ’ বলেন, “যেমনে খুশি দেশ চালাচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।”

‘রূপম আরিফিন’ নিক থেকে বলা হয়, “ এমন অনেক মানুষ ছোটখাট পোস্টে চাকরি করেও নিজেদের দায়িত্ব সততার সাথে পালন করে যাচ্ছেন।  আশা করি, তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের আমলা থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশকে সুন্দর করে তুলবেন।”