এসব ছবিতে রুয়ান্ডায় নিহত শিশুকে যেমন রোহিঙ্গা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে; তার বিপরীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবিকে আবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহী বলে দেখানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা কয়েকটি ছবি ভুয়া বলে বিবিসি খুঁজে বের করেছে।
এসব ভুয়া ছবিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তুরস্কের একজন মন্ত্রীও যে বিভ্রান্ত হয়েছেন, তাও উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা গত ২৫ অগাস্ট কয়েকটি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে হামলা চালানোর পর তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলছে।
এই অভিযানে কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে ঢুকেছেন বাংলাদেশে।
রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে না দেওয়ার মধ্যে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের কথা আসছে।
এর মধ্যেই ফেইসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে রোহিঙ্গা নির্যাতনের নামা ছবি।
এরই চারটি ছবি গত ২৯ অগাস্ট নিজের টুইটার একাউন্টে তুলে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিপক্ষে সরব হতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানান তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক।
তার ওই টুইট ১৬০০ বার রিটুইট হয়, লাইক পদে ১২০০ এর বেশি।
তার তোলা প্রথম ছবিতে রক্তাক্ত অনেকগুলো লাশ দেখা যাচ্ছে, তবে ছবিটি অস্পষ্ট।
মিয়ানমারের অনেকে বলছেন, এই ছবিটি ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিসে নিহতদের ছবি। কেউ বলেন, এটা একটি নৌ দুর্ঘটনায় নিহতদের ছবি।
এই ছবিটি আসলে কোন ঘটনার তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তা যে রোহিঙ্গা নিপীড়নের এখনকার ঘটনার নয়, তা নিশ্চিত হয়েছে বিসিসি; কেননা ছবিটি ইন্টারনেটে এসেছে গত বছর।
দ্বিতীয় ছবিতে মৃত এক ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে রাখা দেখা যাচ্ছে, তার পাশে আহাজারি করছেন এক নারী।
এই ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের ২০০৩ সালের ছবি বলে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে। ছবিটি তুলেছেন রয়টার্সের এক আলোকচিত্রী।
তৃতীয় ছবিতে মায়ের লাশ ধরে দুই শিশুকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। এরাও আসলে রোহিঙ্গা নয়। এই ছবিটি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার ১৯৯৪ সালের ছবি।
চতুর্থ ছবিতে খালের মধ্যে উদ্বাস্তু মানুষের ছবিটি আসলে নেপালের; এই ছবির জন্য পুরস্কারও জিতেছিলেন আলোকচিত্রী।
ছবিগুলো তোলার পর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ ওঠায় তা মুছে দিয়েছেন মেহমেত সিমসেক। এক টুইটে তিনি স্বীকার করেছেন, তা ভুল হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী দল আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি- এআরএসএ, যারা পুলিশ ও সেনা চৌকিতে হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত। তাদের নিয়েও ভুয়া ছবি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
একটি ছবিতে রাইফেল হাতে বাঙালি চেহারার অনেককে যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে, ছবির উপরে আবার লেখা আছে- ‘মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য লড়াই করছে বাংলাদেশের জঙ্গিরা’।
কিন্তু এই ছবিটিও এই সময়ের নয়, এটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি।
এমন বিভ্রান্তির জালে না পড়তে জাতি সংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআরসি এই বছর রাখাইন প্রদেশ নিয়ে এক প্রতিবেদনে নিজেদের তোলা ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি বা ভিডিও ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।