আমদানিপূর্ব পরিদর্শনের জন্য ২৫ থেকে ৩১ জুলাই ওই কর্মকর্তাদের ছুটি মঞ্জুর করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার করার জন্য একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও সরঞ্জামাদি আনতে যে তিন কর্মকর্তাকে পাঠানো হচ্ছে তদের খরচ দরদাতা প্রতিষ্ঠানই বহন করবে।
এ ধরনের সফরের সমালোচনা করে প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী ফেইসবুকে লিখেছেন, “এক সেট ক্যামেরা কিনতে তিন জন যাচ্ছেন জার্মানি! জ্বি আপনার-আমার টাকাতেই এসব হয়! ছবিগুলো ভাল করে দেখুন... তিন জন কর্মকর্তার জার্মানি যেতে হবে! অথচ এই কামেরা আইডিবি ভবনে পাওয়া যায়। দেশের টাকা এভাবে অপচয় করার কোন মানে হয়? প্রধানমন্ত্রীর এসব জানার কথা নয় যে তার কর্মকাণ্ডের কথা বলে এভাবে টাকার মচ্ছব হচ্ছে।”
ওই বিদেশ সফরের অনুমোদন নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিলুফার নাজনীন স্বাক্ষরিত গত ১৪ জুলাইয়ে আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড কভারেজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানিতব্য একসেট ডিজিটাল ক্যামেরা ও সরঞ্জামাদির প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনের জন্য জার্মানি সফরের জন্য তিন কর্মকর্তার অনুকূলে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হল।
তিন কর্মকর্তা হলেন, যুগ্ম-সচিব নূরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিপলু জামান।
সাংবাদিক ফজলুল বারী এ ধরনের অপচয় বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তার ফেইসবুক পোস্টে।
প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর লিখেছেন, “সত্যিই ‘জিজি টাল’ বাংলাদেশ।”
সাংবাদিক জ ই মামুন এমন সিদ্ধান্তের ব্যঙ্গ করে ফেইসবুকে লিখেছেন, “টাকা কি গাছে ধরে? মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আপনি কেন গেলেন না এই টিমের সঙ্গে, মাত্র তিন জন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে কি সম্ভব সুদূর জার্মানি থেকে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে আনা?”
শিমুল সালাউদ্দিন নামে একজন তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেখুন আপনার প্রিয় আমলাদের কাণ্ড।”
ফেইসবুক পোস্টের নিচে তিনি সফরের অফিস আদেশের অনুলিপিও জুড়ে দিয়েছেন।
“আর কি কি দেখার বাকি আছে, আল্লাহই জানেন,” এমন পোস্ট দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বাদল নামে এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী।
দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক নাদিম মোহাম্মদ লিখেছেন, “দরিদ্র জনগোষ্ঠীর করের টাকায় এসব বিদেশ বিলাস কবে বন্ধ হবে?”
ক্যামেরা কেনা সংক্রান্ত সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কোনো জিনিস কিনতে ওই জিনিসটি গ্রহণের আগে তা ইন্সপেকশনের বিধান রয়েছে।
“সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই খরচ বহন করে। এতে সরকারের কোনো অর্থ খরচ হয় না।”
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই ক্যামেরা কেনা হচ্ছে জানিয়ে বিস্তারিত জানতে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এই অতিরিক্ত সচিব।
তবে এ বিষয়ে লিয়াকত আলীকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা বলেছে, “সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে শিপমেন্টের আগে তাদের তাতে স্বাক্ষর করতে হবে।
“ডিএফপি অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে। তার অংশ হিসেবেই ডিজিটাল সিনেমাটোগ্রাফি আনা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রম কভারেজের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা প্রয়োজন। যাতে হাই পাওয়ার লেন্সসহ আরও অনেক আধুনিক উপকরণ থাকবে।”
বিবিসি বাংলাকে লিয়াকত আলী জানান, ক্যামেরার মূল অংশের দাম পড়েছে ৩৫ হাজার ইউরো, যেটি অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে কর্মকর্তারা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের প্রতিনিধি ছিল।
“তারা কি প্যাকেট করছে এবং ঠিকমতো দিচ্ছে কিনা সেটাও তো দেখার বিষয় আছে।”
একটি ক্যামেরার জন্য তিন কর্মকর্তার জার্মানি সফর কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএফপি মহাপরিচালক বলেন, “বাংলাদেশে ওই ধরনের এক্সপার্ট নেই। বরং দুই বছর কাজ করে আমাদের ধারণা সম্পর্কে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
“লাইটিং, পোস্ট এডিটিংসহ নানা বিষয়ে আমরা ধারণা নেব এই সফরে। আগের বছর দুই জনকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তাদের রিপোর্ট আমাকে সন্তুষ্ট করেনি। তাই ভাবলাম এবার নিজেরাই যাবো।”