‘জয় ক্রিকেট পলিটিক্স, স্যালুট আইসিসি’

বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি দেখিয়ে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে নিষিদ্ধ করার আইসিসির সিদ্ধান্তে বিস্ময়ের সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকরা।

মাহমুদ মুরাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2016, 06:24 PM
Updated : 19 March 2016, 07:53 PM

ল্যাবে পরীক্ষা দেওয়ার পর দুই বোলারকে নিষিদ্ধের ঘোষণা এলেও ওই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ফেইসবুকে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায় অসংখ্য ক্রিকেট ভক্তকে।

পরীক্ষায় বেশিরভাগ ডেলিভারিতে সানির কনুই বোলিংয়ের সময়ের সর্বোচ্চ সীমা ১৫ ডিগ্রির বেশি বেঁকে যায়; আর তাসকিনের সব ডেলিভারি বৈধ ছিল না উল্লেখ করে শনিবার বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের সাময়িক নিষিদ্ধের কথা জানায় আইসিসি।

এর প্রতিক্রিয়ায় জানেসার আজাদ নামে এক তাসকিন ভক্ত ফেইসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন, “যদি তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন ভুল হয়, তাহলে ক্রিকেটই ভুল।”

বাংলাদেশি দুই বোলারের এই নিষিদ্ধের মধ্যে ক্রিকেট রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করেন আহমেদ আল মারুফ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজের একটি পোস্টের মন্তব্যে ভারতীয় দলের বোলার রবিচন্দ্র অশ্বিন ও জাসপ্রিত বুমরার বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

মারুফ লেখেন, “অশ্বিন বুমরারা খেলে যাক- আর তাসকিন, সানিরা নিষিদ্ধ হোক। জয় ক্রিকেট পলিটিক্স। স্যালুট আইসিসি।”

বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া ক্রিকেটকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার জন্যই এই নিষিদ্ধের আয়োজন মন্তব্য করে ভবিষ্যতে মুস্তাফিজুর রহমানকেও নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

“যেখানে তাসকিনের মত বোলারকে নিষিদ্ধ করা হয়, সেখানে মুস্তাফিজকে নিয়ে ভয়ে পড়ে গেলাম। তাসকিন থেকে মুস্তাফিজ বেশি ভয়ঙ্কর, সো তাকে খেয়ে দিতে পারলেই বাংলাদেশ ক্রিকেট কয়েক বছর পেছনে ঠেলে দেয়া যাবে। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম।”

গত ৯ মার্চ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে সানি ও তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ১২ মার্চ ধর্মশালা থেকে চেন্নাইয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেন তারা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়াও সঙ্গে সদস্য দেশগুলোর ঘরোয়া ক্রিকেটে বল করতে পারবেন না সানি-তাসকিন। তবে বিসিবির অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে বল করতে পারবেন তারা।

বিষয়টিকে ‘স্পষ্টতই ক্রিকেট রাজনীতির অংশ’ বলে মনে করা বাংলাদেশ দলের সমর্থকরা এ ঘটনায় বিসিবিকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

নাজিম রনি নামের একটি নিক থেকে বিসিবি পেজের পোস্টে হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করে মন্তব্য করা হয়, “প্লিজ বিসিবি রাইজ ইউর ভয়েস অ্যাগেইনস্ট আইসিসি নাউ। আজ যদি প্রতিবাদ না করেন- তাহলে আর কোনো দিনই প্রতিবাদ করা যাবে না। এখনই সময় আওয়াজ তোলার। #riseurvoice

কেউ কেউ প্রতিবাদ হিসেবে বিশ্বকাপ বয়কট করে আসার আহ্বানও জানাচ্ছেন অধিনায়ক ও বিসিবির কাছে।

দুই বোলারকে ‘অন্যায়ভাবে’ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে মন্তব্য করে এমডি সুফি শাফিন রহমান নামে একটি নিক থেকে আইসিসির এই সিদ্ধান্তকে প্রতারণাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বলা হয়।

শাফিন লেখেন, “মুরালিকে চাকিং এর অভিযোগে যখন অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার অন্যায়ভাবে বার বার নো দিচ্ছিল- তখন প্রতিবাদস্বরূপ রানাতুঙ্গা তার দল নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ভাবা যায়, সেদিন যদি রানাতুঙ্গা বীরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নিতেন তাহলে কি মুরালি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলার হতে পারত?? আজ সময় এসেছে বিসিবি আর মাশরাফিরও ঐ ধরনের বীরত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কিছু করার।”

এর আগে গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে যায় এমন কয়েকটি সিদ্ধান্তে বাজে আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা হয় ক্রিকেট বিশ্বজুড়েই। ম্যাচটিকে প্রভাবিত করার অভিযোগে ওঠে আইসিসির সেসময়ে চেয়ারম্যান ভারতীয় এন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে।

ওই সময় ফেইসবুক সমালোচনায় আইসিসিকে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বলে মন্তব্য করতেও দেখা গেছে।

তাসকিন-সানিকে নিষিদ্ধ করায় ‘ক্রিকেট রাজনীতিতে’ ভারতকে দুষছেন বেশিরভাগ ক্রিকেট প্রেমী বাংলাদেশি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহরিয়ার সনি তার ফেইসবুকে পেজে মন্তব্য করেন, “বিসিবি র সেই ক্ষমতা নাই যে ইন্ডিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বিরুদ্ধে কিছু বলার। দুই সপ্তাহ পর যে রিপোর্ট দেওয়ার  কথা তা এত তরিঘরি করে কেন দিল? বিসিবির কোন দিনই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়ার ক্ষমতা নাই। কিংবা আপিল ও করবে না । যদি .... কিছু মনে করেন!”

রাজু চৌধুরী নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দুই বোলারকে নিষিদ্ধের পেছনে সরাসরি ভারতকে দায়ী করে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সব ম্যাচে ভারতের পরাজয় কামনা করেন।

“ইন্ডিয়া শুধু শুধু তাসকিনকে নিষিদ্ধ করল। বড় অস্ত্র হারিয়ে আমরা বিশ্বকাপ এ কেমন করব জানি না। কিন্তু সব থেকে খুশি হব যদি ইন্ডিয়া গ্রুপের সবগুলো ম্যাচ হেরে যায়। আমার প্রিয় বাংলাদেশ যদি গ্রুপ পর্বে শুধু একটা ম্যাচ জিতে তাহলেই আমি খুশি। তবে ম্যাচের প্রতিপক্ষ যে ইন্ডিয়া হতে হবে সেটা ত না বললেও চলবে...।”

তবে এসব বাধা ডিঙিয়ে তাসকিন-সানি আরও প্রত্যয়ী হয়ে ওঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আশিক ইসলাম।

তিনি বিসিবির একটি পোস্টে মন্তব্য করেন, “রুবেল আর মুস্তাফিজ তাসকিনের অভাব ঘুচাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আর সানি ভাই এবং তাসকিন ভাইয়ের প্রতি শুভকামনা রইলো। জীবনে বাধা আসবেই, ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমন ধাক্কা তাসকিনকে আরও প্রত্যয়ী করে তুলবে।”

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে তাসকিনকে নিয়ে প্রশ্ন না ওঠায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনিও।

“তবে সমস্যাটি এতদিন কেন ধরা পড়লো না? অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও তো দিব্যি বল করেছেন তিনি।”