অনশনকারীদের তুলে দিয়েছে পুলিশ

অনশন শুরুর ২২ ঘণ্টার মাথায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে থেকে বিনিয়োগকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2011, 09:35 PM
Updated : 16 Oct 2011, 09:35 PM
ঢাকা, অক্টোবর ১৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে রাতভর বিক্ষোভ চলার পর অনশনরত বিনিয়োগকারীদের তুলে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মতিঝিল থানা পুলিশ ডিএসই ভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুলিশ এসে আমাদের সঙ্গে ব্যাপক দুর্ব্যবহার করে। তারা মাইক ছিনিয়ে নেয় এবং চেয়ার ভেঙে ফেলে আমাদের সরে যেতে বাধ্য করে।"
এ সময় কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে পুলিশ আটক করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মাইক ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গতকাল থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ। এতে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা তাদের মাইকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। পরে তারাই সরে গেছেন।"
সকাল পৌনে ৯টার দিকে ডিএসইর সামনের সড়কে যান চলাচল আবার শুরু হয় বলে জানান তিনি।
কাউকে আটক করার বিষয়টিও স্বীকার করেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
দুই সপ্তাহ ধরে টানা দরপতনের পর রোববার বেলা ১১টায় লেনদেন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে ডিএসইর সামনে অবস্থান নেয় ব্যক্তি শ্রেণীর এই বিনিয়োগকারীরা। এ সময় কারো কারো মাথায় 'কাফন' এর প্রতীক হিসেবে সাদা কাপড় বাঁধা দেখা যায়। এক নারী বিনিয়োগকারীর হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা দেখা যায় 'আর কত? প্রতিবাদের ভাষা নাই।'
বিকেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দনসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ অনশনস্থলে উপস্থিত হন এবং বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
এই অনশনের মধ্যে রোববারও ডিএসইতে ব্যাপক দরপতন হয়। সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৮১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে হয় ৫ হাজার ৩৮৭ পয়েন্ট। লেনদেন হয় ২৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার, যা বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কম।
বিষয়টি সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কর্মকর্তারা রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে এসইসি চেয়ারম্যান ম. খায়রুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, "আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। কোনো কিছু বলার থাকলে অর্থমন্ত্রী বলবেন।"
অন্যদিকে মতিঝিলে রাতভর চলে বিক্ষোভ। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী রাতে সাংবাদিকদের বলেন, "পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অথবা প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিনিধি এসে আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না।"
এছাড়া গত বুধবার এসইসির সঙ্গে এনবিআরের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সে ব্যাপারে অবিলম্বে আদেশ জারি এবং পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সারারাত না ঘুমিয়ে রাস্তায় বসে স্লোগানে স্লোগানে নিজেদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেন বিনিয়োগকারীরা। কখনো গান গেয়ে, কখনো বক্তৃতা দিয়ে নিজেদের মনোবল চাঙ্গা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান।
কিন্তু সকালে পুলিশ আসার পরপরই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এই আন্দোলন। ডিএসই ভবনের সামনে থেকে সরে গিয়ে আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরেন বিনিয়োগবারীরা।
পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুলিশ আমাদের তুলে দিলেও কর্মসূচি চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই এলকা ছেড়ে যাব না।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এফকে/কেটি/জেকে/১০২৫ ঘ.