মহাকাশের গভীরে অতীতের সময়কেও আরও স্পষ্ট রূপে ফ্রেমবন্দি করতে পেরেছে জেমস ওয়েব। এই নভোদূরবীন যে আলো ধরতে পারবে, তাতে ফুটে উঠবে ১৩৬০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের রূপ।
এ ছবিতে বিশাল যে গুচ্ছ দেখা যাচ্ছে তার নাম এসএমএসিএস ০৭২৩; যা ধারণ করে আছে হাজার হাজার ছায়াপথ। এইসব ছায়াপথের কোনো কোনোটি ১৩১০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের।
এক আলোকবর্ষে আলো যেতে পারে ছয় ট্রিলিয়ন মাইল অর্থ্যাৎ নয় দশমিক সাত ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। ফলে ১৩১০ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব পেরিয়ে আসা আলো যেসব ছায়াপথের ছবি দেখাচ্ছে, তার অনেকগুলোই হয়ত এখন আর সেই চেহারায় নেই; কোনো কোনোটি হয়ত বিলীন হয়ে গেছে।
ছবিতে ঘন নীল যে ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে সেটি বেশি পুরনো। এতে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র আর সামান্য ধুলোর মিশেল। লালচে ছায়াপথে ধুলোর পরিমাণ আরও বেশি। সেখানে এখনও নক্ষত্রের জন্ম হয়ে চলেছে।
নক্ষত্ররাও জন্ম নেয়, বয়স হয় এবং মারা যায়। পৃথিবী থেকে সাত হাজার ছয়শ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে কারিনা নেবুলা। মহাজগতে নক্ষত্ররাজির বড় সূতিকাগার বলা চলে একে।
ছবিতে পাহাড়ের মত যা মনে হচ্ছে তা আসলে ধুলো ও গ্যাসের মিশ্রণে তৈরি হওয়া চূড়া। এর কোনো কোনোটি উচ্চতায় এত বড় যে পার হতে লেগে যাবে সাত আলোকবর্ষ।
কারিনা নেবুলার ছবি হাবল টেলিস্কোপেও দেখা গিয়েছিল। তবে জেমস ওয়েব এই নেবুলার আরও ঝকঝকে ছবি তুলে আনতে পেরেছে।
ছবিটি বলছে, আশপাশ থেকে উপাদান জড়ো করে ওই অশান্ত অঞ্চলে নতুন তারার জন্মের প্রক্রিয়া চলছে। নক্ষত্র সৃষ্টির পর তা থেকে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ছড়িয়ে পড়ে, আর সেখান থেকে একটি গড়ন পায় নীহারিকা। ছবিতে লাল বিন্দুগুলো নবজাতক নক্ষত্রের চিহ্ন, যা থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ শক্তি বেরিয়ে আসছে।
পাঁচটি গ্যালাক্সি নিয়ে স্টেফানস কুইনটেটের সেরা ছবিটিই ধরা পড়েছে ওয়েবের শক্তিশালী ক্যামেরায়।
১৮৭৭ সালে জ্যোতির্বিদরা প্রথম এর খোঁজ পেয়েছিলেন।
কুইটেটে কাছাকাছি থাকা চারটি গ্যালাক্সি ২৯ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে পৃথিবী থেকে। অন্য গ্যালাক্সিটি ৪ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।
চারটি গ্যালাক্সি একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এর ধূলো ও নক্ষত্র মাধ্যাকর্ষণের কারণে একে অন্যকে টানতে থাকে।
ছবিতে দ্যুতি ছড়ানো গুচ্ছ গুচ্ছ কম বয়সী তারা দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার কি আরও বেশি গ্যালাক্সি।
একটি নক্ষত্রের নিঃশেষ হয়ে আসার মুহূর্ত এত বিমূর্ত সুন্দর হবে তা কি কেউ ভেবেছিল? আর একই ছবিতে এরকম দুটো তারার উপস্থিতি নিশ্চয় দ্বিগুণ বিস্ময়কর।
পৃথিবী থেকে আড়াই হাজার আলোকবর্ষ দূরে দুটো তারা একে অন্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে; আর তাদের ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
আয়ু শেষ হওয়ার কালে তারার চারপাশের বলয় অথবা মেঘ থেকে গ্যাস ও ধুলোর নিঃসরণ হয়।
জেমস ওয়েব শুধু যে সাদার্ন রিং নেবুলার ছবি তুলছে পেরেছে তা নয়, সেই সঙ্গে এই নক্ষত্রের রসায়ন বোঝার মত তথ্যেরও যোগান দিতে পারছে।
যে নক্ষত্রটি বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, তা অন্যটি থেকে বয়সে কম বলে এখনও নানা উপাদানের উদগীরণ কম ঘটছে। যেহেতু দুটো নক্ষত্রই একে অন্যকে ঘিরে ঘুরছে, তাই চারপাশে তাদের চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা যাচ্ছে; যা সাদার্ন রিং নেবুলাকে অনন্য আকৃতি দিয়েছে।
একটি বৈজ্ঞানিক লেখচিত্র কোনোভাবেই মহাজাগতিক ছবির চেয়ে আকর্ষণীয় হবে না। কিন্তু নাসার এই লেখচিত্রের পেছনে দারুণ এক গল্প রয়েছে।
সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা গ্রহ নিয়েও গবেষণা করছে জেমস ওয়েব। গ্রহ যেহেতু এর মূল নক্ষত্রের সামনে দিয়ে চলতে থাকে, ওয়েব এই বাতারণ থেকে নক্ষত্রের আলো নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারে। দেখতে পারে, জীবনের কোনো সম্ভাবনা সেখানে রয়েছে কি না।
নাসা প্রকাশিত এই গ্রাফে ওয়েব ডব্লিউএএসপি ৯৬বি গ্রহটিকে বিশ্লেষণ করে দেখেছে। বৃহস্পতির মত দেখতে এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে এক হাজার ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।
ওয়েব এখনও এই গ্রহে প্রাণের সন্ধান পায়নি, তবে গ্রাফ বলছে এখানে গ্রহের মেঘে জল রয়েছে। আর আমরা তো জানি, জলই জীবনের উৎস।