যে ৫ কারণে অনন্য জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

এ মহাবিশ্ব হাজার কোটি বছর আগে কেমন ছিল, তা দেখার আর জানার বিরাট সুযোগ করে দিয়েছে একটি মহাকাশ টেলিস্কোপ। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2022, 07:08 PM
Updated : 15 July 2022, 10:31 AM

জেডব্লিউএসটি অর্থ্যাৎ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মিলছে মহাজগতের অসংখ্য ছবি, যেখানে মহাকাশ ধরা দিয়েছে আদি চেহারায়।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বাধুনিক স্পেস অবজারভেটরি, যা বানাতে দুই দশকের মত সময় লেগেছে।

প্রত্যাশা ছিল, এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বকে দেখার ধারণাকে আমূল পাল্টে দেবে; হয়েছেও তাই।

এক হাজার কোটি ডলার খরচ করে বানানো এই ‘টাইম মেশিন’ জোতির্বিদদের লাখ লাখ বছর আগের মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণায় কাজটি আরও সহজ করে দেবে।

যুগান্তকারী প্রযুক্তি, নকশা এবং মহাকাশে এর অবস্থানের কারণে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ছাপিয়ে গেছে সুপরিচিত হাবল স্পেস টেলিস্কোপকে।

১৯৯০ সালে চালু হওয়ার পর থেকে হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে গ্রহ, ছায়াপথ এবং নীহারিকা ও নক্ষত্রের লাখ লাখ ছবি তুলেছে ।

জেডব্লিউএসটিতে রয়েছে অতি সূক্ষ্ম ক্যামেরা এবং স্পেকট্রোগ্রাফস, যা টেলিস্কোপটির সুবিশাল সোনার আয়না থেকে বিচ্ছুরিত আলো ধারণ করতে পারে।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে এই টেলিস্কোপটি বানিয়েছে নাসা।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কেন বিশেষ কিছু? দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে তার পাঁচটি কারণ।

‘নিতে পারে’ অতীতে

মহাবিশ্বের জন্মের ১০ কোটি থেকে ২৫ কোটি বছর পর কেমন ছিল মহাবিশ্ব? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।

বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে, মহাজগতের সূচনা হয়েছিল ১৩৮০ কোটি বছর আগে।

নাসা গত ১২ জুলাই যে নীহারিকাপুঞ্জের ছবি প্রকাশ করেছে, তার নাম এসএমএসিএস ০৭২৩। এই নীহারিকাপুঞ্জের আলো পৌঁছাতে সময় লেগেছে ১৩০০ কোটি বছর।    

হাবল টেলিস্কোপও এই গ্যালাক্সির ছবি আগে ধারণ করেছিল, কিন্তু জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের উজ্জ্বল ছবিতে বিবরণগুলো যেন বেশি স্পষ্ট।

নাসা বলছে, তারা ১৩৫০ কোটি বছর আগে ফিরে দেখতে চায়, কেমন ছিল ওই সময়ের মহাজাগত।

এই টেলিস্কোপ ইনফ্রারেড আলো শনাক্ত করে, এর মধ্য দিয়ে সেটি মহাকাশে বস্তুকণার তাপের উৎস নির্ণয় করতে পারে।

এর ক্যামেরা এতটাই সূক্ষ্ম যে বাম্বল বা বড় আকারের মৌমাছির তাপ সংবেদনশীলতাও চিহ্নিত করতে পারে। 

মৌচাক আয়না

টেলিস্কোপের আয়না থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে ক্যামেরায় আসে। আয়না যত কার্যকর হবে, অবজারভেটরির ক্যামেরা তত ভালো ছবি ধারণ করতে পারে।
জেডব্লিউএসটিতে ১৮টি ষড়ভূজ আয়না বসানো হয়েছে; যা এক সাথে দেখতে মৌচাকের মত মনে হয়।

আয়নার ব্যাস ছয় দশমিক পাঁচ মিটার। আর এই আয়নার আকার হাবলের চেয়ে ছয়গুণ বড়; সেই সঙ্গে একশগুণ বেশি শক্তিশালী। 

ইনফ্রারেড আলোর প্রতিফলন যাতে ঠিক মত হয়, সেজন্য এ আয়নায় উপর পাতলা করে সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।

ছবি: নাসা

অনন্য কক্ষপথ

হাবলকে যেভাবে মহাকাশে বসানো হয়েছে, তার সঙ্গে মিল নেই জেডব্লিউএসটির।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশের অনেক বাইরে এবং হাবল থেকে ভিন্ন এক কক্ষপথে বসানো হয়েছে; এতে করে অনেক দূরের বস্তুকণা দেখা সম্ভব।  

পৃথিবীর কক্ষপথে না বসে এই টেলিস্কোপ বসেছে সূর্যের কক্ষপথে। একই সঙ্গে এই টেলিস্কোপ রয়েছে পৃথিবী বরাবার, যদিও পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব হবে ১৫ লাখ কিলোমিটার এবং চাঁদের সাপেক্ষে চার গুণ দূরে। এই অবস্থানকে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট বলে।

সূর্যের উত্তাপ থেকে সুরক্ষা দিতে এই আয়নাকে রাখা হয় মাইনাস ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।

এ আয়নার উপর পাঁচটি স্তর রয়েছে, যা সূর্য থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। টেনিস কোর্টের সমান এই স্তর সূর্যের উত্তাপকে লক্ষ ভাগে কমিয়ে দিতে পারে।

প্রাণের খোঁজে

সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহগুলোর বাতাবরণ নিয়ে গবেষণা করাই এ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বানানোর মূল উদ্দেশ্য।

অন্য ছায়াপথের গ্রহের যে বায়ুমণ্ডল, তাতে অক্সিজেনের উপস্থিতি তালাশ করবে জেমস ওয়েব।

যেভাবে গেছে মহাকাশে

একটি স্কুল বাসের সমান এই টেলিস্কোপের দৈর্ঘ্য ২১ মিটার ও প্রস্থ ১৪ দশমিক ৬ মিটার।

রকেটে আঁটাতে এ টেলিস্কোপকে ভাঁজ করে নেওয়া হয়েছিল।

২০২১ সালের ক্রিসমাসের দিনে দক্ষিণ আমেরিকার ফ্রেঞ্চ গুয়ানার কাছে এরিয়ান ৫ রকেটে করে মহাকাশের পথে উড়েছিল জেডব্লিউএসটি।