মানুষের মতো রোবটেও ‘জীবন্ত’ ত্বক

স্পর্শের অনুভূতি দেয়, এমন ত্বক শুধু জীবদেহে বর্তমান হলেও এবার রোবটের জন্যও তা তৈরির দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2022, 06:34 PM
Updated : 12 June 2022, 04:38 AM

টোকিও ইউনিভার্সিটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মানব দেহের মতোই কোষ থেকে এই ত্বক তৈরি করেছেন।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে গবেষকদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সাধারণত রোবটে কৃত্রিম ত্বক বা চামড়া ব্যবহার করা হয়। তবে কোষ ব্যবহার করে যে চামড়া বা ত্বক তৈরি করা গেছে, তা মানব ত্বকের মতোই ‘জীবন্ত’।

গবেষণা দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়টি মেকানিক্যাল অ্যান্ড বায়োফাংশনাল সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক শোজি তাকুচির দাবি, “জীবন্ত ত্বক হল রোবটকে জীবন্ত প্রাণীর চেহারা এবং স্পর্শ দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সমাধান।”

পরীক্ষার জন্য তাকুচির দলটি একটি রোবোটিক আঙুল বেছে নেন। তার আগে আঙুলের গঠন শৈলী নিয়ে খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করা হয়। রোবটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও এটি।

ত্বকের নির্মাণ যেভাবে

মানব ত্বকের যে গঠনশৈলী সেই প্রক্রিয়াতেই রোবটের জন্য ত্বক তৈরি করা হয়েছে বলে জানান গবেষক তাকুচি।

রোবোটিক আঙুলটি প্রথমে কোলাজেনের একটি দ্রবণে ডোবানো হয়, যা মূলত একটি আঁশযুক্ত প্রোটিন। কোলাজেনের দ্রবণ এবং মানব ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট সেল, এ দুটি প্রধান উপাদান মানুষের ত্বক গঠন করে। ত্বকের সংযোগ টিস্যুর প্রাথমিক সেল হল ডার্মাল বা ত্বক সংক্রান্ত ফাইব্রোব্লাস্ট।

আঙুলের চারপাশে দ্রবণটি লাগানোর পর তাকুচি ত্বকের বাইরের অংশে মানুষের এপিডার্মাল কেরাটিনোসাইট প্রয়োগ করেন। কেরাটিনোসাইট হল এক ধরনের কোষণ, যা, ত্বকের বাইরের উপরিভাগের স্তর গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

ট্রায়ালে আঙ্গুল বিভিন্নভাবে নড়াচড়া করা হলে স্থিতিস্থাপক ওই মানবত্বকও কোনো অসুবিধা ছাড়াই সঞ্চালিত হয়।

তাকুচি বলেন, তার দল আঙুলের একটি অংশে ক্ষত সারাতে কোলাজেন ব্যান্ডেজ লাগিয়েছিল। এরপর প্রোটিন ত্বক মেরামতের পর রোবটটি স্বাধীনভাবে চলেছিল।

২০২১ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, কোলাজেন মানুষের ত্বকের একটি প্রধান উপাদান এবং তা প্রাকৃতিকভাবেই সেরে উঠতে পারে। এই ত্বক পানিকে বিকর্ষণ করে, অর্থাৎ গ্রহণ করে না, যা রোবটের কাজকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

গবেষকরা যখন ভেজা কিছু উপাদানের সঙ্গে রোবট ব্যবহার করেন, তখন পলিস্টাইরিন ফোমের কণাগুলো এর সঙ্গে আটকে যায়। এই পলিস্টাইরিন ফোমের কণাগুলো সাধারণত বিনব্যাগ এবং খেলনা প্রাণির শরীরের ভেতরের ফাঁপা অংশ পূরণে ব্যবহার করা হয়।

তাকুচি বলেন, বিজ্ঞানীরা যখন জল-প্রতিরোধী মানবসদৃশ ত্বকে এই পরীক্ষা চালান, তখন ফোমের কণাগুলো না আটকে রোবোটিক আঙুল সেগুলোকে টুসকি মেরে সরিয়ে ফেলতে পারে।

 

কী সুবিধা দেবে?

হিউম্যানয়েড হল সেসব রোবট, যেগুলো মানুষের পাশপাশি থেকে চিকিৎসা, নার্সিং কেয়ার এবং সেবা শিল্পে কাজ করে থাকে।

মানুষের মতো রোবটগুলো থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পুলকিত আগ্রওয়াল। তিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

“মানুষ তাদের ঘিরে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মতো রোবট থাকা দরকারি।”

তিনি বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, বাড়িতে কাজকর্মের জন্য একদিন রোবটগুলো প্রয়োজন হবে এবং একজন মানুষের মতো কিছু ধরে তুলতে পারবে, ঘুরে বেড়াতে পারবে।”

তার ভাষ্যে, “একটি রোবটকে যদি ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে একটি মগ কিংবা এ ধরনের শক্ত বস্তু তোলার ক্ষেত্রে এটি যথাযথ হবে না। কারণ দুটি বস্তুর মধ্যে অল্প পরিমাণে যোগাযোগ থাকবে, যেহেতু উভয়ই নমনীয় নয়।”

পুলকিতের মতে, যদি হাতটি মানুষের ত্বকের মতো নরম হয়, তাহলে তা রোবটটিকে একটি মগ তোলার মতো সুবিধা দেবে।

‘পথ এখনও অনেক বাকি’

পুলকিত আগরওয়াল বলেন, “আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মানুষের মতো ত্বকের বিকাশে এখনও অনেক পথ বাকি।”

গবেষক তাকুচির ভাষ্য, “ত্বক একটি জীবন্ত প্রাণিসত্ত্বা। তাই একে ক্রমাগত পরিচর্যার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখত হয়।

“দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান রোবটের যে ত্বক তৈরি করা হয়েছে, তাতে সহজাত বা নিজে নিজে কাজ করার সক্ষমতা নেই। তাই এটি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না।”

এজন্য তাকুচি একটি ভাস্কুলার সিস্টেম যুক্ত করতে আগ্রহী, যেভাবে সারাদেহজুড়ে মানব কোষে রক্ত ​​সঞ্চালিত হয় এবং কোষে পুষ্টি সরবরাহ ও ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া রোমকূপ, নখ ও ঘাম গ্রন্থির বিকাশ ঘটাতেও চান এই বিজ্ঞানী।