জলবায়ু আর পৃথিবীর নিয়ম বোঝার চেষ্টায় পদার্থের নোবেল

এই বিশ্বধরা কোন জটিল নিয়মে চলে, মানুষের কর্মকাণ্ড কী করে পৃথিবীর জলবায়ুর ভৌত নিয়মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, সেই গবেষণার স্বীকৃতিতে চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন তিন গবেষক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2021, 10:14 AM
Updated : 5 Oct 2021, 01:36 PM

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার এই পুরস্কারের জন্য সুকুরো মানাবে ও ক্লাউস হাসেলমান এবং জর্জিও পারিসির নাম ঘোষণা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক মানাবে এবং জার্মানির হাসেলমান তাদের গবেষণায় পৃথিবীর জলবায়ুর একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন, যার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব নিয়ে পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব।

নোবেল পুরস্কারের এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার (১১ লাখ মার্কিন ডলার) অর্ধেক পাবেন এই দুই গবেষক।

বাকি অর্ধেক পাবেন ইতালির বিজ্ঞানী পারিসি, আশির দশকে যার মূল গবেষণা ছিল থিওরি অব কমপ্লেক্স সিস্টেম নিয়ে।

এর সঙ্গে জলবায়ুর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে নোবেল কমিটি মনে করছে, পারিসি স্পিন গ্লাস নিয়ে তার গবেষণায় একটি কমপ্লেক্স সিস্টেমের এলোমেলো আচরণের মধ্যে যে নিয়মের সূত্র পেয়েছেন, তাকে পৃথিবীর জলবায়ু মডেলের একটি ক্ষুদে সংস্করণ হিসেবে ভাবা যায়।  

৯০ বছর বয়সী সুকুরো মানাবে নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন জ্যেষ্ঠ মাইক্রোবায়োলজিস্ট। বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কীভাবে বেড়ে যায়, ১৯৬০ এর দশকে তিনি তার গবেষণায় তা দেখান। তার নেতৃত্বেই সে সময় জলবায়ু মডেল তৈরির কাজ শুরু হয়। 

তার এক দশক পর ও ক্লাউস হাসেলমান একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার ওপর তার প্রভাব একসঙ্গে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। জার্মানির হামবুর্গের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব মিটিরিওলজির অধ্যাপক হাসেলমানের বয়স এখন ৮৯ বছর।

আর আশির দশকে রোমের সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পারিসি গবেষণা করেন স্পিন গ্লাস হিসেবে পরিচিত একটি সঙ্কর ধাতু নিয়ে। যেখানে কিছু লোহার পরমাণুকে এলোমেলোভাবে একটি গি্রডে তামার পরমাণুর সঙ্গে সাজানো হয়। লোহার পরমাণুর সংখ্যা কম হলেও তা কীভাবে ধাতুর চৌম্বক গুণকে অভাবনীয়ভাবে বদলে দেয়, তার একটি সূত্র সেখান থেকে বের করেন পারিসি।

সুইডিশ শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের নামে ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১৮ জন পদার্থবিদ্যায় এ পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের মধ্যে নারী মাত্র চারজন। 

এই মহাবিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ঘেরা প্রপঞ্চ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতিতে গত বছর যুক্তরাজ্যের স্যার রজার পেনরোজ এবং জার্মানির রাইনার্ড গেনসেল ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্দ্রেয়া গেজ পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান।

বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মানবদেহে উষ্ণতার অনুভূতি কীভাবে ছড়ায়, সেই গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ডেভিড জুলিয়াস ও অডার্ম প্যাটাপুটেনকে এবার যৌথভাবে চিকিৎসার নোবেল জিতেছেন।

বুধবার রসায়নে চলতি বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা। এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১১ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

সাধারণত প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছরের মতো এবারও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি।

তারপরও নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের অনুপস্থিতিতেই এ বছর স্বল্প পরিসরে স্থানীয়ভাবে নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজনের আশা প্রকাশ করেছে ফাউন্ডেশন।

এ অনুষ্ঠান টেলিভিশন এবং নোবেল প্রাইজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলেও নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে।

তবে অসলোয় নোবেল শান্তি পুরস্কার অনুষ্ঠান করেই দেওয়ার সম্ভাবনা খোলা রেখেছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে নরওয়ে থেকে।