বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ মনে করছেন, কোভিড টিকার জন্য নোবেল জয় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। আগামী সোমবার চিকিৎসা শাস্ত্রে এবারের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণায় যদি কোভিড টিকার উন্নয়নে গবেষকদের কাজের স্বীকৃতি নাও আসে, আগামীতে তা ঠিকই মিলবে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বিস্তার ঠেকাতে এখনও কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে চলছে অনেক দেশ।
তবে কোভিড-১৯ টিকার কারণে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে অনেক ধনী দেশ। আবার অনেক দেশ এখনও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থাই করতে পারেনি।
মডার্না এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি এমআরএনএ টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈপ্লবিক গতি এনে দিয়েছে। এ টিকা দ্রুত তৈরি করা যায় এবং অত্যন্ত কার্যকর।
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক আলী মিরাজামি বলেন, “আমি নিশ্চিত, আজ হোক কিংবা পরে, এই উদ্ভাবন পুরস্কার পাবেই। প্রশ্নটা হচ্ছে- সেটা কবে?”
গতানুগতিক কৌশলে তৈরি টিকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে দুর্বল অথবা মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এমন টিকার উন্নয়নে এক দশক কিংবা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। অথচ মডার্নার এমআরএনএ টিকা জিন সিকোয়েন্সিংয়ের পর মানবদেহে প্রয়োগ করার অবস্থায় নিতে সময় লেগেছে মাত্র ৬৩ দিন।
এমআরএনএ শরীরের ডিএনএ থেকে কোষে বার্তা পৌঁছে দেয়। তাদের বলে দেয়, এখন নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বিশেষ ধরনের প্রোটিন তৈরি করা দরকার। সেটা হতে পারে হজমে সহায়তা করা কিংবা কোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
বহু বছরের কাজ
এমআরএনএ ১৯৬১ সালে আবিষ্কার হলেও এই কৌশল ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্থিতিশীলতা এবং প্রদাহের মত সমস্যার সমাধান করতে বিজ্ঞানীদের কয়েক দশক কাজ করতে হয়েছে।
‘ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন’ এর সহযোগী অধ্যাপক এবং টিকা তৈরির কোম্পানি ‘অ্যাডাপ্টভ্যাক’ এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অ্যাডাম ফ্রেডেরিক স্যান্ডার বার্টেলসেন বলেন, “এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ পদ্ধতিতে তৈরি টিকা প্রয়োগে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং অত্যন্ত কার্যকর সাড়া মিলছে। তাছাড়া প্রতিবার নতুন টিকা তৈরির জন্য আপনাকে উৎপাদন প্রক্রিয়া বদলাতে হবে না।”
“এই টিকার কাজ করার গতি এবং কার্যকারিতার ফলে অগণিত মানুষ রক্ষা পেয়েছে, তাই এ গবেষণায় পুরস্কারের জন্য আমার সমর্থন থাকবে।”
এমআরএনএ টিকা তৈরির জন্য মূল ভিত্তি রচনা করেছেন ৬৬ বছর বয়সী কারিকো এবং তার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ৬২ বছর বয়সী ওয়েইসম্যান।
মিরাজামি বলেন, “এমআরএনএ টিকার উদ্ভাবন তাদের মাথা থেকেই এসেছে। অবশ্য তাদের বয়স সে তুলনায় কম, কারণ নোবেল কমিটি তো ৮০ বছর না হলে কাউকে নোবেল দিতে চায় না।”
নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করেন ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল। প্রতি বছর চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ, সাহিত্য এবং শান্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পরে অর্থনীতিতেও এ পুরস্কার যুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন