কোভিড টিকার জন্য নোবেল? হয়ত শুধু সময়ের অপেক্ষা

আবার এসেছে অক্টোবর, নোবেল মৌসুম শুরু হতে কয়েক দিন মাত্র বাকি। চিকিৎসার নোবেল এবার কার ভাগ্যে যাচ্ছে, সেই আলোচনায় করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণায় থাকা বিজ্ঞানীদের নামও আসছে, যদিও মহামারীর অবসান এখনও বহু দূর।

>>রয়টার্স
Published : 1 Oct 2021, 04:27 PM
Updated : 1 Oct 2021, 04:33 PM

বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ মনে করছেন, কোভিড টিকার জন্য নোবেল জয় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। আগামী সোমবার চিকিৎসা শাস্ত্রে এবারের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণায় যদি কোভিড টিকার উন্নয়নে গবেষকদের কাজের স্বীকৃতি নাও আসে, আগামীতে তা ঠিকই মিলবে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বিস্তার ঠেকাতে এখনও কঠোর বিধি-নিষেধ মেনে চলছে অনেক দেশ।

তবে কোভিড-১৯ টিকার কারণে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে অনেক ধনী দেশ। আবার অনেক দেশ এখনও পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থাই করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা নতুন করোনাভাইরাস

চিকিৎসায় এবারের নোবেল পুরস্কারের জন্য যাদের নাম আলোচনায় আসছে, তাদের মধ্যে আছেন হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত কাতালিনা কারিকো এবং আমেরিকান ড্রিউ ওয়েইসম্যান। তাদের গবেষণার কল্যাণেই ‘মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক এসিড’ (এমআরএনএ) টিকা তৈরির পথ খুলে গেছে।

মডার্না এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি এমআরএনএ টিকা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈপ্লবিক গতি এনে দিয়েছে। এ টিকা দ্রুত তৈরি করা যায় এবং অত্যন্ত কার্যকর।

সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক আলী মিরাজামি বলেন, “আমি নিশ্চিত, আজ হোক কিংবা পরে, এই উদ্ভাবন পুরস্কার পাবেই। প্রশ্নটা হচ্ছে- সেটা কবে?”

গতানুগতিক কৌশলে তৈরি টিকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে দুর্বল অথবা মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এমন টিকার উন্নয়নে এক দশক কিংবা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। অথচ মডার্নার এমআরএনএ টিকা জিন সিকোয়েন্সিংয়ের পর মানবদেহে প্রয়োগ করার অবস্থায় নিতে সময় লেগেছে মাত্র ৬৩ দিন।

এমআরএনএ শরীরের ডিএনএ থেকে কোষে বার্তা পৌঁছে দেয়। তাদের বলে দেয়, এখন নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বিশেষ ধরনের প্রোটিন তৈরি করা দরকার। সেটা হতে পারে হজমে সহায়তা করা কিংবা কোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

ওই দুই নতুন টিকার ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে তৈরি এমআরএনএ ব্যবহার করা হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের মত ‘স্পাইক’ প্রোটিন তৈরির জন্য কোষগুলোকে নির্দেশনা দেয়। এর এর মধ্য দিয়ে আসল ভাইরাসের মত ‘প্রতিরূপ’ তৈরি না করেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ওই স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তোলা হয়।

বহু বছরের কাজ

এমআরএনএ ১৯৬১ সালে আবিষ্কার হলেও এই কৌশল ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্থিতিশীলতা এবং প্রদাহের মত সমস্যার সমাধান করতে বিজ্ঞানীদের কয়েক দশক কাজ করতে হয়েছে।

এই কৌশল ভবিষ্যতে ক্যান্সার এবং এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে বলে এখন আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

‘ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন’ এর সহযোগী অধ্যাপক এবং টিকা তৈরির কোম্পানি ‘অ্যাডাপ্টভ্যাক’ এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অ্যাডাম ফ্রেডেরিক স্যান্ডার বার্টেলসেন বলেন, “এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ পদ্ধতিতে তৈরি টিকা প্রয়োগে রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং অত্যন্ত কার্যকর সাড়া মিলছে। তাছাড়া প্রতিবার নতুন টিকা তৈরির জন্য আপনাকে উৎপাদন প্রক্রিয়া বদলাতে হবে না।”

“এই টিকার কাজ করার গতি এবং কার্যকারিতার ফলে অগণিত মানুষ রক্ষা পেয়েছে, তাই এ গবেষণায় পুরস্কারের জন্য আমার সমর্থন থাকবে।”

এমআরএনএ টিকা তৈরির জন্য মূল ভিত্তি রচনা করেছেন ৬৬ বছর বয়সী কারিকো এবং তার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ৬২ বছর বয়সী ওয়েইসম্যান।

মিরাজামি বলেন, “এমআরএনএ টিকার উদ্ভাবন তাদের মাথা থেকেই এসেছে। অবশ্য তাদের বয়স সে তুলনায় কম, কারণ নোবেল কমিটি তো ৮০ বছর না হলে কাউকে নোবেল দিতে চায় না।”

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অপ্রয়োজনীয় মাত্রায় উত্তেজিত না করে কীভাবে এমআরএনএ ব্যাবহার করা যায় ‘ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার’ সহকর্মীদের সঙ্গে সেটাই বের করেছেন কারিকো।

নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করেন ডিনামাইটের উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেল। প্রতি বছর চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ, সাহিত্য এবং শান্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পরে অর্থনীতিতেও এ পুরস্কার যুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন