এবার ‘আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের ধরন কেমন হবে, তা চূড়ান্তের পর খুব দ্রুত এটি নিয়ে কাজ শুরুর পরিকল্পনা চলছে।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2021, 07:54 PM
Updated : 14 Sept 2021, 07:54 PM

বঙ্গবন্ধু-১ এর পর দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি হবে একটি ‘আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট’, যা ভূপৃষ্ঠের ছবি তোলার মাধ্যমে দেশের ফসল উৎপাদনের চিত্র, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ বিশাল সমুদ্র অঞ্চল নজরদারিতে সহায়তা করবে।

সরকারের চলতি মেয়াদেই দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড- বিসিএসসিএল এর চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব দ্রুত এ কাজ আমরা করতে চাচ্ছি। জিটুজি (সরকার-টু-সরকার) প্রক্রিয়ায় আমরা এ স্যাটেলাইট কেনা এবং উৎক্ষেপণে চিন্তাভাবনা করছি।”

আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট পৃথিবী পৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলতে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠ নিরীক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয়।

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ একটি ‘জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন’ স্যাটেলাইট, যেটি শুধু যোগাযোগের কাজে লাগছে।

বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ফ্রান্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস-ওয়াটার হাউজ কুপারসের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল।

“পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ঠিক করেছি দ্বিতীয় স্যাটেলাইট হবে ‘আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট’।”

এ স্যাটেলাইট দিয়ে নানা সুবিধা পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি দেশের ফসল উৎপাদনের চিত্র, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ দেশের বিশাল সমুদ্র অঞ্চল নজরদারিতে সহায়তায় করবে।

“দেশের কাজের পাশাপাশি এ স্যাটেলাইট দিয়ে আয় করার সুযোগও থাকছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চল এ স্যাটেলাইটের আওতায় থাকবে বলে সেসব এলাকার নানা তথ্য উপাত্ত বিক্রি করে আয় করা যাবে। কারণ সব দেশের এই স্যাটেলাইট নেই।”  

জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ছাড়াও কমিউনিকেশন, রিমোট সেনসিং, নেভিগেশন, জিওসেনট্রিক অরবিট টাইপ, পোলার স্যাটেলাইটসহ নানা কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্যাটেলাইট রয়েছে।

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ এর সিস্টেমের নকশা তৈরির মূল পরামর্শক ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’। এরপর এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তিতে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনা হয় ফ্রান্সের কোম্পানি তালিস এলিনিয়া স্পেস থেকে।

২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে যাত্রা করে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন

এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ হয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশ।

উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণও সম্পূর্ণভাবে বুঝে পায় বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে যে খরচ হয়েছিল এবার তার চেয়ে কম হবে জানিয়ে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এর গ্রাউন্ড স্টেশনসহ সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা এখন রয়েছে। দ্বিতীয়টি উৎক্ষেপণের পর সেসব খরচ হবে না।”

তিনি বলেন, “এটির জন্য অরবিটাল স্লট ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি উপরে থাকবে না। স্লট ভাড়া নেওয়ার খরচটা বেঁচে যাবে। এটাকে লিইও বা লো আর্থ অরবিট স্যাটেলাইটও বলা হয় (LEO satellite)।”

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে স্থাপিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু-১ এর ঠিকানা হয়েছে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমার একটি অরবিটাল স্লটে। মস্কোভিত্তিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের কাছ থেকে ৪৫ বছরের জন্য ওই স্লট ভাড়া নিয়েছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন