‘ড্রাগন মানবের’ খুলি বদলে দিতে পারে বিবর্তনের ইতিহাস

চীনের উত্তর-পূর্বে হারবিনে জীবাশ্ম হিসেবে সংরক্ষিত অবস্থায় যে খুলিটি পাওয়া গেছে তা কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার বছরের পুরানো মানুষের একটি নতুন প্রজাতির। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের প্রজাতিকে ‘ড্রাগন মানব’ নামকরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2021, 04:46 AM
Updated : 26 June 2021, 04:46 AM

শুক্রবার এই ঘোষণা দিয়ে এর সঙ্গে জড়িত গবেষক দলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন এই আবিষ্কার আমাদের প্রজাতি ‘হমো সেপিয়েন্সের’ উদ্ভব কীভাবে এবং কোথা থেকে হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বর্তমান ধারণা বদলে দিতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুঁজে পাওয়া খুলিটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের, যার একটি বড় মস্তিষ্ক ছিল; ছিল বিশাল আকারের ভ্রুর খাঁজ, গভীর কোটর বিশিষ্ট চোখ এবং কন্দ আকৃতির নাক।

এই খুলিটি চীনের উত্তর-পূর্বে হারবিনে ১৯৩৩ সালে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ৮৫ বছর ধরে এটি লুকানো ছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, জাপানের দখলে থাকার সময় হারবিনে একটি নির্মাণকাজ চলাকালে একজন শ্রমিক খুলিটি খুঁজে পান। এর গুরুত্ব থাকতে পারে- এই বিবেচনায় চীনা শ্রমিকটি জাপানিদের হাত থেকে সেটা রক্ষায় নিজের বাড়ির কূয়ায় লুকিয়ে রাখেন। পরে ওই শ্রমিকের পারিবারিক সূত্রেই সেটা চীনের বিজ্ঞানীদের হাতে আসে।

গবেষকরা নতুন প্রজাতির নাম দিয়েছেন ‘হোমো লোংগি’ এবং ডাক নাম দেওয়া হয়েছে ‘ড্রাগন ম্যান’। চীনের উত্তর-পূর্বে বয়ে চলা ড্রাগন নদীর নামানুসারেই এই নামকরণ করেছেন তারা। সেখানেই খুলিটি পাওয়া গেছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, হোমো লোংগির সঙ্গে নিয়ানডারথালদের সম্পর্ক নেই এবং লোংগিরা বিলুপ্ত প্রজাতি। তবে এরাই সম্ভবত হোমো পেয়েন্সদের সবচেয়ে কাছাকাছি সম্পর্কিত।

তাদের এই দাবি প্রতিষ্ঠিত হলে, হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির উদ্ভব নিয়ে বিজ্ঞানীদের বিদ্যমান ধারণা বদলে যাবে, যা প্রাচীন ডিএনএ ও বছরের পর বছর ধরে খুঁজে পাওয়া জীবাশ্ম বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দ্য ইনোভেশন সাময়িকীতে খুলির বিশ্লেষণ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে।

ওই গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় বিশেষজ্ঞ ও লন্ডন হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার বলেন, “গত ১০ লাখ বছরের যেসব জীবাশ্মের খোঁজ মিলেছে, তার মধ্যে এ পর্যন্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এই খুলি।” 

হোমো লোংগিদের নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ওই জীবাশ্ম বিষয়ে প্রথম বিস্তারিত বিবরণ ও চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

তবে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ হোমো লোংগির ওপর উপসংহার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তারপরও, অনেক বিজ্ঞানীই ধারণা করছেন, নতুন এই আবিষ্কার মানবজাতির পারিবারিক সূত্র পুনর্বিন্যাস এবং কীভাবে আমাদের হোমো সেপিয়েন্সের উদ্ভব হয়েছে তা নির্ণয় করতে সহায়ক ভূমিকাই পালন করবে।

যেসব বিশেষজ্ঞ এখন পর্যন্ত প্রকাশিত গবেষণাগুলোর তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা করেছেন, তারা জানিয়েছেন এটা একটি চমৎকার জীবাশ্ম।

ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের প্যালিওঅ্যানথ্রপোলজিস্ট জন হকস বলেন, “এটা সুন্দর। এ ধরনের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। মুখমণ্ডল এতো ভালো অবস্থায় রয়েছে, যা খুঁজে পাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো।”