সাড়ে ছয়শ কোটি কিলোমিটার দূরের আল্টিমা থুলিতে নাসার মহাকাশযান

সৌরজগতের নবম গ্রহ প্লুটো থেকে দেড়শ কোটি কিলোমিটার দূরে হিমশীতল কুইপার বেল্টের সদস্য আল্টিমা থুলির কাছে সফলভাবে পৌঁছেছে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2019, 10:49 AM
Updated : 2 Jan 2019, 10:49 AM

বর্ষবরণের রাতে সোমবার সাড়ে ছয়শ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে পাঠানো এ যানের বেতার সংকেত স্পেনের মাদ্রিদের একটি বড় এন্টেনায় ধরা পড়ে বলে বিবিসি জানিয়েছে।  

এর মাধ্যমে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এ যান সৌরজগতের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরতম স্থানের কোনো একটি বস্তুর কাছে পৌঁছাল।

কোটি কোটি মাইলের এ যাত্রাপথে নিউ হরাইজন কয়েক গিগাবাইট ছবি তোলার পাশাপাশি অন্যান্য পর্যবেক্ষণ হাজির করে বিজ্ঞানীদের ঝুলিকেও সমৃদ্ধ করেছে।

২০০৬ সালে পাঠানো তুলনামূলক দ্রুতগতির এ মহাকাশ যানের আল্টিমা থুলিতে পৌঁছাতে সময় লাগল প্রায় ১৩ বছর। এর আগে ২০১৫ সালে এটি প্লুটোকে অতিক্রমের সময় অসংখ্য ছবি ও পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছিল।   

নাসার এ যানটির সংকেত পৃথিবীতে আসতে ছয় ঘণ্টা আট মিনিট সময় লেগেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রথম সংকেতে এটি কেবল নিজের অবস্থানের খবর নিশ্চিত করলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মাধ্যমে নিউ হরাইজন যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে সচল করে ছবি তুলেছে ও তার স্মৃতিশক্তি পূর্ণ হয়ে গেছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার পরের দিকে যানটি বেশ কিছু ছবিও পাঠায়। বিজ্ঞানীরা জানান, দূরত্ব এবং তথ্য পাঠানোর গতি সেকেন্ডে মাত্রা এক কিলোবিট হওয়ায় নিউ হরাইজনের পাঠানো সম্পূর্ণ ছবি পেতে বেশ সময় লাগে। 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো এ যানটির কাছে যত ছবি আছে, সব পেতে পেতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর লেগে যেতে পারে, জানিয়েছেন তারা।

নাসা জানিয়েছে, আল্টিমা থুলির সর্বোচ্চ রেজুলেশনের একটি ছবি ফেব্রুয়ারির আগে পাওয়া যাবে না।

যদিও তাতে গবেষণা আটকে থাকবে না, বলছেন মেরিল্যান্ডের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যার গবেষণাগারের প্রধান গবেষক অ্যালান স্টার্ন।

“এই সপ্তাহে হালকা রেজুলেশনের যে ছবিগুলো এসেছে তা থেকেই আল্টিমার মৌলিক ভূতত্ত্ব ও কাঠামো উন্মোচন করা যাবে। আমরা আগামী সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন তৈরি করতে যাচ্ছি,” বলেছেন উৎফুল্ল এ বিজ্ঞানী।

এক যুগেরও বেশি সময় অপেক্ষার পর বর্ষবরণের রাতেই নিউ হরাইজনের এ সংকেত নাসার মেরিল্যান্ড গবেষণাগারে এনে দেয় আনন্দের হিল্লোল।

“আমরা একটি স্বাস্থ্যবান মহাকাশযান পেয়েছি। যার মাধ্যমে আমরা সৌরজগতের দূরতম স্থানে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছি,” বলেন নাসার এ মিশনের পরিচালনা ব্যবস্থাপক অ্যালিস বোমেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুইপার বেল্টে আল্টিমা থুলির মতো অসংখ্য বস্তু রয়েছে। হিমশীতল এ স্থানে থাকা বস্তুগুলো ৪৬০ কোটি বছর আগেও একইরকমই ছিল। এখান থেকে পাওয়া তথ্য সৌরজগতের গঠন ও স্তরবিন্যাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে।

নিউ হরাইজন ২০৩০ সাল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

নাসা যদি এ অভিযানের মেয়াদ বাড়ায় তাহলে এ মহাকাশযানটি আল্টিমা থুলির মতো সৌরজগতের প্রান্তে কুইপার বেল্টে থাকা অন্য একটি বস্তুর কাছেও পৌঁছাতে পারবে বলে আশাবাদ তাদের।