মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত, আইনস্টাইনই ঠিক

স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয় বলে যে তরঙ্গের কথা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন শত বছর আগে তার অপেক্ষবাদ তত্ত্বে ধারণা দিয়েছিলেন- সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে বাস্তবে শনাক্ত করার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মাহমুদ মুরাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 05:49 PM
Updated : 11 Feb 2016, 05:49 PM

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই শনাক্তের ঘোষণা দেওয়া হয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, সূর্যের থেকে প্রায় ৩০ গুণ ভারী দুটি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) শনাক্ত করা হয়েছে।

পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ওই দুটি ব্ল্যাক হোল একে অন্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে একসঙ্গে মিশে যায়।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অভজারভেটরির (এলআইজিও-লাইগো) গবেষকরা এই ঘোষণা দেন।

আলোর মতো গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ তরঙ্গের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পার্থক্য, মহাকর্ষ বিকিরণ আকারে ছড়ায় না, বরং স্থান নিজেই এক্ষেত্রে তরঙ্গায়িত হয়।

কোনো বালতির পানিতে হাত ডুবিয়ে তুললে পানির উপরিতলে যে মৃদু ঢেউ ধীরে ধীরে বালতির গোলাকার দেয়ালের দিকে ছড়িয়ে যায়, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ স্থানের মধ্যে সেরকম মৃদু ঢেউ তৈরি করে তথা স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়।

জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ১৯১৫ সাল তার সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বে এই ধারণা প্রকাশ করেন।

এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ভ্রমণ করতে পারে এমন চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি করেন। লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অভজারভেটরি (এলআইজিও-লাইগো) নামে পরিচিত এই সিস্টেম একটি পরমাণুর ব্যাসের ১০ হাজার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারে।

মহাকর্ষীয় তরঙ্গের প্রভাবে এই লেজার রশ্মিই অতি সামান্যতম বিচ্যুতিও পরিমাপের ব্যবস্থা করা হয় ওই টানেলে।

হিগস-বোসন কণা শনাক্তের পর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের ঘটনা বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাভিটেশনাল ফিজিক্সের অধ্যাপক কারস্টেন ডানসমান।

অধ্যাপক ডানসমান বিবিসিকে বলেন, “এটা প্রথমবারের মতো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত; এটা প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের সরাসরি শনাক্ত করার ঘটনা এবং এটা সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের নিশ্চয়তা। কারণ এই ব্ল্যাক হোলগুলোর বৈশিষ্ট্য শত বছর আগে আইনস্টাইন যেমনটা ধারণা করেছিলেন তার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।”

ব্ল্যাক হোল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চালিয়ে আসা বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের এ ঘটনাকে ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “মহাকর্ষীয় তরঙ্গ মহাবিশ্বকে দেখার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন পথ দেখাবে।”

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার এই ক্ষমতা জ্যোতির্বিদ্যাকে সর্বাত্মতভাবে পরিবর্তন করতে পারে মন্তব্য করে হকিং বলেন, “এই আবিষ্কার বাইনারি সিস্টেম ব্ল্যাক হোলের প্রথম শনাক্ত করার ঘটনা এবং একাধিক ব্ল্যাক হোলের মিশে যাওয়ার প্রথম পর্যবেক্ষণ। ”

শনাক্তকরণ যন্ত্র ‘লাইগো’কে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকরণে এক ধরনের ‘এন্টেনা’ বলে বর্ণনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আরশাদ মোমেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‍“ভূমিকম্প হলে সাইসমোগ্রাফে আমরা যেমন কম্পন নির্ণয় করতে পারি, তেমনি লাইগোর সাহায্যে মহাজাগতিক স্থান-কালে কোনো আলোড়ন বা তরঙ্গ হলে সেটি আমরা সহজে শনাক্ত করতে পারব।”