খুলনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ

খুলনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2022, 04:14 PM
Updated : 21 July 2022, 04:14 PM

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলার উত্তরচক আমিনীয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন।

মাসুদুর রহমান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযোগের মুখে থাকা এস এম বাহারুল ইসলাম কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “ওই অধ্যক্ষ আমাকে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন পড়ে দেখি সেটা ক্রিমিনাল অকারেন্স। তাই তাকে মামলা করতে বলা হয়েছে।”

মাসুদুর রহমানের অভিযোগ, সোমবার মাদ্রাসায় কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তফা আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় ইউনুসুর রহমান, নিয়াজ হোসেন, মাসুদুর রহমান, মিলন হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রিয়াল, আমিরুল, অমিত মণ্ডল, রফিকুল গাজী, সাদিকসহ ১৫-২০ জন লোক তাকে জোর করে ধরে কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।

“এক পর্যায়ে তারা আমাকে ফেলে চোখে, ঘাড়ে, কানে পিঠে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর সেখান থেকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানেও বেদম মারধর করে তারা। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”

জ্ঞান ফিরলে চেয়ারম্যান তাকে মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন বলে মাসুদুর রহমানের অভিযোগ।

তিনি জানান, পরে কয়রা থানার এস আই মনিরুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রী সাবিয়া সুলতানা কয়রা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অধ্যক্ষ মাসুদুর আরও বলেন, তার মাদ্রাসাটি ঢাকার ইসলামিক অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটির আওতাভুক্ত। ৩ মাস আগে গত ১৩ মার্চ কলেজে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছিল।

“তখন চেয়ারম্যান বাহারুল তার নাম প্রস্তাব করার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের জোর করেছিলেন। বাধ্য হয়ে বাহারুলসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। তবে ইউনিভার্সিটি থেকে সেটা রিজেক্ট করে নতুন করে কমিটি দিতে বলা হয়েছিল।”

পরে তিনি মহারাজপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে আরেকটি কমিটি জমা দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়।

এরপর থেকেই চেয়ারম্যান বাহারুল বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বলে মাসুদুরের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল বলেন, “এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন মোস্তফা আব্দুল মালেক। অবসরে যাওয়ার পরে তিনি মাদ্রাসার সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সভাপতি না হতে পেরে, আমাকে সভাপতি করতে চান।”

বাহারুল আরও বলেন, “সেখানে অধিকাংশ শিক্ষকরা ক্লাস ঠিকমতো না করে ঘুরে বেড়ান। তারা দেখলেন, আমি যদি সভাপতি হই তবে সমস্যা, আমি নিয়ম কড়াকড়ি করি। সেজন্য তারা মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে আমার ইউনিয়নে মাদ্রাসার সভাপতি বানিয়েছেন।”

সেদিনের মারধরের অঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “নিজেদের লোকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঠেলাঠেলি হয়েছিল। পরে তারা অধ্যক্ষকে আমার কার্যালয়ে এনেছিলেন। তখন আমি তার স্ত্রীকে খবর দিই। এরপর তারা তাকে নিয়ে যায়।”

এটা আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করব বলেনতিনি জানান।

মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কয়রা থানার ওসি এবিএমএস দোহা বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম। তবে অধ্যক্ষ থানায় কোনো এজাহার জমা দেননি।”

খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ঘটনাটি জানার পর কয়রা থানাকে মামলা নিতে বলেছি।