মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা দেওয়ার পর মরল ১৪০০ হাঁস

টাঙ্গাইলের বাসাইলে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে দেওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা দেওয়ার পর এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার প্রায় দেড় হাজার হাঁস মারা গেছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 01:58 PM
Updated : 6 July 2022, 01:58 PM

গত ৮ জুন থেকে কয়েকদিনের মধ্যে রিপন সিকদার নামের এই উদ্যোক্তার হাঁসগুলো মারা যায় বলে তিনি জানান।

রিপন সিকদার বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ময়থা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রিপন সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় এক বছর আগে বেকার অবস্থায় থাকা তিনি ৪২ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে ঘর তৈরি করে হাঁসের খামার করেন। প্রথম অবস্থায় তিনি এক হাজার হাঁস নিয়ে খামার শুরু করেন। প্রথমে তার বেশ কিছু টাকা লাভ হয়। এরপর দ্বিতীয়বারে তিনি নাগেশ্বরী জাতের ডিমের জন্য ১৭৩০টি হাঁসের বাচ্চা ও মাংসের জন্য বেলজিয়াম জাতের ৭০টিসহ মোট ১৮০০ হাঁসের বাচ্চা খামারে তোলেন।

তিনি বলেন, বাচ্চাগুলোর বয়স এক মাস হলে রিপন গত ৫ জুন বাসাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিনের (টিকা) দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) জাহিরুল ইসলামের কাছে ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিনের জন্য যান।

রিপন জানান, ওই সময় জাহিরুল ইসলাম তাকে ১৯টি ভ্যাকসিনের বোতল দেন। এরপর ৭ জুন রিপন হাঁসগুলোকে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। ভ্যাকসিন প্রয়োগের একদিন পর থেকে হাঁসগুলো মারা যেতে থাকে। ক্রমেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েকদিনের ভেতরে প্রায় ১৪০০ হাঁসের মৃত্যু হয়।

“ওই সময় ভ্যাকসিনের বোতল চেক করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ২০ মে ভ্যাকসিনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।”

রিপনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাসকিন আনার পর প্রায় ১৭০০ হাঁসকে প্রয়োগ করা হয়। আর বাকি হাঁসগুলোকে অন্য একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

মৃত হাঁসগুলোকে গর্ত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়

“প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেদিন থেকে হাঁস মারা যাওয়া শুরু হয়। একদিনেই প্রায় ৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়। এভাবে বাড়িতে প্রায় ১৪০০ হাঁস মারা যায়। এরপর বাকি প্রায় ৪০০ হাঁসকে বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেও হাঁস মারা যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে খামার করেছিলাম। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম।”

রিপন বলেন, “জাহিরুল ইসলামের ভুলের কারণে আামার প্রায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার পর আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গেলে জাহিরুল ইসলাম বলেন, তার ভুল হয়েছে।”

ঋণ নিয়ে হাঁসের খামারটি করেছেন জানিয়ে রিপন বলেন, “এই ক্ষতি পোষানোর মতো আমার ক্ষমতা নেই। তাই আমি ক্ষতিপূরণ চাচ্ছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেব।”

স্থানীয় বাসিন্দা শামছুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “রিপন ঋণ করে এই খামারটি করেছিল। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তার ভুলের কারণে রিপনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ওই কর্মকর্তার শাস্তির পাশাপাশি রিপনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন সরকার জামাল বলেন, “একজন কর্মকর্তার ভুলে রিপনের ১৪০০ থেকে ১৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। তার অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। এলাকাবাসী হিসেবে রিপনের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) জাহিরুল ইসলাস বলেন, “রিপন নামের ওই ছেলেটা আমার কাছে গত ৬ জুন এসেছিল। পরে তাকে ২০টি ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কয়েকটি হাঁস মারা যাওয়ার পর রিপন আমার কাছে এসে ১০টি ভ্যাকসিন ফেরত দিয়ে গেছে। পরে চেক করে দেখি ২০ মে ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।”

তাদের অফিসে থাকা বাকিগুলো ভ্যাকসিনগুলো ফেলে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “রিপন হঠাৎ করে আবার এসে বলতেছে তার ১৪০০ হাঁস মারা গেছে। ভ্যাকসিনের মেয়াদ না থাকলেও উপকার না হতে পারে, তবে কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে এতগুলো ভ্যাকসিনের মধ্যে থেকে তাকে দেওয়ার সময় আমি মেয়াদটি খেয়াল করিনি।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি। এখানে এসেই হাঁসগুলোর মৃত্যুর ঘটনাটি জেনেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন বিতরণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভুক্তভোগীকে প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রানা মিয়া বলেন, “এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”