‘ঈদ মৌসুমে এত কম সময়ে আসা যাবে, ভাবতেই পারিনি’

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শহর থেকে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। রাজধানী থেকে কুমিল্লায় নির্বিঘ্নেই ফিরছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। 

কুমিল্লা প্রতিনিধিআবদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 05:22 AM
Updated : 6 July 2022, 07:01 AM

ঢাকা থেকে বাসে করে মঙ্গলবার কুমিল্লায় আসেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “সকালে রওনা দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় কুমিল্লা এসেছি। ঈদ মৌসুমে এত কম সময়ে আসা যাবে, ভাবতেই পারিনি। কোথাও যানজট নেই। তবে কুমিল্লায় প্রবেশের আগে টোল প্লাজাসহ কিছু স্থানে ধীরগতি আছে।”

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। মঙ্গলবার সরেজমিনে বেশিরভাগ এলাকা ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত দেশের ব্যস্ততম এ মহাসড়কে স্বস্তির ঈদযাত্রার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় খুশি চালক ও যাত্রীরা।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “গত ঈদুল ফিতরে অনেক শঙ্কা থাকার পরও শেষ পর্যন্ত মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে। এবারও শেষ পর্যন্ত মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।

এ ছাড়া মহাসড়ক চাঁদাবাজমুক্ত, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশ বদ্ধপরিকর। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

কুমিল্লা সদর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের এক বছর মেয়াদি চার লেনের পরীক্ষামূলক সংস্কারকাজ গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সংস্কারকাজটি পুরোদমে শুরু হয়।

এক লেন বন্ধ করে সংস্কারকাজ করার কারণে গত প্রায় ছয় মাস ধরে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান বর্ষা মৌসুমেও মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সংস্কারকাজ চলছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় মহাসড়কের পাশে বাজার বসায় এবারের ঈদযাত্রায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় ছিল চালক ও যাত্রীরা। তবে এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ ও সওজ বিভাগের তৎপরতায় এ শঙ্কা কেটে গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “টোলপ্লাজার হিসাবে সোমবারই প্রায় চার হাজার গাড়ির বেশি চলেছে মহাসড়কে। কিন্তু এরপরও কোথাও সমস্যা হয়নি। মঙ্গলবার থেকে মহাসড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ রেখেছে সওজ বিভাগ।”

বর্তমানে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের কোথাও কোনো ধরনের খানাখন্দ নেই। ফলে মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে বলে পুলিশ সুপারের ভাষ্য।

তিনি আরও বলেন, “মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে আমাদের পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় মঙ্গলবার থেকে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কাজ করছে হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশের ৬০ জন সদস্য। তারা বিভিন্ন বাজারে দায়িত্ব পালন করছেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের এলাকা।”

“ঈদযাত্রায় আমরা প্রতিটি স্থানে তৎপর রয়েছি। এরই মধ্যে মহাসড়কে আমাদের ৫৮টি ভ্রাম্যমাণ টহল দল ও ১৫টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ শুরু করেছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১টি রেকার টিম এবং পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স। কোথাও কোনো গাড়ি বিকল হলে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে দ্রুত সেটি অপসারণ করা হবে। আশা করছি, আমরা যে কোনো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পারবো।”

কুমিল্লা-ঢাকা রুটের তিশা পরিবহনের বাসচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, “ঢাকা থেকে ফেরার সময় নারায়ণগঞ্জের মেঘনা টোলপ্লাজায় একটু ধীরগতি আছে। তবে কুমিল্লা অংশে পুরো মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় আমরাও খুশি, যাত্রীরাও খুশি।”

মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, “মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা থেকে চৌদ্দগ্রাম এসেছি। মহাসড়কের সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রামের কোনো অংশে যানজট নেই। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আমরা আশাবাদী, মানুষ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারবে।”