স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, অর্থ্যাৎ ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে তিন জন। এ ছাড়া পেটের পীড়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ, জ্বর, মাথাব্যথাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
জেলা সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া বলেন, “জেলায় গত এক মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৫৩৭ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৪৭৩ জন। ৪৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।“
এ সময় হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়। পানি নামার পর মানুষ বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরলেও ডায়রিয়াসহ নানা রোগের কবলে পড়ে।
কলমাকান্দা উপজেলার পাগলা এলাকার মধ্যবয়সী কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, “বন্যার পরে অহন পানি নামতাছে। অসুখ-বিসুখ অইতাছে। আমরার ঘরে দুই পোলাপানসহ বউয়ের জ্বর, চুলকানি অইছে।”
হাওর অধ্যুষিত উপজেলা খালিয়াজুরীর সরকারহাটি গ্রামের বাসিন্দা টুকটুকি সরকার (৩২) বলেন, “পাতলা পায়খানা অইতাছিল। পরে সরকারি ওষুধ পাইছি। ডাক্তারও দেহাইতাম পারছি। অহন ভালাই আছি।”
একই কথা জানান উপজেলা সদরের পুরাণহাটির বাসিন্দা জুলেখা আক্তার (৫৫) ও কাদিরপুরের সরস্বতী রাণী দাসও (৬০)। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচদিন ভোগার পর তারা এখন সুস্থ।
বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছেন উপজেলার আদমপুর গ্রামের যুবক সাগর সরকার। তিনি বলেন, “বানের পানিতে হাতে পাওয়ে চর্মরোগ অইছিলো। অহন কিছুটা ভাল অইছি।”
জেলা সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া জানান, জেলা স্বাস্থ্যবিভাগে দুই লাখ ৫২ হাজার (খাবার স্যালাইন) ওআরএস স্যালাইন, ১০০০ এমএলের এক হাজার ৪৯৮ ব্যাগ, ৫০০ এমএলের তিন হাজার ১৭৬ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন মজুদ রয়েছে। তাছাড়া ৬৮ হাজার ৯০০ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সাপের বিষ প্রতিরোধক ৩৭০ ভায়েল ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রয়েছে।
“বন্যা দুর্গত এলাকায় পানি নামার সময়ে রোগবালাই বেশি হয়। বর্তমান সময়টাতেই বেশি চ্যালেঞ্জ। জেলার দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিমের সদস্যরা রাত-দিন কাজ করছে। তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ দিচ্ছেন।”
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ও দুর্গত এলাকার বানভাসি মানুষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ জুন রাতে হানা দেওয়া বানের পানিতে নেত্রকোণার ১০ উপজেলার ৭৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন মানুষ ।
খোলা হয় ৩৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে আশ্রয় নেন প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দেয় খাদ্য সংকট, অভাব দেখা দেয় গোখাদ্যের ।
এরমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৯৮ মেট্রিক টন জিআর চাল, শিশু ও গোখাদ্যসহ নগদ এক কোটি ৩ লাখ টাকা, সাত হাজার ১১৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রশাসক প্রশান্ত রায় জানান, সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে মুড়ি, চিড়া, চিনি, বিস্কুট, স্যালাইনসহ শুকনো খাবার, এক হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, দুধ, সেমাইয়ের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বন্যায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। বন্যার শুরু থেকেই ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছ। বন্যার্তদের সার্বিক দেখভাল করছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: