লোড শেডিংয়ে নাকাল রংপুরের জনজীবন

অসহনীয় লোড শেডিংয়ের কবলে পড়ে রংপুরসহ বিভাগের জেলাগুলোতে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিরংপুর ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 06:04 PM
Updated : 5 July 2022, 06:04 PM

জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোড শেডিং করতে হচ্ছে বলে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, লোড শেডিং কখনও কখনও তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ কারণে ঈদকে সামনে রেখে বেচাকেনার ভরা মৌসুমেও শপিং মল ও বিভিন্ন দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, মঙ্গলবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আপেক্ষি আর্দ্রতা ৬২% রেকর্ড হয়েছে।

গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রন্ত হয়ে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাবেদ জানান, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা বলেন, রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে তিন দিন ধরে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে রংপুর নগরীতে আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না।

নগরীর কাচারী বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আইকিউ কম্পিউটারের মালিক লতিফুল বারী রতন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরর ডটকমকে বলেন, বিদ্যুৎ যায়, কিন্তু কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না। আমাদের তো ব্যবসা কম্পিউটার কম্পোজ করা। এই দিয়ে চলে আমার সংসার । কিন্তু বিদ্যুৎতের যে অবস্থা তাতে করে আদাঘণ্টা কাজ করতে পারি না। প্রচণ্ড গরম আর লোড শেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যন্ত।

জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন বলেন, লোড শেডিং আর প্রচন্ড গরমে মার্কেটে বেচাকেনা নেই। কয়েক দিন পর ঈদ। এখন বেচাকেনার ধুম পড়ার কথা, কিন্তু ক্রেতা নেই।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মোমবাতি জালিয়ে ব্যবসা করছেন। 

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মেঘনা ইলেকটনিস-এর মালিক নয়ন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই দেখতেছেন তো আমাদের কী অবস্থা। বিদ্যুতের কারণে আজ মোমবাতি জ্বালিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।” 

একই কথা বলেন সাদিয়া ইলেকট্রনিস-এর মালিক আব্দুস সালাম।

নগরীরর মুন্সিপাড়ার আফরোজা বেগম বলেন, “ভাই আমার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা ঈদের পরে; কিন্তু বিদ্যুদের কারণে মেয়ে পড়াশুনা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ আসলে ঠিকমত এক ঘণ্টা থাকে না। 

ধাপ এলাকার গৃহবধূ কোহিনুর আক্তার কেয়া বলেন, “সরকার বলছে বিদ্যুতের সংকট নেই; তাহলে কেন এত লোড শেডিং?”

সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রংপুর বিভাগে নেসকো আর পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, দিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট।

এ অবস্থা সাময়িক দাবি করে নেসকোর ওই প্রকৌশলী আরও বলেন, “আশা করি দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

গাইবান্ধায় লোড শেডিংয়ে জনগণের দুর্ভোগ

গাইবান্ধায় দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কয়েকদিন ধরে জেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় এ অবস্থা চলছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েছে।

নেসকোর আওতাধীন গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২ কার্যালয় থেকে জানা যায়, দুই বিভাগের আওতায় প্রায় ৬৫ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। ২৫ লক্ষাধিক লোক অধ্যুষিত গাইবান্ধা জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। আগে দৈনিক সরবরাহ হতো ১৩০-১৪০ মেগাওয়াট। গত ২ জুলাই থেকে দৈনিক মাত্র ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। তাই আগে তেমন একটা লোড শেডিং হতো না। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক ছয়-সাতঘণ্টা লোড শেডিং চলছে।

ঘন ঘন লোড শেডিংয়ে সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জেলা শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোড শেডিং বেশি।

গাইবান্ধা শহরের পৌর মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মো. সামসুজোহা বলেন, কদিন পরই ঈদ। এ সময় ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। এখন দৈনিক আট-নয় ঘণ্টা লোড শেডিং হচ্ছে। এ কারণে বেচাকেনা ব্যাহত হচ্ছে।

শহরের ডিবি রোডের ওষুধ বিক্রেতা রনি মিয়া বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসার কারণে ফ্রিজজাত ওষুধ নষ্ট হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে দিনের প্রায় অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না।

গাইবান্ধার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে চাকরিজীবীদের বেতন বোনাস ও ব্যবসায়ীদের টাকা লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে।

শহরের সুখনগরের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন জানান, “এখন প্রচণ্ড গরম। পড়তে বসলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন বিদ্যুতের জন্য বসে থাকতে হয়। গরমের মধ্যে মোমবাতি দিয়ে পড়াশোনা করা যায় না। এছাড়া মোমবাতির দামও বেড়ে গেছে।”

শহরের নুর কর্নারের মালিক নুর মোহাম্মদ বলেন, “প্রতি ডজন মোমবাতির দাম ৩০-৩২ টাকা বেড়েছে। তারপরও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।”

গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, “গ্যাস ও জ্বালানি স্বল্পতার কারণে যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। তাই লোড শেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”

গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, গত শনিবার থেকে এ সমস্যা হচ্ছে।