খামারের পশু কেজি দরে বিক্রির চাহিদা বাড়ছে

বরিশালে খামারের কোরবানির গরু কেজি দরে বিক্রির জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আকারভেদে কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫৬০ টাকার মধ্যে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।

বরিশাল প্রতিনিধিসাইদ মেমন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 10:49 AM
Updated : 5 July 2022, 10:49 AM

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম জানান, বর্তমানে খামার থেকে গরু কেনায় আগ্রহ বেড়েছে। ঝামেলা ছাড়াই কিনতে পারে বলে ক্রেতারা খামারমুখী হয়েছেন।

জেলায় ৮০ হাজার ১৩টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় খামারটি বাবুগঞ্জ উপজেলার রামপট্টি গ্রামের এমএপি এগ্রো। সেখানে কেজি পরিমাপ করে পশু বিক্রি করা হয়।

নুরুল আলম বলেন, “কেজি পরিমাপ করে বিক্রির সুবিধা রয়েছে। এতে ক্রেতাদের প্রতারিত বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”

এমএপি এগ্রো খামারের ইনচার্জ রাফিউর রহমান অমি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লাইভ ওয়েটের মাধ্যমে তাদের খামারের গরু বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতা গরু পছন্দের পর স্কেলে পরিমাপ করা হয়। সেখানে যে ওজন আসে সেই ওজনের প্রতি কেজি দর হিসেবে দাম রাখা হয়।

এতে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কেজি দরে বিক্রি করায় কারো প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। ক্রেতাদের চাহিদার কারণে এরই মধ্যে খামারের ১৮৫টি ষাঁড়ের সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।”

“খামারের ৩০০ কেজির নিচে ওজনের গরুর প্রতি কেজি ৪২০ টাকা, ৪০০ কেজির নিচে ৪৪০ টাকা, ৫০০ কেজির নিচে ৪৬০ টাকা ও ৬০০ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ টাকায় এসব গরু বিক্রি করা হয়েছে।”

দুই বছর আগে খামারটি শুরু হয়েছে জানিয়ে অমি বলেন, তাদের খামারে হরিয়ানা, শাহীওয়াল, হাশা, দেশাল ও বুট্টি জাতের গরু ছিলো। এসব গরু কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও মেহেরপুর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এসব পশুকে শতভাগ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে দাবি করে খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম চাকলাদার বলেন, বরিশালবাসীকে অর্গানিক খাবার খাওয়ানোর লক্ষ্যেই খামারটি করা হয়েছে। এখানে কোনো গরুকে ফিড খাওয়ানো হয়নি বা ইনজেকশন দেওয়া হয়নি।

ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় আগামীতে আরও ব্যাপক পরিসরে গরু পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ইউটিউবে ও ফেইসবুকে প্রচারে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি সেই পরিমাণ গরু সরবরাহ করতে পারিনি।”

আগামী বছর বরিশালবাসীর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কেজি দরে কোরবানির পশু বিক্রি করে নগরীর আরেক খামার কেমিস্ট এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড।

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর গড়িয়ার পাড় রেইনট্রি তলা এলাকায় অবস্থিত খামারটির ইনচার্জ মোর্শেদ আজমল সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের খামারের ১০ প্রজাতির ২০০ গরু ছিলো। যেগুলোর ওজন ২০০ থেকে ৭০০ কেজির মধ্যে। এরই মধ্যে দেড়শ গরু বিক্রি হয়েছে।

সুজন বলেন, “প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা দামে গরু বিক্রি হয়েছে।”

“কেজি দরে বিক্রি করায় ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ বেশি হয়েছে। কারণ এতে ক্রেতা প্রতারিত হওয়ার ভয় নেই।”

এসব খামারিরা জানান, তাদের কাছ থেকে গরু কিনে রেখে যেতে পারে ক্রেতা। পরে ক্রেতার সময় অনুযায়ী তার ঠিকানায় গরু পৌঁছে দেওয়া হয়। গরুর খাবার ও পৌঁছানোর খরচ তাদের প্রতিষ্ঠান বহন করে।

বরিশালে এবারও স্থানীয় গবাদি পশুর মাধ্যমেই কোরবানির চাহিদা মিটবে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বরিশাল জেলায় এক লাখ আট হাজার ১১৮টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে চাহিদা এক লাখ সাত হাজার ৪২৩টি পশুর। ফলে ৬৯৫টি পশু উদ্বৃত্ত থাকছে। তার মতে, এখান থেকে অন্য জেলায় কিছু পশু যাবে। অন্য জেলা থেকেও পশু আসবে।

তিনি আরও বলেন, কোরবানিতে তাদের ৩০টি টিম থাকবে জেলার বিভিন্ন হাটে তদারকিতে। তারা রোগাক্রান্ত পশু দেখলে সেই গরুর বিক্রি বন্ধ করে দেবেন। এ ছাড়া নগরীতে একটি ভ্রাম্যমাণ টিম থাকবে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪২টি উপজেলায় এবার প্রায় চার লাখ ৬২ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার রয়েছে। প্রায় চার লাখ ৭০ হাজারটি বিভিন্ন ধরনের প্রাণি প্রস্তুত রয়েছে বিভিন্ন খামার পর্যায়ে। এর বাইরে গৃহস্থ পর্যায়ে কোরবানির জন্য আরও লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।