পদ্মা সেতুর পর যাত্রী হারিয়েছে খুলনার ট্রেন, নেই ‘ঈদ স্পেশাল’

পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীতে যাওয়া-আসায় খুলনার মানুষের আগ্রহ এখন সড়কে। যাত্রীও কমেছে খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেনগুলোতে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 05:25 AM
Updated : 5 July 2022, 05:25 AM

পদ্মা সেতু চালুর আগে খুলনা থেকে বাসে ঢাকায় যেতে দীর্ঘ সময় লাগত; ফেরি-লঞ্চ পারাপারেও পোহাতে হতো চরম দুর্ভোগ। পদ্মা সেতু চালুর পর সেই দুর্ভোগ কমায় আসন্ন কোরবানি ঈদে ঢাকা থেকে খুলনাগামী বেশিরভাগ লোকজন সেতু দিয়ে বাসে আসবে বলে ধারণা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। সে কারণে এবারের ঈদে খুলনা-ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে খুলনা থেকে বাসে ঢাকায় যেতে লাগত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ফেরি অথবা লঞ্চ পারাপারেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এ কারণে অনেকে ভোগান্তি এড়াতে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। তবে এতেও সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।

তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-ঢাকা যাতায়াতে এখন সময় লাগছে মাত্র ৪ ঘণ্টা। এ কারণে বেশিরভাগ যাত্রীই বাসে আসা-যাওয়া করছেন। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেছে। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়ীদের সুবিধা বাড়বে।”

খুলনা রেলস্টেশনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শামীমুর রহমান জানান, খুলনা থেকে সকালে রাজধানীর উদ্দেশে চিত্রা ও রাতে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। চিত্রায় খুলনা থেকে আসন রয়েছে ১৮৫টি; পদ্মা সেতু চালুর আগে এ ট্রেনটির কোনো আসনই ফাঁকা থাকত না। এখন ৭০-৮০টি আসন ফাঁকা থাকছে। যাত্রীও কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। যদিও সুন্দরবন এক্সপ্রেসের সবগুলো আসনই পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “প্রতিবারই ঈদে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। এ কারণে প্রতিবছর দুই ঈদে চিত্রা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেসের পাশাপাশি একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা হত। তবে এবার বেশিরভাগ মানুষ পদ্মা সেতু হয়ে খুলনায় যাতায়াত করবে। এ কারণে কোনো ঈদস্পেশাল ট্রেন দিচ্ছে না রেলকর্তৃপক্ষ।”

এদিকে পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন পরিবহন। যাত্রী বাড়ায় নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি এই রুটে বিলাসবহুল বাস চালু করেছে।

খুলনা রয়্যাল মোড় কাউন্টারের টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের ম্যানেজার শহীদুল হক রাসেল বলেন, “দিনের পর দিন খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে মাওয়া ও আরিচা ঘাট পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের। পদ্মা সেতু চালুর পর প্রতিদিনই বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যা। আর আমরাও নতুন নতুন বাস নামাচ্ছি।

“আগে আমাদের ঢাকা-খুলনা টিকেটের দাম ছিল ৫৫০ টাকা। এখন গাড়ির মেইনটেইনস খরচ বাড়ায় ৬০০ টাকা নিতে হচ্ছে।”

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুলনা-ঢাকা রুটে গ্রীন লাইন পরিবহনের যাত্রী তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে জানিয়ে রয়্যাল মোড়ের কাউন্টারের বুকিং সহকারী রিপন হোসেন বলেন, “এখন যেসব যাত্রী আসছেন তাদের ৯৯ শতাংশই পদ্মা পাড়ি দেয়ার টিকেট চাচ্ছেন।”

খুলনার হাবিব এগ্রো জুট ব্যাগ কোম্পানির চেয়ারম্যান আহসান হাবীব বলেন, “ব্যবসার কাজে আমাকে খুলনা-ঢাকা আসা-যাওয়া করতে হয় অনেক বেশি। মাওয়া এবং আরিচা ঘাট পার হতে অনেক সময় যেত এবং দুর্ভোগ পোহাতে হতো।”

“এখন আমাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে যাতায়াতে সময় লাগছে অনেক কম। ভোগান্তিও কমেছে।” যোগ করেন হাবীব।

খুলনার খালিশপুরের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবায়েত হোসেন রুমি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে যাতায়াতে সময় কম লাগছে। ফলে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি এসে স্কুল শিক্ষার্থী বোনের লেখাপড়া দেখভালের পাশাপাশি বাবার ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতে পারছেন তিনি।

খুলনা রেলস্টেশনে পর্যাপ্ত যাত্রীসেবা নেই; ট্রেনের টিকেট পেতেও অনেক ভোগান্তি হয় বলে খুলনা শহরের বয়রা এলাকার সাদিয়া ইসলামের অভিযোগ।

তিনি বলেন, “লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পেতে দেরি হয়। খুলনা-ঢাকা টিকেট তো এক সপ্তাহ আগেও পাওয়া যায় না। টিকেট মেলে কালোবাজারে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন বাসে অল্প সময়ে ঢাকা-খুলনায় পৌঁছানো এবং সেতুতে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।“