ফুলবাড়ী সীমান্তে নদীতে নিখোঁজ ২ শিশুর লাশ পেল বিএসএফ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফেরার সময় পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী – বিএসএফ।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 06:48 PM
Updated : 3 July 2022, 06:48 PM

বিজিবি জানিয়েছে, রোববার দুপুরে জিরোলাইনে ভারতীয় অংশে নীলকমল নদী থেকে সাকিবুর (৫) ও পারভীনের (৯) মরদেহ উদ্ধার করেছে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।

শুক্রবার রাতে মায়ের সঙ্গে নীলকমল নদী সাঁতরে বাংলাদেশে ফেরার সময় বিএসএফের ধাওয়ায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় এই দুই শিশু।

লালমনিহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার কবির হোসেন বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে না পাড়ায় বিএসএফ নীলকমল নদী থেকে শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। সেই সাথে সীমান্তে শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে ২৪ ঘণ্টা বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, রোবববার সকালে সীমান্তে মেইন পিলার নম্বর ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এসের পাশে দুই দেশের কোম্পানি পর্যায়ে এক সৌজন্যমূলক পতাকা বৈঠক হয়েছে। এ সময় বিজিবির ৬ সদস্যের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোম্পানি কমান্ডার কমির হোসেন ও ভারতীয় ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১ ক্যাম্পের ৬ সদস্যের বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোম্পানি কমান্ডার এস এইচ শংকর কুমার এসি।

“তবে লাশ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শান্তি রক্ষা, অবৈধ পাচার প্রতিরোধ এবং চোরাচালান বন্ধে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে এক সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।”

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল হক জানান, রোববার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নম্বর ৯৪৩ এর পাশ থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ ভারতের ভিতরে নীলকমল নদীতে স্থানীয়রা শিশুর দুইটির মরদেহ ভাসতে দেখে।

খবর পেয়ে ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে নীলকমল নদী থেকে শিশুর দুইটির মরদেহ উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যায়।

নিহত শিশু দুটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও সামিনা বেগম (৩৫) দম্পতির সন্তান। 

তিনি আরও জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে রহিচ উদ্দিন ও সামিনা বেগম কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের একটি ইটভাটায় যান। সেখানেই তাদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও শিশু দুটির জন্ম ভারতে হওয়ায় তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর না করে শিশু দুটির মরদেহ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।

আজিজুল হক তার ভাই রহিচ উদ্দিনের বরাতে আরও বলেন, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইটভাটায় কাজ শেষে দুই দেশের দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সস্তানসহ কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউটি-১ সীমান্তে এলাকায় আসেন রহিচ উদ্দিন। এ সময় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীলকমল নদীর পাড়ে নোম্যান্স ল্যান্ড এনে দাঁড় করিয়ে রেখে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসতে বলে।

“ভারতীয় সেউটি-১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের মধ্যে হাতের বাঁধন খুলে ডুবে যায় দুই শিশু।”

রহিচ উদ্দিন জানান, পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য দুই দেশের দালালদের সঙ্গে প্রথমে ভাতীয় ২২ হাজার রুপি চুক্তি হলেও পরে দুই দেশের দালালরা ভারতীয় ৪০ হাজার রুপি নিয়েছে।

“তারা আমাদের সীমান্তে এনে অন্য ২০/২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর সাথে একটি বাড়িতে রাখে। শুক্রবার গভীর রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে তারা আমাদের নদীর পাড়ে নিয়ে এলেও ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম, নয়ন মিয়া ও ময়না মিয়া আরও বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।”

রহিচ উদ্দিন বলেন, “নীলকমল নদীর পাড়ে কিছুক্ষণ পর ভারতীয় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দালালরা নদী পার হতে বলে। আমি ব্যাগ নিয়ে সাঁতার দেই; আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করে। কিন্তু অন্ধকারে তীব্র স্রোতের বেগে স্ত্রীর হাত থেকে সন্তানরা নিখোঁজ হয়। এরপর পানিতে ডুবে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাইনি।”

তিনি তার দুই শিশুর মরদেহ ফেরত পেতে চান বলে জানান।