হাটে যেতে প্রস্তুত রাজা, ভিক্টর, সম্রাট

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পশুর যত্ন নিতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন রাজবাড়ীর খামারিরা। প্রস্তুত করেছে রাজবাড়ীর রাজা, ভিক্টর, সম্রাট, রাজাবাবুসহ বিভিন্ন নামে ২৭ থেকে ৩৫ মণ ওজনের গরু। বাহারি এসব নামে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন খামারিরা।

রাজবাড়ী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2022, 05:54 AM
Updated : 2 July 2022, 05:54 AM

এসব গরু প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পরামর্শে সম্পূর্ন প্রাকৃতিক খাবারে পালন করা হয়েছে বলে রাজবাড়ী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক সরদার জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফজলুল বলেন, “জেলায় মোট ৮ হাজার ২৯৫টি গরুর খামার রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ১০টি গরুর, ৩ হাজার ২০৫টি ছাগল, ৬০টি ভেড়া এবং ২০টি মহিষের খামার রয়েছে। জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য ৩৬ হাজার ৫৭৭টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড় দোয়াল গ্রামে কোরবানির জন্য ৩৫ মণ ওজনের একটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন হাজী সাইদুর রহমান রানা নামের এক খামারি। শেষ সময়ে ষাঁড়টির যত্ন নিতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন তিনি। লম্বায় ৮ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা ৫ ফুট ৩৩ ইঞ্চি ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘রাজবাড়ীর রাজা’। সাদা-কালো রঙের বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিনই খামারটিতে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

আরএস এগ্রো ফামর্স এর মালিক রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাঁচ বছর আগে গরু কিনে বাড়িতে লালন-পালন শুরু করেন। দুই বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে পশু খামার শুরু করেন। চারটা গরু দিয়ে শুরু করা খামারে এখন গরু আছে পঞ্চাশটি। এর মধ্যে সব থেকে বড় হল রাজবাড়ীর রাজা। রাজার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রয়েছে ধান ও গমের গুঁড়া, ভুসি, খড়, ঘাসের মিশ্রণ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন খাবার। কোরবানি সামনে রেখে রাজার দাম চেয়েছেন ১০ লাখ টাকা।

উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের কৃষক ইউনুছ শেখ ও তার স্ত্রী বুলু বেগম কোরবানির জন্য ‘ভিক্টর’ নামের একটি গরু প্রস্তুত করেছেন। ইউনুছ জানান, দুই বছর আগে ফরিদপুর সদর উপজেলার পরমান্দপুর গোহাট থেকে ৮৭ হাজার টাকা দিয়ে গরুটিকে কিনে আনেন তিনি; আদর করে নাম রাখেন ভিক্টর। ৩০ মণ ওজনের ভিক্টরকে ভুট্টা, ছোলা, খেসারি, গমের ভূষি, খড় ও তাজা ঘাসসহ বিভিন্ন ফল খাওয়ানো হয়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভিক্টরের দাম হাঁকাচ্ছেন ১২ লাখ টাকা।

এদিকে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের পশ্চিম উজানচর মৃধাডাঙ্গা গ্রামের খামারি ফজলু মণ্ডল ৫ ফুট উচ্চতা ও ১০ফুট লম্বা সাদা কালো রঙের একটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। ‘রাজবাড়ীর রাজাবাবু’ নামের গরুটির ওজন ৩৫ মণ।

ফজলু বলেন, ২০১৮ সাল থেকে গরুটি লালন করছেন তিনি। গম, ভুসি, ভাত, ছোলা, চিরা, খৈল ও ঘাস খাইয়ে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছেন তিনি। ভালোবেসে নাম দিয়েছেন রাজবাড়ীর রাজাবাবু। কোরবানিকে সামনে রেখে তিনি গরুটি বিক্রি করতে চান ১২ লাখ টাকায়।

অপরদিকে কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নে জয়রামপুর গ্রামে একটি গরুর নাম রাখা হয়েছে ‘সম্রাট’। সাড়ে তিন বছর বয়সী গরুটির ওজন প্রায় ২৭ মণ। গরুটির মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকী এর দাম চেয়েছেন ১৭ লাখ টাকা।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সিদ্দিকী বলেন, তার বাড়িতে অনেক আগে থেকেই পশু পালন হয়ে আসছে। সাড়ে তিন বছর আগে থেকেই তিনি খুব যত্ন করে সম্রাটকে লালন পালন করেছেন। গরুটিকে খড় ও ঘাসের পাশাপাশি ছোলা, আলু, গমের ছাল, কাঁঠাল ও আম খাওয়ান। এবারের কোরবানির ঈদে সম্রাটকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজবাড়ীতে কোরবানির গরু-ছাগল বেশি পালন হয়েছে জানিয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল বলেন, জেলায় গরু পালনে একদিকে যেমন মাংসের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বেকার সমস্যারও সমাধান হচ্ছে।