কুমিল্লায় চেয়ারম্যানের সামনে নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ

কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘বিরোধ মেটানোর কথায় ডেকে’ এক নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধিআবদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 07:01 PM
Updated : 1 July 2022, 07:01 PM

এ ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ২৮ জুনের এ ঘটনার তিনদিন পার হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। উল্টো ভয় ও আতঙ্কে ভুক্তভোগী নারী পাশের দেবিদ্বার উপজেলায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং থানায় মামলা করার সাহস পাচ্ছেন না বলেও জানা গেছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কার্যালয়ে অনেক মানুষের মধ্যে ওই নারীকে মারধর করা হচ্ছে। তার চুল ধরে টানা হচ্ছে; ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে; মারধর করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটানো হয় বলে ওই নারীর অভিযোগ।

নির্যাতনের শিকার নারীর অভিযোগ, পূর্ববিরোধ মীমাংসা করার কথা বলে গত ২৮ জুন রাতে উপজেলার ত্রিশ গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে লোক মারফত কোম্পানিগঞ্জ বাজারে ডেকে আনেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। এ সময় এক ব্যবসায়ীর দোকানে শালিসে বসেন তিনি।

এক পর্যায়ে শালিস চলাকালে জাকিরের ভাতিজা ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন তার দলবল নিয়ে তাকে শ্লীলতাহানিসহ ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় আত্মরক্ষার্থে তিনি এদিক-সেদিক দৌড় দিতে থাকেন। এরপরও হামলাকারীরা তার পিছু নিয়ে তাকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন তখন তার আসনে বসেছিলেন।

ওই নারী নিজেকে একজন মানবাধিকার কর্মী ও ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশনের কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পরিকল্পিতভাবে আমাকে ডেকে নিয়ে শালিসে বসেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই তার ভাতিজা ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন এবং তার দলবল আমাকে শ্লীলতাহানি এবং আমার উপর অমানবিক নির্যাতন করেন।”

এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে পাঠান বলে তার ভাষ্য।

প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের কারণে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলেও ওই নারীর অভিযোগ করে বলেন, “আমি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। দ্বিতীয়বার থানায় গিয়ে মামলা করার সাহস পাচ্ছি না। তাদের ভয়ে পাশের দেবিদ্বার উপজেলায় চিকিৎসা নিচ্ছি।”

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ওই নারী (নাম ধরে) নেশা বিক্রি করে। তাকে ভালো হয়ে চলার পরামর্শ দিলে সে গালাগাল শুরু করে। ফলে রাগের মাথায় তাকে চড়থাপ্পর মারি। এর বেশি কিছু নয়।” 

শুক্রবার রাতে এসব প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলেও ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে এই বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পূর্বের সামান্য একটি বিরোধ নিয়ে আমরা ওই নারীকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে সামান্য সমস্যা হয়েছে। পরে আমি সবকিছু মীমাংসা করে দিয়েছি।”

শুক্রবার রাতে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ওসি আবুল হাশিম বলেন, “ওই নারী ঘটনার পর একটি লিখিক অভিযোগ নিয়ে জিডি করতে এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছি এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা করতে হবে। পরে তিনি চলে গেছেন, আর আসেননি মামলা করতে। তিনি এলে আমরা অবশ্যই মামলা নেব।”

ওসি আরও বলেন, “চেয়ারম্যান তো দেশের প্রেসিডেন্ট না, তাকে ভয় পাওয়ার কী আছে? প্রয়োজনে ওই নারী চাইলে পুলিশি সহায়তায় আমরা তাকে থানায় নিয়ে এসে মামলা নেব। চেয়ারম্যানের প্রভাবে থানায় মামলা হচ্ছে না, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।”