আশুলিয়ায় শিক্ষক খুন: জিতু বহিষ্কার, স্কুল খুলছে শনিবার

ঢাকার আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বন্ধ থাকা হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শনিবার থেকে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলবে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2022, 05:37 PM
Updated : 1 July 2022, 06:23 PM

এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে জিতুকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।   

শুক্রবার আশুলিয়ার চিত্রশাইলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের মতবিনিময় করেন। এরপর এসপি মারুফ শনিবার থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেন।  

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান জানান, বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ সুপার সবার কাছে তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় জানালে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

এসপি মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এই স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয় এবং শনিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

এসপি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হবে। নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন।  

হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য উৎপল কুমার সরকার হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামি জিতুকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

গত ২৫ জুন দুপুরে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্কুলমাঠে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। দুদিন পর মারা যান উৎপল। এ হত্যার ঘটনায় বুধবার জিতুকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।

জিতু ওই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বছর লেখা হলেও র‌্যাব বলছে, জিতুর জুনিয়র দাখিল পরীক্ষার সার্টিফিকেটে জন্মতারিখ ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি। সেই হিসাবে তার বয়স ১৯ বছর।

জিতুর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উজ্জ্বল হোসেন ও জিতু দুজনকেই পাঁচ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

ঘটনার বর্ণনায় ওই কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেছিলেন, “আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। দুপুরে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎপলকে হঠাৎ করে এসে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে ওই ছাত্র।”

ভাই অসীম সরকার বলছেন, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ওই ছাত্রকে শাসন করেছিলেন উৎপল। সেই কারণেই হামলা হয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, “তিনি (উৎপল) ছাত্রদের বিভিন্ন সময় চুল কাটতে বলাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন। বিভিন্ন অপরাধের বিচারও করতেন তিনি। হয়ত কোনো কারণে সেই শিক্ষকের ওপর ক্ষোভ থেকে ছাত্রটি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উৎপল কলেজটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করে আশুলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছিলেন।

৩৭ বছর বয়সী এই শিক্ষক ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে তিনি।

আরও পড়ুন: