প্রথম দফা বন্যার রেশ না কাটতেই আবার বন্যায় ঈদের আনন্দ নেই বানভাসিদের মনে। তারা এখন উঁচু ভিটা, রাস্তা আর বাঁধে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামেই নাজেহাল।
দ্বিতীয় দফার এই বন্যা কত দূর গড়াবে তা এখনও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টারা।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, “দ্বিতীয় দফা বন্যায় পৌরসভার টাপু ভেলাকোপা ও নামা ভেলাকোপা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।”
একই ভাষ্য জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টুর।
মিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ইউনিয়নের মেকলি, পূর্ব ও পশ্চিম ধনিরাম, বড়ভিটা ও বড়লই গ্রামের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবারের ১৫ হাজার মানুষ।
বন্যায় মানুষের বেহাল অবস্থার খবর দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
সদর উপজেলার যাত্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, “নতুন করে প্লাবিত হয়েছে পোড়ারচর, বানিয়াপাড়া, পার্বতীপুর, ঝুনকারচর, রলাকাটাসহ ১৮ গ্রাম। এতে পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।
সরকারের তরফে এক হাজার একশ লোককে ১১ মেট্রিকটন চাল দেওয়া হলেও সহায়তার বাইরে আর পাঁচ হাজার ৪০০ পরিবার রয়েছে বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের সরকারপাড়া, মাঝেরচর, চরসবুজপাড়া নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
চরসবুজপাড়া এলাকার আবেদ আলী বলেন, “প্রথম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি এখনও মেরামত করতে পারেননি। এর মধ্যে আবার ধরলার পানি বাড়ির আঙিনায় হানা দিয়েছে। খুব সমস্যায় আছি। গত ১৫ দিন থেকে হাতে কাজ নেই। সামনে ঈদ। বিভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে চলব জানি না।”
প্লাব্তি এলাকায় পাট, ভুট্ট, বীজতলা ও সবজিক্ষেত ডুবে গেছে। গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, “এই চরের প্রতিটি বাড়িতে ঘরের চাল পর্যন্ত পানি উঠেছিল প্রথম দফা বন্যায়। সেই পানি নেমে যাওয়ার পর আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ শুরু করেছে।
“এমনিতেই প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নৌকায় বসবাস করেছি। পানি নেমে যাওয়ার তিন-চার দিনের মাথায় আবার পানি। এসময় হাতে কাজ নেই। গত বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।”
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন বলেন, “দ্বিতীয় দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষ। প্রতিদিন শত মানুষ ভিড় করছে সহায়তার জন্য। কিন্তু সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। গত বন্যায় মাত্র ১৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাই, যা ক্ষতিগ্রস্তদের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অন্যদের ভাগ্যে ত্রাণ জোটেনি।”
দ্বিতীয় দফার এই বন্যা কত দূর গড়াবে তা এখনও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টারা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ জেলায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ধরলা নদী বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের ওজানে বৃষ্টিপাত কমলে পানি হ্রাস পাবে।
আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মাঝারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর।