পদ্মা সেতুতে আবেগাপ্লুত ভারতের পর্যটক

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে বাসে ঢাকা থেকে বেনাপোলে এসেছেন ভারতের কলকাতার সুব্রত ঘোষ ও বিধান অধিকারী।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 06:41 AM
Updated : 30 June 2022, 06:57 AM

বাস থেকে নেমে সুব্রত ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতু পার হওয়ার অন্যরকম এক অনুভূতি, যা বলে বোঝানো যাবে না।”

কলকাতার বিধান অধিকারী বলেন, “সাত দিন আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জ আত্নীয় বাড়ি বেড়াতে এসেছিলাম। ফেরি ঘাটে দুঘণ্টার মত আটকে ছিলাম। আজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় শুনলাম বাস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট কেটে নিলাম। স্বপ্নের সেতু দেখতে দেখতে এলাম। খুবই ভালো লাগল।"

গত শনিবার ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। এ সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের যোগাযোগে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রতিবেশীরাও যে সেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গী, সে কথাই শোনালেন ভারতের নাগরিক সুব্রত ও বিধান।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেনাপোলের স্থানীয় ও ভারতফেরত যাত্রীদের 'আগ্রহ’ ও ‘চাহিদা' মেটাতে পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। সবার আগ্রহ ও স্বপ্ন পূরণে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাওয়া। তারা এসেই খোঁজ করছে কোন বাস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ফিরেছেন চট্টগ্রামের ফরিদা খাতুন (৪৩), মরিয়ম বেগম (৪৫) ও ঢাকার হাসানুজ্জামান (৫০)।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে তারা বাড়ি ফিরবেন – এমন তাদের আগ্রহ। বেনাপোল থেকে টিকিটও সংগ্রহ করেছেন তারা।

হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় ভারতে ছিলাম। সেখানে বসে সব উপভোগ করেছি। আজ পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শখ পূরণ করব।"

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক সপ্তাহ আগেও যশোরের পরিবহন ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন – এ রুটে এখনই গাড়ি চালাতে পারবেন কি না। যাত্রীদের চাহিদার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারা এ রুটে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আগামী সেপ্টেম্বরের আগে কালনা সেতু খুলছে না। তাই নড়াইলের 'কালনা সেতু' চালু না হওয়ায় বেনাপোলের যাত্রীরা পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি পাচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে বেনাপোল-যশোর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা দিয়ে পদ্মা সেতু পার হচ্ছে পরিবহনগুলো।

ঢাকা থেকে ভারত যাওয়ার জন্য বেনাপোলে এসেছেন ঢাকার আবুল কালাম (৫৬), আরসাদ আলী (৪৭), রফিকুল  ইসলাম (৪৫) ও সবুজ মিয়া (৫৩)।

বেনাপোল চেকপোস্টে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে তাদের কথা হয়। জীবনে প্রথমবার পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আসতে পেরে নানাভাবে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। 

পুরানো ঢাকার আরসাদ আলী বলেন, ফেরি না সরাসরি নদীর উপর সেতু দিয়ে পদ্মা পার হওয়ার অনুভূতিটাই আলাদা। মাত্র ৭/৮ মিনিটেই পদ্মা পার হলাম। ইচ্ছে ছিল গাড়ি থেকে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করব, ছুঁয়ে দেখব, সেলফি তুলব। কড়াকড়ির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তারপরও ইতিহাসের একটি সাক্ষী হলাম। খুবই ভালো লাগল।

রফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে যে টালবাহানা শুরু হয়েছিল তাতে কোনো দিন ভাবিনি এই সেতু তৈরি হবে; এর উপর দিয়ে পার হতে পারব। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হল। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বেনাপোলের বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশে ৩৪টি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোহাগ পরিবহনের ৭টি, ঈগল পরিবহনের ৪টি, গ্রীনলাইন পরিবহনের ৫টি, সৌদিয়া পরিবহনের ৩টি, শ্যামলী এনআর পরিবহনের ৫টি, শ্যামলী এসপি পরিবহনের ৩টি, রয়েল পরিবহনের ৩টি, সেন্টমার্টিন পরিবহনের ৩টি এবং এস আলম পরিবহনের ১টি বাস।

ঈগল পরিবহনের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক এমআর রহমান রাশু বলেন, প্রতিদিন বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে তাদের ৪টি বাস ছেড়ে যায়। আগামী কয়েকদিন পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হবে। যাত্রী বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়বে। বেনাপোল-ঢাকা রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া এসিতে ১৪০০ টাকা ও নন-এসিতে ৬৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর থেকে এখনই পূর্ণাঙ্গভাবে সব বাস চলাচল করছে না। নড়াইলের কালনা সেতু চালু হলেই এর পূর্ণতা পাবে। তাছাড়া রুট চালু না হওয়ায় বেনাপোলের মানুষ ও ভারতে যাতায়তকারী যাত্রীরা পরিপূর্ণভাবে পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মদ রাজু বলেন, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন এখন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ পারাপার হয়।

পরিবহন সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন, এর অধিকাংশ ঢাকা চট্টগ্রামের। ভারত থেকে আগত যাত্রীরা এতদিন সড়ক পথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পারাপার হয়ে ঢাকায় যেতেন। ঘাটের সেই চিরচেনা ফেরির ভোগান্তি ছাড়াই এখন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক স্বস্তিদায়ক হবে।

বাগআচড়া নাভারন বেনাপোল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল হোসেন বলেন, বেনাপোল থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দূরপাল্লার ৬৫ থেকে ৭০টি বাস চলাচল করে। আগে এসব বাস পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে চলাচল করত। এখনও করছে। এই পথে সময় লাগে ৭ ঘণ্টার মত। তবে নড়াইলের 'কালনা সেতু' চালু হলে রাজধানীর সাথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। তখন ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, সময় বাঁচবে – তেমনি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।