পানি না সরতেই ভারি বৃষ্টিতে ফের বন্যা আতঙ্ক

এখনও বন্যার পানির দাগ মুছেনি সুনামগঞ্জের প্লাবিত এলাকা থেকে, তার মধ্যেই টানা ভারি বর্ষণে ফের আতঙ্কে দিন কাটছে বাসভাসিদের।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 05:05 AM
Updated : 29 June 2022, 01:47 PM

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে কিছু মানুষ বাড়িঘরে গেলেও এখনও বিশুদ্ধ খাবার পানি আর খাবারের সংকটের কারণে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কাজ চলছে জোরকদমে। পানি না নামায় অনেক মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছে।

তার মধ্যেই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ঝরেছে জেলায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে বর্ষণ হচ্ছে। 

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে থেকেই মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত হবে এই পূর্বাভাস ছিল। আগামীকাল ও পরশুও বৃষ্টি হবে।”

“এই সময়ে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে আগের মতো টানা ভারি বর্ষণ হচ্ছে না। আগামী মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসবে।”

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “ভারতের মেঘালয় ও সুনামগঞ্জে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ফলে পানি কিছুটা বাড়ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে।

“বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৯৪ মিটার উচ্চতায় রয়েছে; তার মানে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১৫ দিন ধরেই ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।”

গত ৪৮ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার।

অপরদিকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭.৮০ মিটার। অর্থাৎ, এখানে এখনও বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে পানি।

তাছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানিও গত দুদিন ধরে বাড়ছে বলে পাউবো জানিয়েছে।

পাউবোর আবহাওয়া ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতকে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

“এ ছাড়া উজানেও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে পানি বাড়ছে।”

 

এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোররাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারি বর্ষণ হয়েছে। ভারি বর্ষণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ। বিভিন্ন এলাকার ভেসে ওঠা রাস্তাঘাট আবারও কিছুটা প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, গত ১৬ জুন রাতের ভয়াবহ বৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রপাত আমাদের ভিতরে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে গেছে। আমরা দেখেছি, কয়েক ঘণ্টায় সবকিছু চোখের সামনে ডুবে গিয়ে মানুষকে অসহায় করে গেছে।

“এখন এই সময়ে বৃষ্টি ও ঝড় হলে আমাদের বুক কাঁপে। কয়েকদিন আগে বন্যা মোকাবেলার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। প্রশাসনের উচিত শক্ত প্রস্তুতি রাখা।”

সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪ হাজার বানভাসি মানুষ আছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে।