রোববার সকাল ৬টায় টোল গেইট খুলতেই সেতুর জাজিরা প্রান্তে প্রথম টোল দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে সেতুতে ওঠেন জাফর। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।”
তার মত দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন, খরস্রোতা পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ভোগান্তি দূর করবে স্বপ্নের সেতু। শনিবার ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে প্রথম যাত্রী হিসাবে টোল দিয়ে সেতু পার হন। আর রোববার সকালে সেতুর দুই প্রান্তের টোল গেইট খুলে দেওয়া হয় সবার জন্য।
কিন্তু প্রাইভেটকার আর মোটরসাইকেল নিয়ে মধ্যরাত থেকেই পদ্মা পাড়ে ভিড় করতে থাকে হাজারো মানুষ। কে সবার আগে পদ্মা সেতুতে উঠবে- সেই প্রতিযোগিতা ছিল সবার মধ্যে।
জাজিরা প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, “রাত ১২টা থেকেই গাড়ি নিয়ে লোকজন এসেছে । আমরা টোল প্লাজার কাছাকাছি তাদের থামিয়ে দিয়েছি।”
সকাল ৬টায় টোল প্লাজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় আগে সেতুতে ওঠার চেষ্টা। মোটরসাইকেলে কে আগে বা পরে সেতুতে উঠেছে সেটা বোঝা ছিল কঠিন। তবে প্রাইভেটকার নিয়ে প্রথম জাজিরা টোল প্লাজা অতিক্রম করেন গোপালগঞ্জের এবি এম জাফর উল্লাহ।
তিনি বললেন, “প্রধানমন্ত্রীর পরে আমি প্রথম প্রাইভেট কার চালিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছি, অনুভুতিটা সত্যিই অন্যরকম।”
জাফর গোপালগঞ্জ থেকে রাতে রওনা হলেও সেতু বন্ধ থাকায় পার হতে পারেননি। সারারাত বসে থেকে সকালে টোল দিয়ে তিনি সেতু পার হন।
এতদিন ফেরিঘাটে যানজট আর ভোগান্তি সঙ্গী করে পদ্মা পার হতে হয়েছে, খরস্রোতা পদ্মার ভয়াল রূপও দেখেছেন বহুবার।
জাফরের ভাষ্য, “বহু কষ্ট করে এই রুটে এতোদিন চলেছি। আজকে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে আমি প্রথমে প্রাইভেট কার চালিয়ে যাচ্ছি, এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।”
তার মত হাজারো মানুষ রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলেন পদ্মার টোল প্লাজা খুলে দেওয়ার অপেক্ষায়। জাজিরা প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর পথচারীর ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিশশিম খেতে হচ্ছিল।
সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রথম যাত্রীবাহী বাস নিয়ে টোল প্লাজা অতিক্রম করেন টাঙ্গাইলের মো. হানিফ।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ে জাজিরা প্রান্তে টোল দিয়ে হানিফ পদ্মা সেতুতে ওঠেন।
ওই বাসের যাত্রী ইয়াসিন বলেন, “পদ্মাসেতু দিয়ে পার হওয়া প্রথম বাসের যাত্রী হিসেবে অনেক খুশি আমি।”
পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি যে দূর হচ্ছে, সে কথাও তিনি বলেন।
উদ্বোধনের পরদিনও পদ্মাপাড়ের হাজারো মানুষ কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন জাজিরা প্রান্তে। মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখতে মোবাইলে ছবি তোলা আর ভিডিও করাও চলছিল।
জাজিরা প্রান্তে বাসের যাত্রীরা জানান, তাদের অধিকাংশই দল বেধে দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মাসেতু দেখতে এসেছেন। সেতুর প্রথম দিনকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে তারাও প্রচুর ছবি তুলেছেন।
যশোর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে আসা উৎস রায় বলেন, “রাতে বন্ধুদের সাথে এসে পদ্মাসেতুর দক্ষিণ টোলপ্লাজার সামনে অপেক্ষা করেছি, শুধু পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঘুরবে বলে।”
দীর্ঘ যানজট ঠেলে টোল দিয়ে কোনোরকমে টোল প্লাজা পার হলেই উল্লাসে ফেটে পড়েছেন অনেকে। টোলের পরিমাণ বেশি মনে হলেও স্বপ্নের সেতুর উপর দিয়ে ঘুরতে পারায় তারা খুশি।
নিষেধ না মেনে শত শত যাত্রী ও দর্শনার্থীকে সেতুর উভয় লেইনে গাড়ি থামিয়ে ছবি ও ভিডিও করতে দেখা গেছে। কেউ আবার চলন্ত গাড়ি থেকেই ভিডিও করছিলেন পদ্মা সেতুতে প্রথম পথ চলার স্মৃতি ধরে রাখতে।