পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দক্ষিণে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষ বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 12:28 PM
Updated : 25 June 2022, 01:44 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন।

এর আগে তিনি মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধ শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রথম টোল পরিশোধ করে সেতু পার হয়ে এপারে আসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় গাড়িযোগে চলে যাওয়ার পর হাজার হাজার উৎসুক জনতা দৌড়ে সেতুতে উঠে পড়ে। পরে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের নামিয়ে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের জনসভাস্থলে পৌঁছলে মঞ্চ থেকে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিয়ে বরণ করে নেয় লাখো জনতা। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে উপস্থিত সবাই শুভেচ্ছা জানান।

শিবচরের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সভাশেষে প্রধানমন্ত্রী শরীয়তপুরের জাজিরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সার্ভিস-২ এ এসে বিশ্রাম নেন এবং দুপুরের খাবার খান। বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে যোগে ঢাকা চলে যান।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করেছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলবে।

উৎসবে মেতেছে দক্ষিণের মানুষ

সকাল থেকে ঢাকা-মাওয়া এবং শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন রুটে দেখা গেছে সড়কের দুই ধারে পুলিশের কড়া পাহারা। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সাধারণ মানুষ হেঁটে জড়ো হয়েছিলেন শরীয়তপুরের নাওডোবায়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি আর ব্যানার নিয়ে হেঁটে গেছেন মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটের জনসভার দিকে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ বাস, লঞ্চ, ট্রলার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে রংবেরংয়ের টি শার্ট পরে সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত জনসভাস্থলে এসে জমায়েত হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ পালতোলা নৌকা নিয়েও এসেছে জনসভায়।

জনসভায় অংশ এসেছেন শরীয়তপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান খান (দুলু)।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু করতে শেখ হাসিনা এসেছেন। এমন দিনে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই ছুটে এসেছি।”

বেলা যত গড়িয়েছে মানুষের উচ্ছ্বাস যেন ততই বেড়েছে। সবার মুখে একটাই কথা তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেছে; আর কোনো চিন্তা নেই। তাদের যাতায়াতে দুর্ভোগসহ সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ী চান মিয়া সরদার, রশিদ বেপারী বলেন, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকতে হবে না। সকালে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ২ ঘণ্টায় বাড়ি পৌঁছে যাবেন।

মাদারীপুরের কালকিনির মিজানুর রহমান, জলিল পেদা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

মিজানুর রহমান বলেন, “এখন ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে অনেক খরচ হয়। ভেঙে ভেঙে যেতে হয়। এখন সেতু হয়ে গেছে। সব সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে।”

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রতন শীল বলেন, “কেউ টাকা দেয়নি। আমরা আমাদের টাকায় সেতু করেছি। এটা আমাদের জন্য গৌরবের।”

সেতুর ওপর উচ্ছ্বসিত জনতা

শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর ফলক উম্মোচন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল উন্মোচনের পর প্রশানমন্ত্রী মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের জনসভায় চলে যান।

এরপর জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে হাজার হাজার জনতা পদ্মা সেতুর ওপরে ওঠে যায়। সেখানে তারা নেচে গেয়ে উল্লাস করতে থাকে। অনেকেই ছবি তুলেছেন; কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ শুরু করেন।

এ সময় তাদের নিবৃত্ত করতে প্রশাসনকে বেশ বেগ পেতে হয়। দীর্ঘ সময় পর অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব এসে তাদের সেতু থেকে নামিয়ে আনে।