পানিতে থেকে গোলার ধানে চারা, দিশেহারা কৃষক

ভয়াবহ বন্যায় গোলা তলিয়ে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় বছরের ‘খোরাকি’ নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুনামগঞ্জের কৃষক।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 07:58 AM
Updated : 25 June 2022, 07:58 AM

বন্যার পানি নামার পর বাড়ি ফিরে কৃষক দেখতে পান গোলায় রাখা সোনা রং ধান কালো হয়ে গেছে, কোনো কোনো ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। এখন সড়কের পর সড়ক ধরে কৃষক-কৃষানীরা ধান শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, প্রায় ১২ হাজার হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া যারা কিছুদিন আগে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে একমাত্র বোরো ফসল গোলায় তুলেছিলেন তাদের শুকনো ধানও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। শুকানো ধান ভেজা থাকলে অঙ্কুর গজিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ থেকে ভালো চাল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

“বন্যায় কৃষকের গোলার ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন সেই ধান সড়কের ধারে শুকাতে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের। জেলায় প্রায় পৌনে চার লাখ চাষি পরিবার আছে। সবাই বৈশাখে কমবেশি ধান গোলায় তোলেন। এবার গোলার ধান বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের মন খারাপ।”

সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ১১ উপজেলাই প্লাবিত হয়। প্রায় গোটা জেলা পানিবন্দি হয়ে যায়। টানা কয়েকদিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয় জেলাজুড়ে।   

এই অবস্থার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোলায় থাকা সারা বছরের খোরাকি আর গবাদিপশু নিয়ে তারা চরম বিপদের মধ্যে পড়েন।    

সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের গোলেরগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, “আমরার ভয়াবহ অবস্থা। গোলার ধানটান সব পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। চাঁদের আলোর মতো সুন্দর শুকানো ধান বন্যার পানিতে নষ্ট করে গেছে। এখন সারা বছর কী খেয়ে বাঁচব?”

একই ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, “বৈশাখ মাসে ভালোভাবে ধান কাটতে পারিনি। যাই কাটছি তা শুকিয়ে গোলায় রাখার পর সর্বনাশা বন্যায় সেই ধান নষ্ট করে গেছে।”

“দুর্যোগ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। তিন মাসে তিনটি বন্যা আমাদের কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গেছে।”

শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামের কৃষক নূর উদ্দিন বলেন, “বন্যায় ভেসে গেছে ধান, চাল, গবাদিপশু। গোলার শুকনো ধান পানিতে তলিয়ে গিয়ে গন্ধ ধরে গেছে। এখন অঙ্গুর গজিয়েছে। তাই আমরা উঁচু পাকা সড়কে এনে পচা ধান শুকাচ্ছি। তবে এই ধানে চাল বেশি হবে না।”

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু বলেন, হাওরের কৃষক চলতি বছর প্রকৃতির সঙ্গে টানা এক মাস লড়াই করে বোরো ধান তুলেছেন। তবে ধান কাটার পর বৃষ্টি থাকায় তা শুকাতে পারেননি। ধানে অঙ্কুর গজিয়ে ছিল। এবারের সর্বনাশা বন্যায় শুকনো ধান নষ্ট হয়ে গেছে।