পদ্মা সেতুর চাপ সামলাতে খুলনার মহাসড়কের প্রস্তুতি

স্বপ্নের পদ্মা সেতু দক্ষিণের জনপদের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অংশের সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পর খুলনা অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কগুলোর যানবাহনের চাপ সামলানোর প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 09:38 AM
Updated : 24 June 2022, 09:38 AM

বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অংশের যাত্রী বা পণ্যবাহী গাড়ি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। এসব যানবাহনের বিরাট একটা অংশ পদ্মা পার হবে সেতু দিয়ে। সেতু দিয়ে অল্প সময়ে পদ্মা পার হওয়ার পর যানবাহনের বড় একটা চাপ পড়বে খুলনাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে।

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পণ্যবাহী যানবাহনের একটা অংশ যাবে ভারতে।

উত্তরবঙ্গ বা ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে সরাসরি সড়ক পথে দক্ষিণবঙ্গে যেতে যানগুলো ঢাকার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠবে এবং সেতু পার হয়ে খুলনা মহাসড়কে পড়বে।

চট্টগ্রাম বা সিলেট থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহনও এই সেতু পার হয়ে ওপাড়ের মহাসড়কে পড়বে।

এসব যানবাহনের চাপ খুলনাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক কতটা নিতে পারবে সে বিষয়ে কথা বলেছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ।  

আনিসুজ্জামান মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে খুলনাঞ্চলে মানুষের চলাচল বাড়বে। পদ্মা সেতু থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাগেরহাটের কাটাখালি, খুলনা-মোংলা, খুলনা-যশোর ও খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ওপর চাপ পড়বে।

“এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা খুলনাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গত ২ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছি।”

ইতিমধ্যে খুলনাঞ্চলের মহাসড়কে পাঁচটি কংক্রিট সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা নগরীর ময়লাপোতা থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

আনিসুজ্জামান জানান, খুলনা নগরীর ফেরিঘাট থেকে আফিলগেট পর্যন্ত সড়ক ৪ অথবা ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হবে। প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি এবং ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে। খুলনা-যশোর রোডের যশোরের রাজঘাট থেকে খুলনার আফিলগেট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক তৈরি হবে।

সওজ এর এই কর্মকর্তা আরও জানান, খুলনার তেরখাদা উপজেলা জেলা শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে। নগরীর জেলখানা খেয়াঘাটে ব্রিজ বা টানেল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় খুলনা রেলস্টেশন থেকে ঢাকা-খুলনা হাইওয়ের গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত এ সড়কটি নির্মিত হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব আনুমানিক আরও ৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে। তখন ঢাকা থেকে খুলনায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া যাবে।”

খুলনা শহর বাইপাস এবং গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের সাচিবুনিয়ায় ইন্টারসেকশন নির্মাণ, গল্লামারি-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান ফরেস্ট সড়কের ফেরিঘাটে চুনকুড়ি সেতু এবং পানখালী ফেরিঘাটে ঝপঝপিয়া সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে, পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও বিপুল পরিবর্তন আসবে। এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে। এমন ধারণা থেকে খুলনাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার জানান, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নগরীর রাস্তার মোড় ও রাস্তা প্রশস্তকরণ, ফুটপাত দখলমুক্ত এবং ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নগরীর লবণচরা, সোনাডাঙ্গা, বয়রা এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টের ২২টি মোড় প্রশস্ত করে কার্ভ করা হচ্ছে। ডাকবাংলো ও শিববাড়িসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সোনাডাঙ্গা ও গল্লামারি এলাকায় ট্রাফিক যানজট নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাবিদ তানভীর আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে মাথায় রেখেই খুলনার মাস্টারপ্ল্যান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

মাস্টারপ্ল্যানে খুলনা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তা প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।