পদ্মা সেতুর ক্ষণ গুনছে পিরোজপুরের বোম্বাই মরিচ

সুস্বাদু পেয়ারা, মিষ্টি আমড়া আর সুঘ্রাণে ভরপুর বোম্বাই মরিচ এবার সহজে ঢাকায় যাবে, লাভ হবে অধিক, পদ্মা সেতু ঘিরে এমন স্বপ্নে বুক বাঁধছেন পিরোজপুরের চাষিরা।

পিরোজপুর প্রতিনিধিমো. হাসিবুল ইসলাম হাসান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 04:11 PM
Updated : 23 June 2022, 04:38 PM

তাছাড়া জেলার অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরেন, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় বাইরে। তারাও পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়ার আশায় রয়েছেন। ‘বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা পিরোজপুরে জমি কিনছেন খামার-কারখানার জন্য, যে কারণে ইতোমধ্যেই দাম বেড়েছে।’

জেলার কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা পদ্মা সেতু ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা ও সম্ভাবনার খবর দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল জলিল আকন বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নততর চিকিৎসাসেবা পেতে বেশ সহজ হবে। আগে একজন মুমূর্ষ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে গেলে দীর্ঘ সময় ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হত। অনেক সময় রোগী অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যেত। এখন আর তা হবে না। আমরা অতিদ্রুত ঢাকায় পৌঁছে চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারব।”

পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মল্লিক নাসির জানান জেলেদের স্বপ্নের কথা।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন সাগর থেকে ২০-২৫টি ট্রলার মাছ ধরে। দিনে গড়ে দুই কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় পাড়েরহাটে। এখানকার মাছ ট্রাকে ঢাকাসহ বাংলাদেশের অনেক স্থানে সরবরাহ করা হয়। মাওয়া ফেরিঘাটে প্রায়ই মাছ পচে যায়। মহাজনদের লাখ লাখ টাকা লোকসান দিতে হয়।

“পদ্মা সেতু চালু হলে কোটি কোটি টাকার ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে তাদের আর ভাবতে হবে না। পিরোজপুর থেকে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় তাজা ইলিশ পৌঁছে দিতে পারবে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায়। মানুষ গুণগতমানের সামুদ্রিক তাজা মাছ খেতে পারবে।”

জেলায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রিজের সভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক।

তিনি বলেন, “সেতু ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এ এলাকার উন্নয়ন প্রক্রিয়া। মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আবেগে-উচ্ছ্বাসে, উত্তেজনায়-আনন্দে অবগাহন করছে পিরোজপুরের মানুষ, যারা যুগের পর যুগ একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করেছে নীরবে।

“এখন কৃষি ও চিকিৎসাসেবা, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে দ্রুতগতিতে। বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা পিরোজপুরে জমি কিনছেন খামার-কারখানার জন্য, যে কারণে ইতোমধ্যেই দাম বেড়েছে।”

সুস্বাদু পেয়ারার জন্য পিরোজপুর বিশিষ্ট। এই পেয়ারা প্রায়ই দূরের ভোক্তার নাগালে পৌঁছানোর আগেই পচে নষ্ট হয়ে যায়।

জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, “পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই এ বছর থেকে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন। এ অঞ্চলের সুমিষ্ট পেয়ারা ছড়িয়ে পড়বে দেশের বড় বড় শহর-বন্দর অঞ্চলে। বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা উৎপাদনে এ উপজেলার নামও সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।”

স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আদাবাড়ি গ্রামের পেয়ারা চাষি নিত্যানন্দ সমদ্দার বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের অনেক পরিশ্রমে উৎপাদিত এ ফল বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারব।”

উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে ছয় হাজার ৫০০ টন সুস্বাদু পেয়ারা উৎপাদিত হয় জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপলকৃষ্ণ নাথ বলেন, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সহজে ছড়িয়ে পড়বে এখানকার পেয়ারা।

“পেয়ারা চাষিরা লোকসানের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। ভাল লাভ করতে পারবেন।”

স্বরূপকাঠীর ঘৃতকাঞ্চন জাতের বোম্বাই মরিচ সুঘ্রাণময়।

কৃষি কর্মকর্তা চপলকৃষ্ণ বলেন, “স্বাদ ও গন্ধে অনন্য এই মরিচ বছরে ৭০ হেক্টরের বেশি জমিতে ৪০০ টন উৎপাদিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা আসেন না। মরিচ চাষিরাও নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এখন থেকে বোম্বাই মরিচ চাশিষরা অনেক লাভবান হবেন।”

জেলার স্বরূপকাঠী ও কাউখালী উপজেলায় উৎপাদিত হয় সুস্বাদু আমড়া।

কৃষি কর্মকর্তা চপলকৃষ্ণ নাথ বলেন, “শুধু স্বরূপকাঠীতেই ১৬০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ২০০ টন আমড়া উৎপাদিত হয়। এখন থেকে পচনশীল এ ফলটি সরাসরি পদ্মা সেতু পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আমড়া চাষিরা লাভবান হবেন।”