পানির তীব্র স্রোতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে; ভেসে গেছে উপজেলার অন্তত আড়াইশ পুকুরের মাছ। ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। এদিকে ত্রাণও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ফুলগাজীর প্রধান সড়ক থেকে ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রামে যাওয়ার সড়কটির কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে তীব্র পানির স্রোতে পাকা সড়কের তিনটি স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
এ সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয়রা গাছের গুঁড়ি ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী সাঁকো বানিয়ে হেঁটে চলাচল করছেন।
উত্তর দৌলতপুর গ্রামের শীলা রানী দাস নামের এক গৃহবধূ বলেন, “বাড়ি থেকে প্রায় এক হাজার মিটার দূরে পাকা সড়কে যেতে বেগ পেতে হচ্ছে। আধাপাকা সড়ক এখনও একফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে।”
সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী বাজার থেকে দেড়পাড়া সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ ঘরিয়া ও দরবারপুর সড়কে রাস্তার পিচ উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সড়কের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত না করায় বন্যার পানি এখনও সড়ক থেকে পুরোপুরি নেমে যায়নি। বন্যাকবলিত এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তার ওপর দিয়ে এখনও পানি প্রবাহিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “এসব পুকুরে পারিবারিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে মাছ চাষ করা হত। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া পুকুর থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলগাজী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে হটলাইন নম্বর চালু করেছি। হটলাইনটি পুরো বন্যার সময় চলমান থাকবে। হটলাইন এ ফোন করে যে কোন সমস্যা জানাতে পারবেন।”
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বর্ষণের ফলে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বেড়ে যায়। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর দৌলতপুর, বরইয়া ও দেড়পাড়ার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পরে ওইদিন রাতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকা স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।