ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি, ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই
আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 22 Jun 2022 10:00 PM BdST Updated: 22 Jun 2022 10:00 PM BdST
দেড় সপ্তাহ ধরে বাড়ি-ঘরে পানি, নলকূপ-পায়খানা তলিয়ে গেছে, প্রায় সারাদিন ভেজা কাপড়ে থাকতে হচ্ছে গৃহবধূদের, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি-কাশি, কিন্তু ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই।
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা-পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে নানা রকম দুর্দশার চিত্র মিলেছে। বানভাসিরা জানিয়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগের কথা।
সদর উপজেলার নুরানীপাড়া গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৪৮) বলেন, ১৩ জনের সংসার তার। স্বামী, স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন ছেলের বউ ও বাচ্চাসহ একান্নবর্তী পরিবার। বোরো ধান, কাউন আর পাট আবাদ করেন তারা।
“এবার ধান হলেও কাউন নষ্ট হয়ে গেছে। পাট বন্যায় তলিয়ে গেছে। সেই পাট ছিঁড়ে শাক আর কচুর ডাল দিয়ে দুপুরের রান্না হচ্ছে। দুপুরের রান্না রাতসহ কাল দুপুর পর্যন্ত চালাতে হবে।”
আর সকালে শুকনো চিঁড়া আর বিস্কুট দিয়ে নাশতা সেরেছেন বলে জানান তিনি।
ওই গ্রামের খাদিজা বেগম বলেন, “নলকূপ ডুবি গেইছে। পায়খানা তলে গেইছে। বয়ষ্ক মানুষ আর বউ-ঝিদের খুব সমস্যা হইছে।”
তাদের বাড়ির কাছে দুধকুমার নদী। নদীর ঢেউয়ে ঘর ভেঙে যাচ্ছে।
“ঘরের ভেতর থকথকা কাদার ওপর খাট রাখছি। শুলে ভয় হয় কখন খাট ভাঙ্গি পরি যাই। কোনো রকমে রাইতটা পার করি। ১২ দিন ধরি বাড়িত পানি। খুব বিপদে আছি। কাঁইয়ো তো দেকপের আসিল না। এদন কষ্ট করি কি থাকা যায়?” বললেন আব্দুল হক।
পাশাপাশি এরশাদুল, শুক্কুর আলী, জব্বার আর বাচ্চুর বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি ১০ থেকে ১২ দিন ধরে পানিবন্দি।
শুক্কুর আলীর স্ত্রী রোশনা (৩২) ছোট সিলভার কার্প মাছ রান্না করছিলেন বুধবার দুপুরে।
তিনি বলেন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ছয়জনের সংসার তার। স্বামী গরু কেনাবেচা করেন। সেই আয়ে সংসার চলে। এখন বন্যায় তাদের এলাকায় গরুর ব্যবসা নেই। পাশের লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি হাটে গেয়েছেন তার স্বামী। সন্তানসহ তিনি রান্নায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।

রোশনার প্রতিবেশী খাদিজার (৩০) বাড়ি কিছুটা উঁচু। উঠোনভর্তি পানি। ঘরগুলোয় এখনও পানি ঢোকেনি। দুটো গরু আছে তাদের। নুরানী-ফারাজিপাড়া সড়কে রেখেছেন গরু দুটি।
খাদিজা বলেন, “গরুর খাবার নিয়া খুব দুশ্চিন্তায় আছি। হামরায় খাবার পাই না। গরুর খাবার কিনি কেমনে। গরু দুটা শুকি যাবার নাগছে। বেটিটা পানিত সারাদিন ডুবি থাকি জ্বর নইছে। টেবলেট কিনিও দিবার পাবার নাগছি না। চারপাকে পানি বেড়ালেই কাপড় ভিজি যায়। সেই ভিজা কাপড় পরি সারাদিন চলাফিরা করি। বাড়ি বাড়ি সর্দি-কাশি ধরছে। ডাক্তারও পাওয়া যায় না। একেবারে যাত্রাপুর হাটোত গিয়া অষুধ কিনি আনা নাগে।”
এ এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকে রাতে সড়কে ঘুমায়। সেই সড়কে নেই নলকূপ। নেই পায়খানা।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, তার ইউনিয়নে দেড় হাজার বাড়িতে পানি উঠেছে। পানিবন্দি হয়েছে আরও চার হাজার পরিবার। সব পরিবারকে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি।
তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেদুল হাসান বলেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করছেন।
“ইতিমধ্যে সদর উপজেলায় ভাঙনকবলিত ৯৪ পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন প্রতিদিন দুর্গম এলাকায় গিয়ে বন্যাকবলিতদের খোঁজখবর নিচ্ছে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণ করছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৮ মেট্রিকটন চাল, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশুখাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার গোখাদ্য ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে বলে কুড়িগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কতর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় ২৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পাঠ কার্যক্রমের বাইরে আছে।
তাছাড়া ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদ্রাসা ও একটি কলেজ বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার শামুল আলম।
সদর উপজেলার পোড়ারচর, উলিপুরের মশালের চরসহ কয়েকটি চরে ঘরবাড়ি ডুবে ও ভেসে যাওয়ায় অনেকেই নৌকায় বাস করছেন বলে জনপ্রতিনিধিরা জানান।
-
জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠল
-
কক্সবাজার শহরে দস্যুতা-লুণ্ঠনের দায়ে ২ জনের যাবজ্জীবন
-
হবিগঞ্জে নদীতে গোসলে নেমে ২ কিশোরের মৃত্যু
-
কক্সবাজারে র্যাবের মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
-
চুয়াডাঙ্গার সড়কে বাইক ও প্রাইভেট কার থামিয়ে ডাকাতি
-
গাজীপুরে ‘প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মারধর’ কিশোরীকে
-
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার আসামির বিরুদ্ধে পিপির জিডি
-
গাইবান্ধায় গৃহবধূকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড
- শিক্ষককে পিটিয়ে খুন: মামলায় জিতুর বয়স ১৬, র্যাব বলছে ১৯
- সিরাজগঞ্জে অস্ত্র হাতে ‘ভাইরাল’ সেই বায়েজিদ পিস্তলসহ গ্রেপ্তার
- পদ্মা সেতু: যশোর তাকিয়ে কালনা সেতুর দিকে
- বাঘাইড় বিক্রি করায় সুপার শপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
- ‘ইউভেন্তুসে বেনজেমা-মদ্রিচের মতোই খেলবে দি মারিয়া’
- বান্ধবীর সামনে ‘হিরো হতে’ শিক্ষককে পেটান জিতু
- জর্দার পোটলা নিয়ে হজে, ভোগালেন সহযাত্রীদেরও
- মুমিনুলকে আবার উইন্ডিজে দেখতে চান বিসিবি প্রধান
- গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা
- পাহাড়ে সশস্ত্র দল; এই ‘বম পার্টি’ কারা?