বন্যা: ফুলগাজীতে পানি কমছে, পরশুরামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রবাসীর মৃত্যু

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ১৩ গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকার অনেক মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2022, 08:09 AM
Updated : 22 June 2022, 08:31 AM

ফুলগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুন নাহার জানান, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে এসব গ্রামে প্রবেশ করা পানি বুধবার সকাল থেকে নামতে শুরু করেছে।  

তবে বন্যার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ফুলগাজী উপজেলার সাত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এছাড়া পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজীতে বন্যার কারণে উপজেলার ৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্কুল আঙ্গিনায় পানি নেমে গেলে আবার তা চালু হবে।

স্কুলগুলো হল- ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর একরাম নগর মমতাজ বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়পুর নুরুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ঘনিয়া মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিসমত ঘনিয়া মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈরাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মমতাজ বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লেয় প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, স্কুলের পাশে বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে স্কুলের চারিদিকে পানি থৈই থৈই করছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে গত তিনদিন শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সালমান আহম্মদ বলেন, “স্কুলের আঙ্গিনায় হাটু পরিমাণ পানি জমে আছে। আমরা স্কুলে যেতে পারছি না।“

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নে পশ্চিম অলকা গ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে শফিকুর রহমান নামের এক বাহরাইন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।

৪৫ বছর বয়সী শফিকুর উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর সত্যনগর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ছিলেন। তিনি গত ১০ জুন ছুটিতে দেশে আসেন।

শফিকুরের পরিবারের বরাতে পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম শফিকুল হোসেন মহিম বলেন, “গত সোমবার দুপুরে পশ্চিম অলকা গ্রামে আলত আলী চৌধুরী বাড়ির পাশে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় ওই স্থানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে যায়। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না করায় মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে শফিকের মৃত্যু হয়েছে।”

অন্যদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নিচু এলাকাগুলোর মানুষরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

উত্তর দৌলতপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী হালিমা খাতুন বলেন, “ঘরের আঙ্গিনায় এখনও একফুট পানি জমে আছে। চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। গতকাল আমি সামান্য মুড়ি-চিড়া পেলেও আমার বিধবা বউটি কিছুই পায়নি।”

একই গ্রামের জয়নাল আবেদিন বলেন, “মুহুরী নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা চেষ্টা করে গাছের গুঁড়ি দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে।”

পানি উন্নায়ন বোর্ডের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, “ইতোমধ্যে ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়নের বরইয়া বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। পানি কিছুটা কমলে বাকি বাঁধগুলো মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গৌর পদ সূত্রধর জানান, ফেনীর মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধানে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটির কাজ শুরু হলে এ অঞ্চলের মানুষকে আর কষ্ট করতে হবে না।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান। 

তিনি বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তালিকা করতে উপজেলা প্রশাসনকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”