মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যেসব মৃত্যুর কথা আপনারা বলছেন, সেটি বন্যার কারণে নয়। যেমন আমাদের মেয়র সাহেবের আত্মীয় একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন, আবার একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে মা-বাবার কাছ থেকে ছুটে গিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারা গেছেন। এগুলো তো আর বন্যার কারণে মৃত্যু নয়।
“এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে একটি মৃত্যুর খবরই আছে। একটি মাত্র মৃত্যুর খবরই আছে বন্যায়, তিনি একজন ফেরারি আসামি। বাকিদের হয়ত অন্য কোনো রোগ ছিল।”
জেলাবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নেয় দাবি করে জাহাঙ্গীর বলেন, “১৬ তারিখের আগেই ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষকে নিয়ে এসেছি এবং ১৬ তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। সরকারিভাবে ৪৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।”
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আমরা ৬৭৫ মেট্রিক টন জিআর চাল জেলা সদর ও উপজেলাগুলোতে বিতরণ করেছি এবং জিআর ক্যাশ ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করেছি। আমাদের হাতে মজুদ আছে আরও ৫০ লাখ টাকা। আমরা সেটি বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ১২ হাজার বস্তা শুকনো খাবার রয়েছে এবং প্রতিটি বস্তার মধ্যে সাড়ে ১৪ কেজি উপকরণ আছে।”
জেলা শহরে বিশেষ ব্যবস্থায় দৈনিক ২০ হাজার কেজি রান্না করা খিচুড়ি বিতরণের কথাও বলেন তিনি।
সুনামগঞ্জের সব উপজেলায় প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরবাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা দেখার জন্য, সুনামগঞ্জের মানুষের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য এখানে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুনামগঞ্জে হেলিকপ্টার অবতরণের কোনো জায়গা না থাকায় নামতে পারেননি। পরে তিনি সিলেটে বসে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।
“তিনি আমাকে বলেছেন, যত ত্রাণ লাগে তিনি সেটি দিবেন। বাড়িতে যাওয়ার পরও সুনামগঞ্জবাসী ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকার সমস্ত ব্যবস্থা নেবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট শিগগিরই সংস্কার করার আশ্বাসও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলাসহ সব নদ-নদী খননের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। আরও পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা প্রয়োজন হলে, সব দেবেন বলেও জানিয়েছেন।”
পণ্য মূল্য ও নৌকার অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আমার কাছে দুয়েকটি জায়গায় বেশি দামে পণ্য বিক্রির খবর এসেছে। ১৬ তারিখের ওই দুর্যোগের রাতেই অভিযোগ এসেছে। ৯৫ শতাংশ দোকান ওইদিন বন্ধই ছিল। সে অল্প দুয়েকটি জায়গা নিয়ে অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে তাদের রেকর্ড আছে। ওইসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। আমরা আইডেন্টিফাই করে রেখেছি। এই দুর্যোগ পার হলেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলব। এরপরে অভিযোগ পেলে আইনর্শঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”