অশীতিপর মায়ের স্থান হলো দোকান ঘরে

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মায়ের জমি ‘লিখে নিয়ে’ ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বরিশাল প্রতিনিধিসাইদ মেমন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2022, 07:33 AM
Updated : 21 June 2022, 09:02 AM

এর প্রতিবাদ করায় তিন বোন, ছোট ভাই, ভগ্নিপতি ও ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ করেন স্বজনরা।

তবে সাবেক এই সেনাসদস্য মাহাবুব মৃধা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

৮২ বছর বয়সী হালিমা বেগম এখন বসবাস করছেন গৌরনদীর নলচিড়া বাজারের একটি দোকান ঘরে, যেটা তার স্বামী রেখে গেছেন। হালিমা নলচিড়া গ্রামের প্রয়াত শাহজাহান মৃধার স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, ২০ বছর আগে শাহজাহান মৃধা মারা যান। তিনি স্ত্রী হালিমা বেগমকে ৬৪ শতাংশ জমি লিখে দেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে বড় ছেলে মাহাবুব মৃধার কাছে থাকতেন মা হালিমা বেগম।

হালিমা ও তার সন্তানদের অভিযোগ, মাহাবুব মৃধা মায়ের নামের ৬৪ শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার জন্য মায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে মায়ের নামের জমি লিখে নেন। এরপর মাকে ঘর থেকে বের করে দিতে নানা ফন্দিফিকির করেন মাহাবুব। এক পর্যায়ে এ নিয়ে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা সালিস বৈঠকও করেন।  

হালিমার মেয়ে আকলিমা বেগম বলেন, মায়ের কাছ থেকে জমি লিখে নিতে মাকে প্রস্তাব দেয় আমার ভাই ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মাহাবুব মৃধা। মা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে এবং বাবার বসতঘর হতে বেশ কয়েকবার বের করে দেয়। এমনকি মায়ের ভরণপোষণ, ওষুধ ও চিকিৎসাও বন্ধ করে দেয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার ও সম্পত্তি লিখে নেওয়ার বিষয়গুলো অন্যান্য ছেলে ও মেয়েদের মা জানালে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে, নলচিড়া বাজার পরিচালনা কমিটি, গৌরনদী মডেল থানা, বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে বিভিন্ন সময় ছোট ভাই ও বোনেরা বড় ভাই মাহাবুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। এ নিয়ে কয়েকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

“সালিশ বৈঠক ও গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মাহবুব আলম মাকে ঘরে উঠতে বাধা দেয় মাহাবুব।”

মা হালিমা বেগম বলেন, “বড় ছেলে আমার নামের জমি লিখে নিয়ে আমাকে স্বামীর বসতঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই, স্বামীর ভিটায় আমি ফিরে যেতে চাই।”

হালিমার ছেলে মমিন মৃধা বলেন, “বড় ভাই মাহাবুব মৃধা আমার মায়ের নামের জমি লিখে নিয়ে মাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ করলে আমি, তিন বোন, ভগ্নিপতি, ভাগ্নেসহ ১০ জনের নামে বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।”

মামলায় মাহাবুব মৃধার অভিযোগ, নলচিড়া বাজারের তার দোকানে গত ৯ জুন হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে ৫০ মণ ভুট্টা, ৪০ মণ ধান, ১০ মণ মুগ ডাল লুট করেছেন আসামিরা। এ ছাড়া পুকুর থেকে জোরপূর্বক ৭/৮ মণ মাছ লুট এবং বাগানের বাঁশ কেটে নিয়ে গেছেন।

নলচিড়া বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি বাদশা ফকির ও সাধারণ সম্পাদক রতন মিয়া বলেন, মৃত শাহজাহান মৃধার স্ত্রী হালিমা বেগমকে বড় ছেলে মাহাবুব মৃধা স্বামীর ভিটা থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি বাজারে থাকা স্বামীর দোকান ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ নিয়ে বাজার কমিটি একাধিকবার সালিস বৈঠক করে। কিন্তু মাহাবুব মৃধা সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাকে ঘরে উঠতে দেননি।

“এমনকি মাহাবুব মৃধা ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে বাজারের দোকানে হামলা ও লুটপাটের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।”

এ ব্যাপারে নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, মাকে বের করার ঘটনায় একাধিক সালিশ বৈঠক হলেও মাহাবুব তা মানতে নারাজ। এ জন্য সালিশ বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে মাহাবুব মৃধা বলেন, “মা জমি আমাকে স্বেচ্ছায় সাফ কবলা দলিল করে দিয়েছেন। আর তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার কথা সঠিক নয়। মা বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে বাজারে আমাদের একটি ঘরে স্বেচ্ছায় বসবাস করছেন।”