ইতোমধ্যেই জেলায় পানিবন্দি হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ, হু-হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র আর ধরলা নদীর পানি। তার ওপর নদীতে ভেঙে যাচ্ছে বাড়িঘর।
জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামের রাহিলা বেগম বলেন, “দুপুর পার হয়া বিকেল হইল। এলাও প্যাটত কিছু যায়নি। সকালে ভোকতে নানি-নাতনি কান্দন করায়। এক মুট আটা ছিল। তাই দিয়া চিতই ভাজি দিছি। সেই চিতই খায়া বিকেল পর্যন্ত আছে। বেটি-জামাই-নানি-নাতনি মোর এটাই থাকে।
ওই গ্রামের ৩০টি পরিবারের সবার অবস্থা এমনই।
নদ-নদীর পানি বাড়ছে ততই প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ততই বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ।
সব মিলিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বানভাসিরা।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ২৮৪টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২৭হাজার ১৯৭টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা এক লাখ আট হাজার ৭৮৮ জন। জেলার ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদ্রাসা ও একটি কলেজে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পর্যন্ত ১১৬৩ চাষির ১২৫৭টি খামার ভেসে গেছে। এতে তাদের ১৭৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এর ওপর আছে নদীভাঙনের আতঙ্ক।
পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দল্লাহ আল মামুন।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার ধরলা নদীপরিবেষ্টিত হলোখানা, ভোগডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম পৌরসভা, পাঁচগাছী ও মোগলবাসা ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী কমপক্ষে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় খাবার সংকট মোকাবিলায় জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩৮ মেট্রিকটন চাল, সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে কুড়িগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
তিনি জানান, চিকিৎসা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৮৫টি দল গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নয় উপজেলায় নয়টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন।