‘বাড়ি চলো’ সমাবেশের প্রচারপত্র বিলি করছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ‘বাড়ি চলো’ শ্লোগান নিয়ে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিশংকর বড়ুয়া রুমি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2022, 06:20 PM
Updated : 18 June 2022, 06:36 PM

পুলিশ খবর পেলেও এখনও সব বিষয় নিশ্চিত হতে পারেনি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ৮-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন রোহিঙ্গাদের সমাবেশ-প্রস্তুতির কথা জেনেছেন।

কামরান বলেন, “রোহিঙ্গাদের সমাবেশ-প্রস্তুতির কথা জেনেছি। তবে কোথায়, কখন বা কোন ক্যাম্পে এ সমাবেশ হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে পরে জানানো হবে।”

সমাবেশ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দুটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র। ছবি: আব্দুর রহমান

একটি প্রচারপত্রের শেষে প্রচারকারী হিসেবে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের’ সদস্য ডা. তৈয়ব ও মো. রেজার নাম রয়েছে।

আগামী ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ১৯ জুন সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কয়েকটি ক্যাম্পে একযোগে এ সমাবেশ আয়োজনের কথা রয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন। তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

প্রচারপত্রে যেসব দাবি রয়েছে- ১. অন্যান্য জাতির মতই আমাদের মূল অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। ২. রোহিঙ্গাদের 'রোহিঙ্গা' হিসেবেই সম্বোধন বা পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে। ৩. প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে হতে হবে। ৪. মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থানের সময়সীমা কমাতে হবে। ৫. প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে। ৬. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সদস্যকে স্ব-স্ব গ্রামে প্রত্যাবাসন করতে হবে। ৭. প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে প্রতিটি সমঝোতায় ইউএসএ, এলআইএন, ওআইসি, ইউকে, ইইউ, আসিয়ান, বাংলাদেশ, এনজিও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জড়িত থাকতে হবে। ৮. রোহিঙ্গারা ঘরে ফেরার পূর্বে তাদের সুরক্ষা দিতে আর২পি অবশ্যই আরাকানে থাকতে হবে। ৯. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে পুনর্বাসিত করতে হবে। ১০. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করা যাবে না। ১১. কোনোভাবে বা অজুহাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না। ১২. আন্তর্জাতিক মিডিয়া আরাকানের প্রত্যেক এলাকাতে পরিদর্শনের অনুমোদন থাকতে হবে। ১৩. ১৯৮২ সালের নাগরিক আইন বাতিল করতে হবে। ১৪. প্রত্যাবাসনের পূর্বে আরাকানে আইডিপি ক্যাম্প যতটুকু সম্ভব বাতিল করতে হবে। ১৫. রোহিঙ্গাদের জন্য দায়িত্ব থাকতে হবে। ১৬. রোহিঙ্গাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। ১৭. জমি থেকে বায়েজাপ্তকৃত চিংড়ি পুকুর, চারণভূমি রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে হবে।

প্রচারপত্রের শেষে ‘আমরা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেওয়ান হায়াৎ এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ অগাস্ট একই সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইতোমধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরসাকে দায়ী করা হয়েছে।

মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করতেন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় তাকে হত্যা করা হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।