মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে সুনামগঞ্জ

বন্যায় পানিবন্দি সুনামগঞ্জের মানুষ এখন মোবাইল নেটওয়ার্কেরও বাইরে; এর আগেই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এ জেলার প্রায় পুরো এলাকা।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2022, 06:36 PM
Updated : 17 June 2022, 06:36 PM

শুক্রবার উজানের পানির ঢল অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এতে কার্যত জেলার বানভাসী মানুষের পায়ের তলায় এখন মাটি নেই বললেই চলে। আগের দিনই শহরের একতলা সব বাড়িতে পানি ঢোকে, প্রতিটি গলিতে নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না।

শহরের মত গ্রাম, লোকালয়, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা সব এখন পানির নিচে। শুক্রবার এ অবস্থায় ছাতক ও সুনামগঞ্জের দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর টাওয়ারগুলো নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনেও নেটওয়ার্ক মিলছে না। এতে স্বজনরা বানভাসী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এর আগেই সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট এখন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। পুরো সুনামগঞ্জ জেলাসহ মোট ১৬টি উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। যার কারণে মোবাইল ফোন যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ শহরের হাজিপাড়ার বাসিন্দা শাহীনূর আলম বলেন, পৌর এলাকাসহ সদরের প্রতিটি গ্রামের মানুষ দাঁড়ানোর জন্য শুকনো জায়গা পাচ্ছে না। ঘরে বাইরে পানিতে সয়লাব। বসতবাড়ির ভিতরে কোমরপানি। রাস্তাঘাট ডুবে আছে।

মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ‘হাহাকারের’ মধ্যে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চারদিক পানিতে সয়লাব থাকায় দুর্গত মানুষদের উদ্ধারও করা যাচ্ছে না।“

একই পাড়ার বাসিন্দা দিন মজুর আহ্লাদ মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ নাই। মোবাইল বন্ধ। আত্নীয় স্বজন কেউ কারও খোঁজ নিতে পারছি না।

ঘরে খাবারও না থাকায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় থাকার কথা জানালেন তিনি।

নতুনপাড়ার বাসিন্দা ঢাকায় অবস্থানকারী কৃষ্ণা দাস বলেন, “আমার বাসার সবাই খুব অসহায় হয়ে আছে। বেরুতে পারছে না কেউ। ঘরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নেই। বৃহস্পতি থেকে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পারিনি। কিছুক্ষণ আগে অল্পক্ষণ কথা বলার পর আবার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। দুশ্চিন্তায় আছি।“

তেঘরিয়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জামাল আহমদ জানান, শহরে মানুষ থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই বিপদে আছেন। শুকনো খাবার, ওষুধ, নিত্যপণ্য কিছুই পাচ্ছে না মানুষ। চারদিক পানিতে সয়লাব থাকায় বানভাসী মানুষদের কাছে পৌঁছাও যাচ্ছে না।

বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংকের সুনামগঞ্জের কাস্টমার কেয়ারের পরিচালক জসিম আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় বাংলালিংকসহ সব মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ার কাজ করছে না। এতে মানুষ একে অন্যের খোঁজ নিতে পারছে না।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। আমরাও মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি।

“আমাদের এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে সরকার দ্রুত ৩০ লাখ টাকা ও আট লাখ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও মানুষকে সাধ্যমত সহায়তা করছি।“

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম বলেন, হঠাৎ এই প্রলয়ঙ্করী বন্যা মানুষকে নানা সংকটে ফেলে দিয়েছে। পানিতে সয়লাব পুরো জেলা। শুকনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের আশ্রয়ের জন্য সব স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে।

আগের দিন বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র নাদের বখত জানিয়েছিলেন, শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছেন জেলা শহরের বাসিন্দারা।