শুক্রবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গ্রিডে সমস্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলাসহ বিভাগের ১৬ উপজেলা পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেট বিভাগে পানি বাড়ছে। এতে বিদ্যুতের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে রানওয়ের কাছাকাছি পানি এসে পড়েছে।
বিদ্যুতের কারণে নেটওয়ার্কের সমস্যায় ঠিকমত কাজ করছে না মোবাইল ফোনও। উদ্ধার যানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার বিকালে বিভাগীয় কমিশনার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময়ও নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কবলে পড়তে হয়।
এর আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে জানানো হয়েছে, বন্যার পানি ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্রে প্রবেশ করায় নিরাপত্তার স্বার্থে ওই উপকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারণে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ।
“অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে সিলেটের কুমারগাঁও উপকেন্দ্র ঝুঁকির মধ্যে আছে। যে কোনো সময় এই উপকেন্দ্রও বন্ধ করা প্রয়োজন হতে পারে।”
বন্যাদুর্গত সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সেনা সদস্যদের মাঠে নামানোর কথাও জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
তিনি বলেন, “প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষকে উদ্ধার করা এবং নিরাপদে নিয়ে আনা। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।”
বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয়-আসামের উজানের ঢলে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে।
পানিতে হাবুডুব খাচ্ছে সিলেট নগরীও। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে।
জানতে চাইলে বিভগীয় কমিশনার বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ খুবই ভয়াবহভাবে বন্যা আক্রান্ত। আমরা চেষ্টা করছি পানিবন্দিদের উদ্ধার করে এনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখতে।
অনেক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলোতে লোকজন এসেছেন। কিন্তু অনেক লোক এখনও পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন। তাদের নিরাপদে নিয়ে আসাটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। নৌযান সংকটের কারণে তাদের ঠিকমত উদ্ধার করে আনা যাচ্ছে না।
“সকালেই সেনাবাহিনীকে কল করা হয়েছে। তারা সাতটি উপজেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। তারা মূলত উদ্ধার করবেন ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করবেন।“
পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা আছে। শুকনো খাবারের পাশাপাশি যেখানে রান্না করে খাবার দেওয়ার সুযোগ থাকবে সেখানে সেটাও দেওয়া হবে।
আর যারা ত্রাণ নিয়ে এই এলাকায় আসতে চান তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। জেলা প্রশাসন দেখিয়ে দেবে কোথায় ত্রাণ দিতে হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৭০ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ১২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
সে কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পূর্বাভাসে।